“যখন শুনিলাম, অর্জ্জুন ধনুর্গুণ আকর্ষণপূর্ব্বক অসংখ্য রাজগণ সমক্ষে লক্ষ্যভেদ করিয়া তাহা ভূতলে পাতিত ও দ্রৌপদীকে বরণ করিয়াছে, তদবধি আমি জয়াশায় নিরাশ হইয়াছি। যখন শুনিলাম, অর্জ্জুন দ্বারকায় স্ববিক্রম-প্রভাবে সুভদ্রার পাণিগ্রহণ করিয়াছে, তথাপি বৃষ্ণিবংশাবতংস কৃষ্ণ-বলরাম তাদৃশ ঘৃণিত ও নিন্দিত কর্ম্মে উপেক্ষা করিয়া পরম সখ্যভাবে ইন্দ্রপ্রস্থে গমন করিয়াছেন, তদবধি আমি জয়াশায় নিরাশ হইয়াছি। যখন শুনিলাম, দেবরাজ ইন্দ্র নিরবচ্ছিন্ন মুষলধারে বৃষ্টি করিতে লাগিলেন, কিন্তু অর্জ্জুন তাহাতে কিছুমাত্র শঙ্কিত না হইয়া দিব্যশরজাল বিস্তার করিয়া সেই বৃষ্টি নিবারণপূর্ব্বক খাণ্ডবদাহে অগ্নিকে পরিতৃপ্ত করিয়াছেন, তদবধি আমি জয়াশায় নিরাশ হইয়াছি। যখন শুনিলাম, কুন্তীর সহিত পঞ্চপাণ্ডব জতুগৃহের প্রজ্জ্বলিত হুতাশন হইতে পরিত্রাণ পাইয়াছে এবং অসামান্য ধীশক্তিসম্পন্ন বিদুর তাহাদিগের অভীষ্টসিদ্ধির নিমিত্ত যত্নবান্ আছে, তদবধি আমি জয়াশায় নিরাশ হইয়াছি। যখন শুনিলাম, ভীমসেন বাহুবলে বলদৃপ্ত মগধাধিপতি জরাসন্ধকে বধ করিয়াছে এবং দিগ্বিজয় প্রসঙ্গে অনেকানেক ভূপতিদিগকে বশীভূত করিয়া রাজসূয় মহাযজ্ঞের অনুষ্ঠান করিয়াছে, তদবধি আমি জয়াশায় নিরাশ হইয়াছি। যখন শুনিলাম, একবস্ত্রা, অশ্রুমুখী, দুঃখিতা, রজস্বলা দ্রৌপদীকে সনাথা হইলেও অনাথার ন্যায় সভায় আনয়ন ও নিতান্ত নির্ব্বোধ দুঃশাসন তাহার পরিধেয় বসন আকর্ষণ করিয়াছে, তথাপি ঐ দুষ্ট বিনষ্ট হয় নাই, তদবধি আমি জয়াশায় নিরাশ হইয়াছি। যখন শুনিলাম, শকুনি পাশক্রীড়া করিয়া যুধিষ্ঠিরকে পরাজিত ও রাজ্যচ্যুত করিয়াছে, তথাপি শান্ত ও সুশীল ভ্রাতৃগণ তাহার অনুগতই আছে, তখন আর জয়ের আশা করি নাই। যখন বনপ্রস্থানকালে জ্যেষ্ঠভক্তিপরায়ণতাপ্রযুক্ত পাণ্ডবদিগকে অশেষক্লেশস্বীকার সহকারে বিবিধ হিতচেষ্টা করিতে শ্রবণ করিলাম এবং ভিক্ষোপজীবী মহাত্মা স্নাতক ব্রাহ্মণগণ ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠিরের অনুগত আছেন, তখন আর জয়ের আশা করি নাই। যখন শুনিলাম, অর্জ্জুন কিরাতরূপী ভগবান্ মহাদেবকে যুদ্ধে প্রীত ও প্রসন্ন করিয়া পাশুপতমহাস্ত্র প্রাপ্ত হইয়াছে এবং স্বর্গে দেবরাজ ইন্দ্রের নিকট যথাবিধানে অস্ত্রশিক্ষা করিয়াছে, তখন আমি আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, বরদানদৃপ্ত ও দেবতাদিগের অজেয় পুলোমপু্ৎত্র কালকেয়দিগকে অর্জ্জুন পরাজয় করিয়াছে এবং দুর্দ্দান্ত দানবদল দমন করিবার নিমিত্ত ইন্দ্রলোকে গমন করিয়া কৃতকার্য্য হইয়া প্রত্যাগমন করিয়াছে, তদবধি আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, ভীম ও অন্যান্য পাণ্ডবগণ, যথায় নরলোকের সঞ্চারমাত্র নাই, এইরূপ দুর্গম স্থানে গমন করিয়া কুবেরের সহিত সমাগত হইয়াছে, তখন আর আমার জয়াশা নাই। যখন শুনিলাম কর্ণের পরামর্শ-ক্রমে ঘোষযাত্রাগত মৎপুৎত্রেরা গন্ধর্ব্ব দ্বারা সংযত [বন্ধনপ্রাপ্ত] ও অর্জ্জুন কর্ত্তৃক বিমোচিত হইয়াছে, তদবধি আমার আর জয়াশা নাই। যখন শুনিলাম, ধর্ম্ম