পৃথিবীর ইতিহাস – প্রথম খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী)


শ্ৰীশ্ৰীহরিঃ—শরণং।
উৎসর্গ।
অশেষ গুণসম্পন্ন মাননীয়
মহারাজ শ্ৰীল শ্রীযুক্ত মণীন্দ্রচন্দ্র নদী বাহাদুর সমীপে।

বিনীত
শ্ৰীদুৰ্গাদাস লাহিড়ী।
হাওড়া, ৩০ এ চৈত্র, ১৩১৬ সাল।

বিষয়ের অনস্তত্ব।

প্রাচীন ভারতবর্ষের সমাজ, ধৰ্ম, আচার, ব্যবহার, রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ে আমাদের জ্ঞান-বিশ্বাস-মতে আমরা যা বুঝেছি, সেটাই এই গ্রন্থ-পত্রে সন্নিবিষ্ট করেছি। সকলের দৃষ্টিতে যে সৰ্বদা অভ্রান্ত বলে প্রতিপন্ন হবে, সে স্পর্দ্ধা; কখনই করি না; প্রাচীন ভারতের ইতিহাস আলোচনায় সে স্পৰ্দ্ধা করবার কারও শক্তি আছে, আমাদের মনে হয় না। ভারতের-অনন্তকালের অনন্ত ইতিহাস; আর সে ইতিহাসে অনন্ত তত্ত্ব নিহিত আছে। যিনি যে দৃষ্টিতে যে অংশের প্রতি লক্ষ্য করবেন, তিনি তদনুরূপ দৃশ্যই দেখতে পাবেন। অধিকারী অনুসারে, জ্ঞান-বুদ্ধির তারতম্য-ক্রমে, তাতে এক এক জনের প্রাণে এক এক নূতন ভাবের স্ফুর্তি হতে পারে; এমন কি, সময়ে সময়ে তাতে অনুসন্ধিৎসু জনের মনে নানা বিপরীত ভাবের সঞ্চার হওয়াও অসম্ভব নয়। সে দৃষ্টান্ত – এই গ্রন্থের অনেক স্থলেই দেখতে পাবেন। সে দৃষ্টান্ত,- ভারতের পুরাবৃত্তে কেউ জাতিভেদ-প্রথা-ব্রাহ্মণাদির অস্তিত্ব—দেখতে পান; কেউ বা তার বিপরীত দৃশ্য দর্শন করেন। সে দৃষ্টান্ত,-কেউ অদ্বিতীয় পরমেশ্বরের অস্তিত্ব উপলব্ধি করেন; কেউ বা নানা দেবদেবীর মাহাত্মা-তত্ত্ব বুঝতে পারেন। এই গ্রন্থে প্রধানতঃ সেই তথ্যই আমরা প্রকাশ করবার প্রয়াস করেছি।

উপসংহার

উপসংহারে বক্তব্য, এই গ্রন্থের প্রকাশ-সম্বন্ধে যাঁরা আমাদের সহায়তা-কল্পে অগ্রসর হয়েছেন, তাঁদের নিকট আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তাঁরা দীর্ঘ-জীবী হউন; তাঁদের যশঃ-সৌরভে দিগদীগন্ত আমোদিত হউক। তাঁদের ভরসা ও উৎসাহ না পেলে, আমাদের ন্যায় নিঃস্ব ব্যক্তির এই গুরুতর কাজে হস্তক্ষেপ করবার সাধ্য কি ছিল ? সুতরাং গ্রন্থ-সূচনায় তাঁদের শুভ-কামনা করছি। “পৃথিবীর ইতিহাসে” তাঁদের পরিচয় চিরস্মরণীয় করবার জন্য চেষ্টার ত্রুটি করব না। “পুথিবীর ইতিহাস” প্রণয়নে যে যে গ্রন্থের সাহায্য গৃহীত হয়েছে, প্রসঙ্গতঃ প্রায় সকল গ্রন্থের নামই উল্লেখ করা হয়েছে। অধিকন্তু, এক এক দেশের ইতিহাস সম্পন্ন হলে, সেই সেই দেশ-সংক্রান্ত গ্রন্থাবলীর সাহায্য প্রাপ্তির বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে আলোচিত হবে। পরিশেষে বক্তব্য, এই গ্রন্থের সহিত শ্রীমান প্রমথনাথ সান্যালের অচ্ছেদ্য সম্বন্ধ। এই গ্রন্থ-প্রণয়নে তিনি আমার দক্ষিণ-হস্ত-স্থানীয়। গ্রন্থের অনেক অংশ তার লিখিত বললেও অত্যুক্তি হয় না। এর প্রকাশে তাঁর যত্ন ও অধ্যবসায় অতুলনীয় বলতে কি, তাঁর উৎসাহ না পেলে, এ গ্রন্থ লিখিত ও প্রকাশিত হবারই সম্ভাবনা ছিল না। সুতরাং এই গ্রন্থ-প্রণয়নে শ্ৰীমান্‌ প্রমথনাথের নাম চির-সম্বন্ধযুক্ত রইল।
ইতি।
নিবেদক,
শ্ৰীদুৰ্গাদাস লাহিড়ী
হাওড়া। ৩০ এ ফাল্গুন, ১৩১৬

