Category: গুরু
শ্রীশ্রী গুরু প্রণাম মন্ত্র (অর্থ সহ)
শ্রীগুরুপরম্পরা
কৃষ্ণ হৈতে চতুর্ম্মুখ, হন কৃষ্ণসেবোন্মুখ,
ব্রহ্মা হৈতে নারদের মতি ।
নারদ হৈতে ব্যাস, মধ্ব কহে ব্যাস-দাস,
পূর্ণপ্রজ্ঞ পদ্মনাভ গতি ॥
নৃহরি মাধব-বংশে, অক্ষোভ্য পরমহংসে,
শিষ্য বলি অঙ্গিকার করে ।
অক্ষোভ্যের শিষ্য জয়- তীর্থ নামে পরিচয়,
তাঁর দাস্যে জ্ঞানসিন্ধু তরে ॥
তাঁহা হৈতে দয়ানিধি, তাঁর দাস বিদ্যানিধি,
রাজেন্দ্র হইল তাঁহা হৈতে ।
তাঁহার কিঙ্কর জয়- ধর্ম্ম নামে পরিচয়,
পরম্পরা জান ভালমতে ॥
জয়ধর্ম্ম-দাস্যে খ্যাতি, শ্রীপুরুষোত্তম-যতি,
তাঁ’হ’তে ব্রহ্মণ্যতীর্থ সূরি ।
ব্যাসতীর্থ তাঁর দাস, লক্ষ্মীপতি ব্যাসদাস,
তাঁহা হইতে মাধবেন্দ্র পুরী ॥
মাধবেন্দ্র পুরীবর, শিষ্যবর শ্রীঈশ্বর,
নিত্যানন্দ, শ্রীঅদ্বৈত বিভু ।
ঈশ্বরপুরীকে ধন্য, করিলেন শ্রীচৈতন্য,
জগদ্গুরু গৌর মহাপ্রভু ॥
মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য, রাধাকৃষ্ণ নহে অন্য,
রূপানুগ জনের জীবন ।
বিশ্বম্ভর প্রিয়ঙ্কর, শ্রীস্বরূপ-দামোদর,
শ্রীগোস্বামী রূপ-সনাতন ॥
রূপপ্রিয় মহাজন, জিব-রঘুনাথ হন,
তাঁর প্রিয় কবি কৃষ্ণদাস ।
কৃষ্ণদাস-প্রিয়বর, নরোত্তম সেবাপর,
যাঁর পদ বিশ্বনাথ-আশ ॥
বিশ্বনাথ ভক্তসাথ, বলদেব জগন্নাথ,
তাঁর প্রিয় শ্রীভক্তিবিনোদ ।
মহাভাগবতবর, শ্রীগৌরকিশোরবর,
হরিভজনেতে যাঁর মোদ ॥
তদনুগ-মহাজন শ্রীকৃষ্ণ-কীর্ত্তন-ধন
যেবা দিল পুরি জগকাম ।
শ্রীবার্ষভানবীবরা, সদা সেব্য সেবাপরা,
তাঁহার দয়িতদাস নাম ॥
তদভিন্ন দেহদিব্য স্বরূপ-রূপ-রঘু-জিব্য
সদা সেব্য যাঁর পাদপদ্ম ।
সুসিদ্ধান্ত মূর্ত্তিধর শ্রীশ্রীধর গুরুবর
রূপানুগ-সাধুশ্রেয় সদ্ম ॥
তাঁর প্রেয় মহোঽভীষ্ট স্থাপনে সদাসচেষ্ট
ভক্তিসুন্দর শ্রীগোবিন্দ নাম ।
তাঁর প্রিয় মনোনীত আচার-প্রচারে রত
ভক্তিনিরমল শ্রীআচার্য্য নাম ।
এই পরম্পরা ধন সবে গৌর-নিজজন
তাঁদের উচ্ছিষ্টে মোর কাম ॥
গুরু: বহু জন্মের সম্বন্ধ
বহু বুদ্ধিমানের মধ্যে দেখেছি যা তা বিশ্বাস করার দুর্দমনীয় প্রবৃত্তি – তা আবার বড় বড় শ্লোকের খাঁড়া উচিয়ে৷ এঁরা ভাবেন এরই নাম যথার্থ গুরুভক্তি, আনুগত্য – লয়ালটি৷ শুনতে শুনতে প্রায়ই আমার মনে হত- আমার মতন ডিস্লয়াল শিষ্য বুঝি ভূ-ভারতে দুটি নেই৷ বহু ভুগে ও পোড় খেয়ে ক্রমশ বুঝেছিলাম যে উদ্ভটবিলাসী ও অধ্যাত্মবাদী সমার্থক নয়৷
বুদ্ধির অভিমানে আঘাত লাগলে যখনই মনে হ’ত যে, বুদ্ধির খাসতালুকে বাস ক’রে এতদিন যে মুক্তির খাজনা দিয়ে এলাম- ফসল ফলল কতটুকু? কিছুই পাই নি – বলি না৷ কিন্ত্ত যা পেয়েছিলাম তাতো অসাঙ্গ নয়, ফুরিয়া যায় সে পথ চলতে চলতে৷ তখন ফিরি আপ্তবাক্যের দিকে – কিন্ত্ত আপ্তবাক্য তো জীবন্ত হ’য়ে ওঠে না জীবনের তাপ বিনা৷ এই জন্যেই বুঝি শাস্ত্রে বলেছে গুরু বিনা গতি নেই? তন্ত্রে পড়েছিলাম: ”গুরুমুখ্যাঃ ক্রিয়াঃ সর্বা ভক্তিমুক্তি ফলপ্রদাঃ’- অর্থাত্ কোনো জপতপই গুরুর প্রত্যক্ষ আদেশ বিনা সক্রিয় হ’য়ে ওঠে না৷ গুরু খুঁজেছিলামও তো সেই জন্যেই৷ কোথায় না গিয়েছি- কত নাগা সন্ন্যাসী, গ্রামবাসী, গৃহী, যোগী, কত মঠ, মণ্ডলেশ্বর- কিন্ত্ত কাউকে দেখেই তো মনে হয় নি ইনিই আমার গুরু! মনে হ’ল প্রথম যখন দেখলাম শ্রীঅরবিন্দের দিব্যকান্তি ১৯২৪ সালে৷ মন মুহূর্তেই মেনে নিল তাঁকেই আমার গুরু ব’লে৷ তিনিও আমাকে গ্রহণ করেছিলেন সঙ্গে সঙ্গেই – সেকথা তিনি লিখেছিলেন প্রায় বার বত্সর পরে- ১৯৩৫ সালে; ”দিলীপ, তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার আগেই আমি অনুভব করেছিলাম তোমার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্বন্ধ – যেজন্যে আমি বরাবর তোমাকে ছিলাম ধারণ ক’রে৷ আমি যে তোমার সংস্পর্শে আসতে না আসতে টের পেয়েছিলাম যে, তোমার সঙ্গে আমার সম্বন্ধ বহু জন্মের… যে, তুমি আমার জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ… তাই তো তোমার আমার ফের দেখা হয়েছিল৷ এ ভবিতব্য৷ তুমিও আমাকে এইভাবে গুরু ব’লে চিনেছিলে ব’লেই এসেছিলে আমার কাছে৷ তোমার বাইরের মন এখনো এ-সম্বন্ধে পূর্ণ সচেতন হয় নি নবজন্মের সময় একটা নতুন আড়াল আসে ব’লেই৷ নইলে একথা তুমিও জানো অন্তরে৷”
You must be logged in to post a comment.