স্বয়ং যক্ষের আকার স্বীকার করিয়া ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠিরের সম্মুখে উপস্থিত হইয়া কয়েকটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিয়াছেন, তদবধি আমি জয়াশায় নিরাশ হইয়াছি। যখন শুনিলাম, বিরাটরাজ স্বসুতা উত্তরাকে অলঙ্কৃতা করিয়া অর্জ্জুনকে সম্প্রদান করিয়াছেন এবং অর্জ্জুনও আপনার পুৎত্রের নিমিত্ত তাহাকে প্রতিগ্রহ করিয়াছে, তখন আর আমি জয়ের আশা করি নাই। যখন শুনিলাম, নির্জ্জিত, নির্ধন, নিষ্কাসিত ও স্বজনবহিষ্কৃত যুধিষ্ঠির সপ্ত অক্ষৌহিণী সেনা সংগ্রহ করিয়াছে এবং বলিকে ছলিবার নিমিত্ত যিনি একপদে এই সম্পূর্ণ পৃথিবী অধিকার করিয়াছেন, সেই ত্রিবিক্রম নারায়ণ তাহার বহুবিধ উদ্দেশ্য সংসাধন করিতেছেন, তখন আমি আর জয়ের আশা করি নাই। যখন নারদমুখে শুনিলাম, কৃষ্ণার্জ্জুন সাক্ষাৎ নরনারায়ণাবতার, তিনি ব্রহ্মলোকে তাঁহাদিগকে নিরীক্ষণ করেন, তদবধি আর জয়াশায় করি নাই। যখন শুনিলাম, বাসুদেব লোকের হিতসাধনের নিমিত্ত কুরুদিগের বিবাদভঞ্জন করিতে গমন করিয়া পরিশেষে চরিতার্থ না হইয়া প্রত্যাগত হইয়াছেন, তদবধি আর আমি জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, কর্ণ ও দুর্য্যোধন কৃষ্ণকে নিগ্রহ করিতে সচেষ্টিত আছে, কিন্তু তিনি আপনার বহুবিধ রূপ প্রদর্শন করিয়া তাহাদিগকে নিচেষ্ট করিয়াছেন, তখন আর জয়ের আশা করি নাই। যখন শুনিলাম, কৃষ্ণ প্রস্থানকালে নিতান্ত দীনা কুন্তীকে একাকিনী রথের সম্মুখে দণ্ডায়মানা দেখিয়া অশেষ সান্ত্বনাবাক্যে তাঁহাকে আশ্বাস প্রদান করিয়াছেন, তখন আর জয়াশায় করি নাই। যখন শুনিলাম, বাসুদেব ও ভীষ্ম উভয়ে পাণ্ডবদিগের মন্ত্রী হইয়াছেন এবং দ্রোণাচার্য্য কায়মনোবাক্যে নিরবচ্ছিন্ন তাহাদিগের শুভানুধ্যান করিতেছেন, তখন আর জয়াশায় করি নাই। যখন শুনিলাম, ভীষ্মদেব ‘তুমি যুদ্ধ করিলে আমি যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইব না’ কর্ণকে এই কথা কহিয়া সেনাধিকার পরিত্যাগ করিয়াছেন, তখন আর জয়ের আশা করি নাই। যখন শুনিলাম, অর্জ্জুন বিষণ্ণ ও মোহাচ্ছন্ন হইলে কৃষ্ণ স্বশরীরে চতুর্দ্দশ ভুবন দর্শন করাইয়াছেন, তখন আর জয়াশায় করি নাই। যখন শুনিলাম, ভীষ্ম প্রতিদিন রণক্ষেত্রে দশসহস্র লোকের প্রাণসংহার করিলেও পাণ্ডবপক্ষীয় বিখ্যত কোন এক ব্যক্তিকে বিনষ্ট করিতে পারেন নাই, তখন আর জয়াশায় করি নাই। যখন শুনিলাম, ধর্ম্মপরায়ণ ভীষ্ম, পাণ্ডবদিগের নিকট আপনার বধোপায় অবধারণ করিয়া দিয়াছেন এবং তাহারা অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইয়া সেই বিষয় সংসাধন করিয়াছে, তখন আর জয়াশায় করি নাই। যখন শুনিলাম, অর্জ্জুন শিখণ্ডীকে সম্মুখে রাখিয়া মহাবলপরাক্রান্ত ভীষ্মকে নিতান্ত নিস্তেজ করিয়াছে, তখন আমি জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, ভীষ্মদেব মৎপক্ষীয় অসংখ্য লোককে বিনষ্ট ও অল্পাবশিষ্ট করিয়া শত্রুপক্ষীয়দিগের সুতীক্ষ্ণশরজালে বিদ্ধকলেবর হইয়া শরশয্যায় শায়িত