সূচনা
সঙ্কল্প।

এ পর্যন্ত ভারতের কোনও ভাষায় “পৃথিবীর ইতিহাস” প্রকাশিত হয় নাই। আমাদের সঙ্কল্প-আমরা বাংলা ভাষায় সেই “পৃথিবীর ইতিহাস” প্রকাশ করব। বহু দিন হতেই এ কল্পনা আমাদের মনো মধ্যে উদয় হয়েছিল; বহু দিন হতেই এতৎ-সম্পর্কে আমরা উদ্যোগ-আয়োজনে ব্ৰতী হয়েছিলাম। ভগবৎ-কৃপায় এক্ষণে আমাদের সেই অভীষ্ট-সিদ্ধির সুযোগ উপস্থিত। এই “পৃথিবীর ইতিহাস”—এক বিরাট্‌ কল্পনা; অন্যূন ত্রিংশ খণ্ডে সম্পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা। সে হিসাবে, এই গ্রন্থ-খণ্ড-ভূমিকা মাত্র। পৃথিবীর সকল দেশের সর্ববিধ জ্ঞাতব্যতত্ত্ব বাংলা ভাষার এই “পৃথিবীর ইতিহাসে” সন্নিবিষ্ট করব,-এই আমাদের অভিলাষ। এ পর্যন্ত ইংরাজী প্রভৃতি ভাষায় যে সকল ‘পৃথিবীর ইতিহাস’ প্রকাশিত হয়েছে; আমাদের আকাঙ্ক্ষা-আমরা এই ইতিহাসে তদপেক্ষা অধিক বিষয়ের আলোচনা করতে প্রয়াস পাব।

প্রথম ভারতবর্ষ।

ভারতবর্ষকেই আমরা সৰ্ব বিষয়ের আদিভূত বলে মনে করি। সুতরাং “পৃথিবীর ইতিহাসে” ভারতবর্ষের প্রসঙ্গই প্রথমে উথাপন করলাম। পূর্বেই বলেছি- এই গ্রন্থ ভূমিকা মাত্র। প্রকারান্তরে ভারতবর্ষের ইতিহাসেরও ভূমিকা মাত্র। ভারতবর্ষের ইতিহাস বুঝতে হলে, প্রথমে শাস্ত্ৰ-তত্ত্ব বুঝার আবশ্যক হয়। শাস্ত্র-গ্রন্থের সাথে ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাস ওতঃপ্রোত বিজড়িত। সুতরাং আমরা এই গ্রন্থে প্রথমে সংক্ষেপে বেদ-পুরাণাদি শাস্ত্র-গ্রন্থের পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তারপর, তা থেকে ক্রমে ক্রমে পুরাতত্ত্ব উদ্ধারের প্রয়াস পেয়েছি। অন্যান্য দেশের ইতিহাসের তুলনায় ভারতবর্ষের ইতিহাসের একটু বিশেষত্ব আছে। সে বিশেষত্ব-অন্যান্য দেশের ইতিহাসে প্রকাশ, অবনত অবস্থা হতে দিন দিন উন্নতির পথে অগ্রসর হচ্ছে; কিন্তু ভারতবর্ষের পুরাতত্ত্ব আলোচনায় আমরা বুঝতে পারি, ভারতবর্ষ উন্নত ছিল, যুগ বিবর্তনে এখন অবনতির পথে প্রধাবিত হয়েছে। সে হিসাবে, অন্যান্য দেশে প্রথমে জাতির অভ্যুদয়, পরে সভ্যতার সাথে তাদের ইতিহাসের সৃষ্টি; কিন্তু ভারতবর্ষে প্রথমেই সভ্যতা, প্রথমেই সভ্যতার আদিভূত শাস্ত্র-গ্রন্থের অভ্যুদয়। সেজন্যও আমরা প্রথমে শাস্ত্রাদির পরিচয় প্রদান করে পরিশেষে অন্যান্য বিষয়ের আলোচনায় প্রবৃত্ত হয়েছি।

