দৈত্য গুরু ‘শুক্রাচাৰ্য্য’ সম্পর্কে বিশটি তর্থ্য


(১) দক্ষের অন্যতমা কন্যা মুনির গর্ভে শুক্র নামে এক মহা-কবি পুত্র জন্মে। কবিবর শুক্র নিজ বৈমাত্রেয় ভ্রাতা অসুরদিগের পৌরহিত্যে নিযুক্ত হন। কবিবর শুক্রাচার্য্যের ত্বষ্টা, ধর, অত্রি ও সৌকল নামে চারিটি পুত্র হয়। তাহারাও দৈত্যদিগের
পুরোহিত হইয়াছিলেন । কালিকা-৩৪।
(২) দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য্য ভৃগু হইতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শিবের আরাধনা করিয়া সঞ্জীবনী বিদ্যা প্রাপ্ত হন এবং তৎফলে জরামরণ-রহিত বজ্রের ন্যায় দৃঢ় দেহ লাভ করেন। শিবের প্রসাদে তিনি যোগাচার্য্য নামেও খ্যাত হন। সেীর-৩০ ।
(৩) মহর্ষি ভৃগু, অঙ্গিরা ও কবি, ইহার যথাক্রমে মহেশ্বর অগ্নি ও ব্রহ্মার পুত্র। ভৃগুর শুক্র, চ্যবন প্রভৃতি সাত পুত্র জন্মে। আবার ঐ অধ্যায়েই অন্যত্র আছে কবি হইতে কাব্য, ধৃষ্ণু, শুক্রাচার্য্য প্রভৃতি উৎপন্ন হন। মহাভাঅনুশা-৮৫। ভৃগু, অঙ্গিরা ও কবি দেখ।
(৪) হিরণ্যকশিপুর কন্যা দিব্যার গর্ভে ভৃগুর কাব্য নামে এক পুত্র জন্মে। সেই কাব্য নামক পুত্রেরই নামান্তর শুক্র ও উশনা। তিনি দেব ও অসুর গণের আচাৰ্য্য ছিলেন। পিতৃগণের মানসী কন্যা গো শুক্রচার্য্যের পত্নী ছিলেন। ঐ পত্নীর গর্ভে তাহার ষণ্ড, অমর্ক, নামে দুই পুত্র এবং ত্বষ্টা ও বরূত্রী নামে দুই কন্যা জন্মে। বায়ু-৬৫ ।
(৫) ভৃগুপুত্র শুক্রের নামান্তর কবি। একবার মহর্ষি ভৃগু মহর্ষি অঙ্গিরার হস্তে নিজ পুত্রের অধ্যাপনার ভার অর্পণ করেন। অঙ্গিরা তাহাকে সমদশিতার সহিত শিক্ষা দিতেছেন না,
ইহা বুঝিতে পারিয়া ভৃগুপুত্র কবি (শুক্ৰ) অঙ্গিরার নিকট হইতে বিদায় লইয়া মহর্ষি গৌতমের পরামর্শে শিবারাধনায় প্রবৃত্ত হন এবং তপস্যাদ্বারা মহেশ্বরকে সন্তুষ্ট করিয়া তাহার নিকট হইতে মৃতসঞ্জীবনী বিদ্যালাভ করেন। ব্ৰহ্মপু-৯৫। মৎ-২৪৯।
(৬) চন্দ্র বৃহস্পতির পত্নী তারাকে হরণ করিলে শুক্রাচার্য্য গুরু বৃহস্পতির প্রতি সহানুভূতি সম্পন্ন হইয়া চন্দ্রকে অভিশাপ প্রদান করেন যে, তিনি কুষ্ঠরোগগ্ৰস্ত হইবেন। ব্ৰহ্মপু-১৫০ ।
(৭) পঞ্চম (রৈবত) মন্বন্তরে ভগবান হরি শুক্রাচার্য্যের ঔরসে তদীয় পত্নী বৈকুণ্ঠার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন । ভাগ-৮স্ক-৫৷
(৮) দেবাসুর যুদ্ধে বৃহস্পতির সহিত শুক্রাচার্য্যের যুদ্ধ হয়। পদ্ম-উত্ত-৬।