হইয়াছেন, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, ভীষ্ম শরশয্যায় শয়ান হইয়া পিপাসাশান্তির নিমিত্ত পানীয় আনয়নার্থ অনুজ্ঞা করিলে অর্জ্জুন ভূমিভেদ করিয়া তাঁহাকে পরিতৃপ্ত করিয়াছে, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, বায়ু [পবন], ইন্দ্র ও সূর্য্য ইঁহারা পাণ্ডবদিগের অনুকুল আছেন এবং দুরন্ত হিংস্রজন্তুগণ যাত্রাকালে আমাদিগকে নানাপ্রকারে বিভীষিকা প্রদর্শন করিয়া থাকে, তখন আর আমি জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, বিচিত্রবীর্য্য দ্রোণাচার্য্য যুদ্ধে নানাবিধ অস্ত্র প্রয়োগনৈপুণ্য প্রদর্শন করিয়া পঞ্চপাণ্ডবের কাহাকেও বিনষ্ট করিতে পারেন নাই, তখন আমি আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, মহারথ সংসপ্তকগণ, যাহারা অর্জ্জুন-বিনাশের নিমিত্ত ব্যবস্থিত হইয়াছিল, তাহারা তৎকর্তৃক নিহত হইয়াছে, তখন আর আমি জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, দ্রোণাচার্য্য অস্ত্র গ্রহণ করিয়া যাহা সতত সাবধানে সংরক্ষণ করিতেছেন, সেই দুর্ভেদ্য ব্যুহভেদ করিয়া তন্মধ্যে অভিমন্যু অসহায় হইয়া প্রবেশ করিয়াছে, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, সপ্তরথী অর্জ্জুন-বিনাশে অসমর্থ হইয়া অল্পবয়স্ক বালক অভিমন্যুকে বধ করিয়া পরম সন্তোষ লাভ করিয়াছে, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, অভিমন্যুকে বিনষ্ট করিয়া ধার্ত্তরাষ্ট্রেরা অতিশয় হৃষ্ট ও সন্তুষ্ট হইলে অর্জ্জুন রোষভরে সিন্ধুরাজ জয়দ্রতকে বিনাশ করিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করিয়াছে, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, অর্জ্জুন শত্রুসমক্ষে জয়দ্রতকে বধ করিয়া অনায়াসে প্রতিজ্ঞাপাশ হইতে বিমুক্ত হইয়াছে, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, অর্জ্জুনের অশ্বচতুষ্টয় একান্ত ক্লান্ত হইলে বাসুদেব বন্ধন উন্মোচন করিয়া তাহাদিগকে জলপান করাইয়া পুনর্ব্বার রথে যোজনা করেন, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, কর্ণ ধনুর অগ্রভাগ দ্বারা ভীমসেনকে আকর্ষণ করিয়া যথোচিত তিরস্কার করিয়াছেন ও সে অশেষ ক্লেশ স্বীকার করিয়া ভাগ্যবলে আপনার প্রাণরক্ষা করিয়াছে, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, দ্রোণ, কৃতবর্ম্মা, কৃপ, কর্ণ, অশ্বত্থামা ও শল্য ইঁহারা প্রতীকারে পরাঙ্মুখ হইয়া সমক্ষে জয়দ্রতবধে উপেক্ষা করিয়াছেন, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, দেবরাজদত্ত দিব্য-শক্তি ঘোররূপী রাক্ষস ঘটোৎকচের বধনিমিত্ত প্রযুক্ত হইয়াছে, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, কর্ণ অর্জ্জুনের বধসাধন করিবার নিমিত্ত যে একপুরুষঘাতিনী শক্তি রাখিয়াছিলেন, তাহা রাক্ষস ঘটোৎকচের উপর নিক্ষেপ করিয়াছেন, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, ধৃষ্টদ্যুম্ন যুদ্ধ-ধর্ম্মের বিরুদ্ধ আচরণ করিয়া মরণে স্থিরনিশ্চয়, বিশস্ত্র ও রথস্থিত দ্রোণাচর্য্যের শিরশ্ছেদ করিয়াছে, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম,অশ্বত্থামার সম্মুখীন হইয়া মাদ্রীসুত নকুল অসংখ্য লোকসমক্ষে ঘোরতর দ্বৈরথ সংগ্রাম করিয়াছে, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, দ্রোণবধে ক্রোধে অধীর হইয়া অশ্বত্থামা নারায়াণাস্ত্র পরিত্যাগ করিয়াও পাণ্ডবদিগের প্রধান এক ব্যক্তির প্রাণসংহার করিতে পারিলেন না, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, ভীমসেন যুদ্ধে দুঃশাসনের রুধির পান করিয়াছে এবং দুর্য্যোধন প্রভৃতি অনেকেই তথায় সমুপস্থিত থাকিয়াও তাহা নিবারণ করিতে অক্ষম হইয়াছে, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, অর্জ্জুন অতি পরাক্রান্ত কর্ণকে সমরশায়ী করিয়াছে, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির অতি দুর্দ্ধর্ষ দুঃশাসন, মহাবীর্য্য কৃতবর্ম্মা ও অশ্বত্থামাকে পরাজয় করিয়াছে, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, যে শল্য ‘বাসুদেবকে পরাজয় করিব’ বলিয়া সর্ব্বদা স্পদ্ধা করিত, যুদ্ধস্থলে যুধিষ্ঠির তাঁহার প্রাণনাশ করিয়াছে, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, সহদেব কলহ ও দ্যূত প্রভৃতি কতিপয় দুর্নীতির নিদান ও অতি মায়াবী প্রবল সৌবলকে [শকুনি] মৃত্যমুখে প্রত্যর্পণ করিয়াছে, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, দুর্য্যোধন গদাযুদ্ধে সবিশেষ নৈপুণ্য প্রদর্শন করিতেছিল, ইত্যবসরে ভীমসেন আপনার অনুরূপ বিক্রম প্রকাশ করিয়া তাহাকে সমরশায়ী করিয়াছে, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, অশ্বত্থামা প্রভৃতি কতিপয় বীরপুরুষেরা সমবেত হইয়া দ্রৌপদীর প্রসুপ্ত পুৎত্রপঞ্চক বিনাশ করিয়া অতি ঘৃণিত ও নিন্দিত কর্ম্মের অনুষ্ঠান করিয়াছেন, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, অর্জ্জুন ‘স্বস্তি’ বলিয়া অস্ত্র দ্বারা অশ্বত্থামার অমোঘ ব্রহ্মশির অস্ত্র নিবারণ করিয়াছে এবং তাহার তুষ্টিসাধন করিবার নিমিত্ত অশ্বত্থামাও মণিরত্ম পরিত্যাগ করিয়াছেন, তখন আর জয়াশা করি নাই। যখন শুনিলাম, অশ্বত্থামা মন্ত্রপূত অস্ত্র প্রয়োগ করিয়া্ উত্তরার গর্ভ নাশ করেন, তদুপলক্ষে দ্বৈপায়ন ও বাসুদেব উভয়ে তাঁহাকে অভিশাপ প্রদান করিয়াছেন, তখন আর জয়াশা করি নাই। এক্ষণে গান্ধারী পুৎত্র, পৌৎত্র, পিতা, ভ্রাতা প্রভৃতি সমুদয় আত্মীয়-স্বজনের নিধনদশায় এতাদৃশ দুরবস্থায় পড়িয়াছেন এবং পাণ্ডবেরা অনায়াসে অতি দুষ্কর কার্য্যের সংসাধন করিয়া পরিশেষে রাজসিংহাসন অধিকার করিয়াছে; এক্ষণে আমাদিগের পক্ষীয় তিনটি ও পাণ্ডবদিগের সাতটি সমুদয়ে দশজন অবশিষ্ট আছে। এই ভয়ঙ্কর যুদ্ধে অষ্টাদশ অক্ষৌহিণী সেনা বিনষ্ট হইয়াছে; হে সঞ্জয়! সেই সমুদয় স্মরণ করিয়া আমি বারংবার মোহে অভিভূত হইতেছি, চারিদিক্ শূন্যময় ও জীবলোক শোকময় বলিয়া এক্ষণে প্রতীয়মান হইতেছে। আমার আর চেতনা নাই। মন বিহ্বল হইতেছে।”
শেয়ার করে অন্যদের জানতে সহায়তা করুন-
You must be logged in to post a comment.