সংক্ষিপ্ত সূচীপত্র।

পরিচ্ছেদ

১ম। ইতিহাসে প্রতিষ্ঠা
সভ্যতায়, প্রাচীনত্বে, প্রাকৃতিক দৃশ্যে, জলবায়ু প্রভৃতিতে শ্রেষ্ঠত্ব ৩; পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণের মত ৪; প্রাচীনত্বে ভারতের শীর্ষস্থান,—মিশর, গ্রীস, প্রভৃতির সহিত তুলনা ৭ ; প্রাচীনত্ব-বিষয়ে পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণ ৯।
২য়। আর্য-জাতি
ভারতেই আৰ্য-জাতির প্রতিষ্ঠা ১২; আর্য-জাতির আদি-বাস সম্বন্ধে বিভিন্ন মত ও তাহার কারণ-পরম্পরা ১৩; সেই মতামতের অযৌক্তিকতা ১৪; আর্য-হিন্দুগণের পৃথিবীর সর্বত্র গতিবিধি ১৬; অভিজ্ঞতাই আদিবাসের পরিচায়ক নহে ১৮; আর্যবৰ্ত্ত ২২; আর্য ও অনার্য ২৪।
৩য়। বেদ-চতুষ্ট
বেদ-পরিচয় ২৬; বেদ-রচয়িতা ২৭; বেদ কত কালের ২৯; ঋগ্বেদ ৩০; যজুঃ, সাম ও অথৰ্ব ৩২; বেদোক্ত দেবতা ও ঋষি ৩৩; বেদোক্ত ধৰ্ম্ম ৩৪; বেদোক্ত আচার-ব্যবহার ৩৭; বেদে জাতিভেদ ৪০; বেদই সৰ্বশাস্ত্রের মূল ৪৬; বৈদিক ধৰ্ম’ই সকল ধর্মের আদিভূত ৪৮।
৪র্থ। বৈদিক প্রসঙ্গ
বেদে পুরাবৃত্ত—ইতিহাস-তত্ত্ব ৫১; বৈদিক কালের রাজন্যবর্গ ৫৩; বৈদিক-কালের যুদ্ধ-বিগ্রহ ৫৬; বেদ-বিষয়ক বিবিধ প্রসঙ্গ ৫৭; বেদ-ব্যাখ্যায় অধিকারী-অনধিকারী ৬০৷
৫ম। ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষৎ
ব্ৰাহ্মণ ও আরণ্যক ৬২; সৃষ্টি-তত্ত্ব, জল-প্লাবন, মনু ও নোয়া ৬২; হরিশ্চন্দ্র, শুনঃশেফ ও নরবলি ৬৩; উপনিষৎ, সংখ্যা-পর্য্যায়, উপনিষদের প্রতিপাদ্য ৬৫; উপনিষদে ব্রহ্ম-তত্ত্ব ৭০; উপনিষৎ সম্বন্ধে পাশ্চাত্য যত ৭১; উপনিষদোক্ত রাজন্যবর্গের কৃতিত্ব-পরিচয় ৭৩৷
৬ষ্ঠ। ষড়বেদাঙ্গ
সূত্র-গ্রন্থের পরিচয় ৭৪; সূত্র-সম্বন্ধে পাশ্চাত্য মত ৭৬; ষড়বেদাঙ্গ ৭৭; পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণের মত ৮১৷
৭ম। ষড়দর্শন
ষড়দর্শনের সাঘ্ন-সঙ্কল্প ৮৩; পাশ্চাত্য ও হিন্দু-দর্শনে পার্থক্য ৮৫।

৮ম। সাঙ্খ্য-দর্শন
কপিল ও সাংখ্য-দর্শন ৮৭ ; সাংখ্যের প্রতিপাদ্য ৮৯; সাংখ্য-মতে সৃষ্টিতত্ত্ব ৯১; সাংখ্য-মতে ঈশ্বর ৯৩; কপিলের নিরীশ্বর-বাদ ৯৪৷
৯ম। বৈশেষিক-দৰ্শন
কণাদ ও বৈশেষিক দর্শন ৯৬; বৈশেষিকের প্রতিপাদ্য ৯৭; বৈশেষিক দর্শনের বিবিধ-তত্ত্ব ৯৯৷

১০ম। ন্যায়-দর্শন
গৌতম ও ন্যায়-দর্শন ১০১; ভাষ্যকারগণ ১০২; ন্যায়-দর্শনের প্রতিপাদ্য ১০৩; ন্যায়-দর্শনের বিবিধ তত্ত্ব ১০৬৷
১১শ। পাতঞ্জল-দশন বা যোগশাস্ত্র
পতঞ্জলি ও যোগ-শাস্ত্র ১১০; পাতঞ্জল-দর্শনের প্রতিপাদ্য ১১০; যোগমাহাত্ম্য ১১২; হরিদাস সাধু প্রভৃতির প্রসঙ্গ ১১২—১১৩ ৷
১২শ। মীমাংসা-দর্শন
জৈমিনি ও মীমাংসা-দর্শন ১১৭; মীমাংসা-দর্শনের প্রতিপাদ্য ১১৫।
১৩শ। বেদান্ত-দর্শন
বাদরায়ণ ও বেদান্ত-দর্শন ১১৭; দ্বৈতাদ্বৈত মত ১১৯; অধিকার-তত্ত্ব ১২০; অদ্বৈত মতের পরিচয় ১২২; অদ্বৈত-বাদের বিবিধ কথা ১২৪; দ্বৈত মতের পরিচয় ১২৫; বেদান্ত-দর্শনের বিবিধ তত্ত্ব ১২৮; বেদান্ত-সূত্রে ব্যাসের অভিপ্রায় ১৪০৷
১৪শ। চাৰ্ব্বাক ও বৌদ্ধ-দর্শন
বৃহস্পতি ও চাৰ্ব্বাক-দর্শন ১৩২; চাৰ্ব্বাক-দর্শনের সার-সঙ্কল্প ১৩৩; বৌদ্ধ-দর্শন ১৩৪; বৌদ্ধ-দর্শনের প্রতিপাদ্য ১৩৬।
১৫শ। ষড়দর্শন সমন্বয়
হিন্দু-দৰ্শন-সমূহের সাদৃশ্য ১৩৮; প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শন ১৪১।
১৬শ। স্মৃতি
বিংশতি স্মৃতি-সংহিতা ১৪৪; মনুসংহিতা ১৪৬; অত্রি-সংহিতা ১৫০; বিষ্ণু-সংহিতা ১৫১; হারীত ও যাজ্ঞবল্ক্য সংহিতা ১৫২; উশনঃ-সংহিতা ১৫৩; অঙ্গির, যম ও অপেস্তম্ব সংহিতা ১৫৪; সংবৰ্ত্ত, কাত্যায়ন ও বৃহস্পতি সংহিতা ১৫৫; পরাশর-সংহিতা ১৫৬; ব্যাস-সংহিতা ১৫৭; শঙ্খ, লিখিত ও দক্ষ সংহিতা ১৫৮; গৌতম, শাতাতপ ও বশিষ্ঠ সংহিতা ১৫৯; সংহিতাসমূহে সামাজিক চিত্র ১৬০; স্মৃতি-সংহিতার কাল-নির্ণর ১৬৩; স্মাৰ্ত্ত রঘুনন্দন ১৬৫; একাদশী-তত্ত্ব ১৬৬; শূলপাণি ও স্মৃতিশাস্ত্র ১৬৮৷
১৭শ। পুরাণ
