মুণ্ডক উপনিষদ – প্রথম মুণ্ডকে প্রথম খণ্ডে শ্রুতি—শ্রুতিপর্য্যন্ত


মুণ্ডক উপনিষদ (মুণ্ডকোপনিষদ / মুণ্ডকোপনিষৎ / মুণ্ডকোপনিষত) — অথর্ব্ববেদীয় উপনিষদ –

প্রথম মুণ্ডকে প্রথম খণ্ডে শ্রুতি—শ্রুতিপর্য্যন্ত

১.১.১-২ ব্রহ্মা হইতে যে সমস্ত আচার্য্য-পর্যায়ক্রমে এই ব্রহ্মবিদ্যা জগতে প্রচারিত হইয়াছে তাহার নির্দ্দেশ

সমস্ত জগতের কর্ত্তা (উৎপাদক) এবং উৎপন্ন জগতের পরিরক্ষক ব্রহ্মা দেবগণের প্রধানরূপে প্রথমে প্রাদুর্ভূত হইয়াছিলেন। তিনি অথর্ব্বনামক জ্যেষ্ঠ পুত্রকে সর্ব্ববিদ্যার আকর ব্রহ্মবিদ্যা উপদেশ করিয়াছিলেন।।১।।

এখন ব্রহ্মবিদ্যা প্রবর্ত্তক সম্প্রাদায় ক্রম বলা হইতেছে—আদি পুরুষ ব্রহ্মা অথর্ব্বন্‌ ঋষিকে যে ব্রহ্মবিদ্যা বলিয়াছিলেন, অথর্ব্বা সর্ব্বপ্রথম সেই বিদ্যা অঙ্গির্‌নামক ঋষিকে বলেন; তিনি ভরদ্বাজবংশীয় সত্যবহকে বলেন; ভরদ্বাজ আবার পূর্ব্ব পূর্ব্ব গুরু হইতে পরবর্ত্তী শিষ্যগণকর্ত্তৃক লব্ধ এই বিদ্যা অঙ্গিরা ঋষিকে বলিয়াছিলেন।।২।।

১.১.৩ ব্রহ্মবিদ্যালাভের উদ্দেশ্যে অঙ্গিরা ঋষির নিকট শৌনকের গমন এবং এই বিজ্ঞানে সর্ব্ববিজ্ঞান-বিষয়ক প্রশ্ন কথন

গ্রহস্থপ্রধান শৌনক যথাবিধি উপস্থিত হইয়া অঙ্গিরাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন,–ভগবন্‌, কাহাকে জানিলে এই সমস্ত (জগৎ) বিজ্ঞাত হয়।।৩।।

১.১.৪-৫ অঙ্গিরা কর্ত্তৃক পরা ও অপরাভেদের বিদ্যার দ্বৈবিধ্য কথন এবং পরা ও অপরাবিদ্যার স্বরূপ নিরূপণ

অঙ্গিরা শৌনকের উদ্দেশে বলিলেন যে, ব্রহ্মবিদ্‌গন (বেদতাৎপর্য্যবেত্তারা) এইরূপ বলিয়া থাকেন যে, পরা ও অপরা, এই দুইটি বিদ্যা অবশ্য জানিতে হয়।।৪।।

সেই উভয় বিদ্যার মধ্যে অপরা বিদ্যা কথিত হইতেছে—ঋগ্বেদ, যজুর্ব্বেদ, সামবেদ, অথর্ব্ববেদ, শিক্ষা, কল্পসূত্র, ব্যাকরণ, নিরুক্ত, ছন্দঃশাস্ত্র ও জ্যোতিষ। অনন্তর পরা বিদ্যা কথিত হইতেছে, যাহা দ্বারা সেই অক্ষর ব্রহ্মকে প্রাপ্ত হওয়া যায়।।৫।।

১.১.৬-৯ পরা বিদ্যায় বিদ্যার বিষয় অক্ষর ব্রহ্মের স্বরূপ কথন এবং ঊর্ণিনাভদৃষ্টান্তে ব্রহ্মের সর্ব্বকারণত্ব সমর্থন

ধীর বিবেকিগণ [এই পরা বিদ্যা দ্বারা] সেই যে, অদৃশ্য, অগ্রাহ্য, অগোত্র (মূলরহিত) নীরূপ, এবং চক্ষুঃ ও কর্ণরহিত, হস্তপদবিহীন, নিত্য, বিভু, সর্ব্বব্যাপী ও অতি সূক্ষ্ম, সেই যে ভূতযোনি (সর্ব্বকারণ) অক্ষরকে সর্ব্বোতোভাবে অবগত হইয়া থাকেন।।৬।।

ঊর্ণনাভি যেরূপ অপর কোন বস্তুর সাহায্য না লইয়া আপনিই তন্তুরাশি সৃষ্টি করে এবং পুনশ্চ যে সমস্ত আত্মসাৎ করিয়া থাকে; পৃথিবীতে যেরূপ ওষধিসমূহ প্রাদুর্ভূত হয়, এবং জীবৎ পুরুষদেহ হইতে যেরূপ কেশ ও লোমসমূহ সমুৎপন্ন হয়; সেইরূপ এই সংসারে অক্ষর ব্রহ্ম হইতে সমস্ত জগৎ প্রাদুর্ভূত হইয়া থাকে।।৭।।

এই শ্রুতিতে উৎপত্তির ক্রম কথিত হইতেছে,–তপস্যা অর্থাৎ উৎপাদনোপযোগী জ্ঞান দ্বারা [উক্ত ভূতযোনি অক্ষর] ব্রহ্ম উপচয় প্রাপ্ত হন, অর্থাৎ সৃষ্টি বিষয়ে উন্মুখতা লাভ করেন; সেই ব্রহ্ম হইতে অন্ন অর্থাৎ জীবোপভোগ্য অব্যাকৃত প্রকৃতি উৎপন্ন হয়, অন্ন হইতে প্রাণ (হিরণ্যগর্ভ), হিরণ্যগর্ভ হইতে মনঃ (অন্তঃকরণ০, তাহা হইতে সত্যনামক সূক্ষ্ম পঞ্চভূত, তাহা হইতে পৃথিব্যাদি লোকসমূহ, (লোকেতে আবার কর্ম্ম) এবং শুভ কর্ম্মে আবার অমৃত অর্থাৎ কর্ম্মফল সমুৎপন্ন হয়।।৮।।

যিনি সর্ব্বজ্ঞ ও সর্ব্ববিৎ, সর্ব্বজ্ঞতারূপ জ্ঞানই যাঁহার তপস্যা, সেই অক্ষর ব্রহ্ম হইতে পূর্ব্বোক্ত হিরণ্যগর্ভনামক ব্রহ্ম, নাম (সংজ্ঞা), শুক্লাদি রূপ ও ধান্যদি অন্ন সমুৎপন্ন হয়।।৯।।

।।ইতি প্রথম মুণ্ডকে প্রথম খণ্ড।।