পুরাণ-প্রসঙ্গ ১৭০; মহা-পুরাণ ও উপপুরাণ ১৭১ ; ব্রহ্মপুরাণ ১৭৩ ; পদ্মপুরাণ ১৭৪ ; বিষ্ণুপুরাণ ১৭৫; শিবপুরাণ ১৭৬; লিঙ্গপুরাণও গরুড়-পুরাণ ১৭৭; নারদ-পুরাণ ও শ্ৰীমদ্ভাগবত ১৭৮; অগ্নিপুরাণ ১৮০; স্কন্দ-পুরাণ ১৮১; ভবিষ্য-পুরাণ ও ব্রহ্মবৈবৰ্ত্ত-পুরাণ ১৮২; মার্কণ্ডেয়-পুরাণ ১৮৩; বামন-পুরাণ ও বরাহ-পুরাণ ১৮৫; মৎস্য-পুরাণ ও কুৰ্ম্ম-পুরাণ ১৮৬; ব্রহ্মাণ্ড-পুরাণ ১৮৭; উপপুরাণ-প্রসঙ্গ ১৮৮; পুরাণোপপুরাণের সার মৰ্ম্ম ও সমন্বয়-বিধান ১৯০; পুরাণে ইতিহাস ১৯৩; বেদব্যাস ও পুরাণ-রচনা ১৯৪; পুরাণ রচনার সময়ালোচনা ১৯৫; পুরাণে বিবিধ চিত্র ২০১; পাশ্চাত্য মত ২০৪।
১৮শ। তন্ত্র
তন্ত্র-শাস্ত্র ২০৭; পঞ্চ-মকার তত্ত্ব ২০৯; তান্ত্রিক আচার ২১১; তন্ত্র সম্বন্ধে বিবিধ বক্তব্য ২১২; তান্ত্রিক পূজা-পদ্ধতি ২১৪।
১৯শ। রামায়ণ
রামায়ণের সার মৰ্ম্ম ২১৫; অযোধ্যার বিবিধ চিত্র ২১৯; যোগবাশিষ্ঠ রামায়ণ ২২৩; বিবিধ রামায়ণ গ্রন্থ ২২৬; পদ্মপুরাণে রামচরিত ২২৬; পুরাণান্তরে রামচরিত ২২৮; বাল্মীকি ও কৃত্তিবাস ২৩০; উভয়ের অসামঞ্জস্য ২৩১; রামায়ণে শিক্ষা ২৩৪; অযোধ্যা ও লঙ্কা ২৩৫; রামায়ণের প্রাচীনত্ব ২৩৬; রামায়ণ বা মহাভারত ২৩৯; পাশ্চাত্যের তুলনা ২৪০।
২০শ। মহাভারত
মহাভারত-পরিচয় ২৪১; কুরু-পাণ্ডবের বিবরণ ২৪২; কুরুক্ষেত্রের মহাসমর ২৪৫; ধৃতরাষ্ট্রের ভবিষ্য-দর্শন ২৪৭; ভিন্ন ভিন্ন গ্রন্থে মহাভারত-প্রসঙ্গ ২৫৬; প্রক্ষিপ্ত প্রসঙ্গ ২৫৮; মহাভারতে শ্ৰীকৃষ্ণ-চরিত্র ২৬১; শ্ৰীমদ্ভগবদগীত ২৬৬; মহাভারতের ঐতিহাসিকতা ২৬৯; সমসাময়িক চিত্র ২৭৩; মহাভারতের প্রাচীনত্ব ২৭৬; মহাভারতের কাল-নির্ণয় ২৭৯; কাল-নির্ণয়ে শ্ৰীকৃষ্ণ-প্রসঙ্গ ২৮২; আপত্তির কথা ২৮৪; হরিবংশ ২৮৯; উপসংহার ২৯০।
২১শ। সূৰ্য্যবংশ
সূৰ্য্য-বংশের বংশলতা;–রামায়ণে ২৯২; ব্ৰহ্মপুরাণে ২৯৩; বিষ্ণুপুরাণে ২৯৪; হরিবংশে ২৯৭; অগ্নিপুরাণে ২৯৮; শিবপুরাণে ২৯৯; শ্ৰীমদ্ভাগবতে ৩০০; মহাভারতে ৩০২; দেবীভাগবতে ও বৃহদ্ধৰ্ম্মপুরাণে ৩৩৩।
২২শ। চদ্রুবংশ
চন্দ্রবংশের বংশলতা —মহাভারতে ৩০৫; হরিবংশে ৩০৭; বিষ্ণুপুরাণে ৩১৩; শ্ৰীমদ্ভাগবতে ৩১৮; অগ্নিপুরাণে ৩২৩; ব্ৰহ্মপুরাণে ৩২৬।

২৩শ। মনু ও মনুপুত্রগণ
স্বায়ম্ভুব মনু ৩৩০; প্রিয়ব্রত ও তৎপুত্ৰগণ ৩৩১; প্রিয়ব্রত-বংশ ৩৩৩; ঋষভ ও ভরত ৩৩৪; উত্তানপাদের বংশ ৩৩৫; স্বায়ম্ভুব মনুর বংশলতা,— শ্ৰীমদ্ভাগবতে ৩৩৭, বিষ্ণুপুরাণে ৩৩৮; অপরাপর মমু ও মনুপুত্ৰগণ ৩৩৯।
২৪শ। সূৰ্য্যবংশীয় নৃপতিগণ
সূৰ্য্যবংশের আদিরাজগণ ৩৪১; হরিশ্চন্দ্রের উপাখ্যান ৩৪২; অযোধ্যার নৃপতিগণ ৩৪৪; মিথিলার রাজবংশ ৩৪৭; বৈবস্বত মনুর বংশধরগণ ৩৪৮।
২৫শ। চন্দ্রবংশীয় নৃপতিগণ
আয়ু ও অমাবসুর প্রসঙ্গ ৩৫০; নহুষ-পুত্র যতি ও যযাতি ৩৫২; যদুবংশ ৩৫৩; পুরুবংশ ৩৫৭; দ্রুহ্য, তুৰ্ব্বসু ও অণুর বংশ ৩৬৩।
২৬শ। দৈত্য ও দানবগণ
কশ্যপ ও তাঁর বংশ ৩৬৫; দৈত্য ও দানবগণ ৩৬৬; হিরণ্যকশিপু ও প্রহ্লাদ প্রভৃতির বংশলতা ৩৬৬; বিবিধ দৈত্যের বিবরণ ৩৬৭; বিভিন্ন মম্বন্তরে বিভিন্ন দৈত্যগণ ৩৬৯; বৃত্ৰাসুর ও অন্যান্য দৈত্যগণ ৩৭০; রূপকে বৃত্ৰাসুর প্রভৃতি ৩৭১; দৈত্যাদির তাৎপৰ্য্য ৩৭৩৷
২৭শ। বংশ-পৰ্য্যায় আলোচনা
বংশ-পৰ্য্যায় আলোচনায় অসামঞ্জস্য ৩৭৪; মিশর, চীন প্রভৃতির তুলনা-তত্ত্ব ৩৭৫; সূৰ্য্যবংশের বংশ-লতায় অসামঞ্জস্য ৩৭৯; অন্যান্য যমুপুত্রের বংশে অসামঞ্জস্য ৩৮২; মৈথিল-বংশ ৩৮৩; ইলার অলৌকিকত্ব ৩৮৪; চন্দ্রবংশে ঘোর অনৈক্য ৩৮৫; অন্যান্য অসামঞ্জস্য-তত্ত্ব, ৩৮৭; বিশ্বামিত্ৰে, প্রসঙ্গ ৩৮৯; বিবিধ বক্তব্য ৩৯১।
২৮শ। অন্যান্য নৃপতিগণ
নল-দময়ন্তী ৩৯৩; সাবিত্রী-সত্যবান ৩৯৬; অযোধ্যার আদি ও শেষ ৩৯৮; ক্ষুপ-আদিরাজা ৩৯৮; অন্যান্য রাজগণ ৩৯৯; মরুত্তের যজ্ঞ ও রাবণের দিগ্বিজয় ৪০০; নৃগ ও ব্রহ্মদত্ত ৪০১; শ্ৰীবৎস-চিন্তা ৪০২; ইন্দ্রদ্যুম্ন ও জগন্নাথ-ক্ষেত্র ৪০৪; কাশী-নরেশগণ ৪০৬; আলর্ক-প্রসঙ্গ, ৪০৮; পদ্মপুরাণোক্ত রাজন্যবর্গ ৪১১; মহাভারতোক্ত অপরাপর রাজন্যবর্গ ৪১৪; যুধিষ্ঠিরের অশ্বমেধ যজ্ঞে আগত নৃপতিগণ ৪১৭; প্রসঙ্গোক্ত নৃপতিগণ ৪২০; ঋগ্বেদোক্ত নৃপতিগণ ৪২২; সুদাস, অনু, দ্রুহ্যু, আয়ু প্রভৃতি ৪২৪; ঋগ্বেদোক্ত রাজর্ষিগণ ৪২৮; ঋগ্বেদোক্ত অন্যান্য রাজগণ ৪৩১; বিবিধ রাজন্য-পরিচয় ৪৩৩।
২৯শ। রাজা ও প্রজা
বেদে রাজভক্তি ৪৩৬; প্রজার কৰ্ত্তব্য ৪৩৭; রাজার কৰ্ত্তব্য ৪৩৯।
৩০শ। দেবতা ও ব্রাহ্মণ
সম্বন্ধ-তত্ত্ব ৪৪১; দেবতা ৪৪১; অবতার-তত্ত্ব ৪৪৪; ব্রাহ্মণ-প্রসঙ্গ ৪৪৮; ঋষি-প্রসঙ্গ ৪৫০।
৩১শ। পুর্বানুসৃতি
আভাস-মাত্র, অণু ও অনন্তের তুলনা ৪৫২; ভারতে পুর্বানুসৃতি । ভারতের সমাজ ৪৫৩; ভাল মন্দ দুই দিক ৪৫৩; বৈদিক যুগ বৈদিক মন্ত্র ৪৫৫; গায়ত্রী ও বিশ্বামিত্র ৪৫৫; জাতিভেদ-তত্ত্ব ৪৫৬; সামাজিক আচার ব্যবহার ৪৫৮; জ্ঞান-বিজ্ঞানোন্নতি ৪৬০; বিবিধ বিষয়ে অভিজ্ঞতা ৪৬২; ভিন্ন ভিন্ন দেশে গতিবিধি ৪৬৪; বিবিধ ৪৬৮; উপসংহার ৪৭০।

নিবেদন।

ভারতবর্ষের এই ইতিবৃত্ত প্রণয়ন সম্বন্ধে প্রধানতঃ আমি তিনটা বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়াছি,-
প্রথম। -ভারতবর্ষ-সম্বন্ধে প্রচলিত সাধারণ মত-পরম্পরার পরিচয় দেবার প্রয়াস পেয়েছি; অর্থাৎ, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য মণীষিগণ কোন বিষয় কি ভাবে আলোচনা করেছেন,—তার আভাস এই গ্রন্থে পাঠকগণ যাতে পেতে পারেন, আমি তৎপক্ষে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।
দ্বিতীয়। -একই বিষয়ে নানা জনে নানামত প্রকাশ করেছেন। তাঁদের অনেকেরই মতামত আমি আলোচনার চেষ্টা পেয়েছি। সেই প্রচলিত মত-সমূহের আলোচনা করে, কোন কোন বিষয়ে আমার মনে কেমন ধারণা হয়েছে,—তাও এই গ্রন্থে বিবৃত করেছি। বলা বাহুল্য, সেই ধারণায় উপনীত হওয়ার কারণ-পরম্পরা নির্দেশ করতেও আমি ক্রটি করি নাই। তবে প্রাচীন বিষয়ের আলোচনায়, আমার জ্ঞান-বুদ্ধি-শিক্ষানুসারে, প্রধানতঃ আমি শাস্ত্রমতের অনুসরণ করতেই চেষ্টা করেছি।
তৃতীয় – প্রত্যেকেই জ্ঞান-বুদ্ধি-অনুসারে মতামত প্রকাশে বা বিচার-বিতর্কে অধিকারী। সুতরাং আমি যদি কোনও নুতন সিদ্ধান্তে উপনীত হই, পাঠক-মাত্রকেই যে তা মেনে নিতে হবে, সেরূপ স্পৰ্দ্ধা—সেরূপ উদ্দেশ্য আমার আদৌ নাই। যে বিষয় নিয়ে কত বড় বড় পণ্ডিতের মস্তিষ্ক বিঘূর্ণিত হয়েছে, ক্ষুদ্র আমি, আমার সিদ্ধান্তই যে প্ৰমাদ-পরিশূন্য হবে-তারই বা কিভাবে বলতে পারি? তবে, যুক্তিযুক্ত প্রমাণ-পরম্পরা দেখে যদি কেউ আমার কোনও সিদ্ধান্তের পোষকতা করেন, তাই আমার পরিশ্রমের সাফল্য বলে মনে করব।
আমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের অনুবর্ত্তী হয়ে পাঠকগণ এই গ্রন্থ পাঠ করেন, আমার ত্রুটি-বিচ্যুতি উপেক্ষা করেন,—এই গ্রন্থ-প্রচারে এটাই আমার প্রার্থনা।
বিনীত, গ্রন্থাকার।

ভারতবর্ষ

(প্রথম খণ্ড)

হিন্দু-রাজত্ব।

শ্রীদুর্গাদাস লাহিড়ী।

শ্রীশ্রীহরিঃ-শরণং।

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.