(৯) শুক্রাচার্য্যের বাহন গবয় । গৰ্গ-গোল১২।
(১০) হিরণ্যকশিপু প্রমুখ অসুর পতিগণ দেবগণকে পরাজিত করিয়া ত্ৰৈলোক্য অধিকার করেন। তৎপরে হিরণ্যাক্ষ, প্ৰহলাদ, বলী প্রভৃতি দানব গণ ক্রমান্বয়ে দশযুগকাল ত্রিলোকের অধিপতি হন। তৎপরে বিষ্ণু বলিকে ছলনাপূর্বক স্বাধিকারচ্যুত করিয়া, ইন্দ্রকে ত্রিলোকের আধিপত্য প্রদান করেন। ইন্দ্র আধিপত্য লাভ করিয়৷ অমুরগণকে যজ্ঞভাগ হইতে বঞ্চিত করেন। অসুরগণ শুক্রাচার্য্যের নিকট এতদ্বিষয়ে অনুযোগ করিলেন। দেবতারা সেই সংবাদ পাইয়া বৃহস্পতির পরামর্শে অসুরগণ কোনও প্রতীকারের চেষ্টা করিবার পূৰ্ব্বেই, তাঁহাদিগকে আক্রমণ করিয়া অনেককে হতাহত করেন। শুক্রাচার্য্য তখন অনেক চিস্তার পর স্থির করিলেন যে, তিনি মহাদেবের আরাধনা করিয়া তাঁহার নিকট হইতে দেবগণের ক্ষমতা খৰ্ব্ব করিবার উপায় অবগত হইবেন। এই স্থির করিয়া তিনি অসুরগণকে বলিলেন যে, তিনি প্রতীকারের উপায় উদ্ভাবনের জন্য মহাদেবের আরাধনায় প্রবৃত্ত হইবেন। ততদিন অসুরগণ যেন হিংসা পরিত্যাগ করিয়া তপস্যায় নিরত থাকেন। অসুরগণ তাহাতেই সম্মত হইলে, এবং বৃহস্পতিরও অজ্ঞাত এমন এক মন্ত্র প্রার্থনা করিলেন যদ্দ্বারা দেবগণের পরাজয় এবং অসুরদিগের জয় সাধন করিতে পারিবেন। মহাদেব বলিলেন যে, শুক্রাচার্য্য যদি তাঁহার নির্দ্দেশমত ব্রহ্মচারী হইয়া পূর্ণ সহস্র বৎসর যাবৎ অধোমুখ থাকিয়া কুণ্ড ধূম পানপূর্ব্বক তপস্যা করিতে পারেন, তবেই তিনি শুক্রাচার্য্যকে তাঁহার প্রার্থনা মত মন্ত্র প্রদান করিবেন। শুক্রাচার্য্য তাহাতেই সম্মত হইয়া মহাদেবের নির্দ্দেশমত তপস্যায় প্রবৃত্ত হইলেন। এদিকে দেবগণ শুক্রাচার্য্যের তপস্যার হেতু জানিতে পারিয়া অসুরগণকে আক্রমণ করিলেন। অসুরগণ তখন শুক্রাচার্য্যের উপদেশে অহিংস হইয়া তপস্যাচরণ করিতে ছিলেন। তাঁহারা দেবগণের আক্রমণ হইতে আত্মরক্ষা করিবার উপায় না দেখিয়া, শুক্রাচার্য্যের মাতার শরণাপন্ন হইলেন। শুক্র-মাতা অসুরগণকে আশ্বাস প্রদানপূর্বক আশ্রয় প্রদান করিলেও দেবগণ তথায় যাইয়া অসুরদিগকে আক্রমণ করিতে লাগিলেন। তখন শুক্রমাতা ক্রুদ্ধ হইয়া “আমি দেবগণকে ইন্দ্রবিহীন করিব”, এই কথা বলিয়া ইন্দ্রকে স্তম্ভিত করিলেন। দেবগণ ইন্দ্রকে স্তম্ভিত দেখিয়া, ভীত হইয়া পলায়ন-পূর্বক বিষ্ণুর শরণাগত হইলে বিষ্ণু তখন উপায়ান্তর না দেখিয়া শুক্র-জননীর শিরশ্চেদ করিলেন। তখন শুক্রাচার্য্যের পিতা মহর্ষি ভৃগু ক্রুদ্ধ হইয়া বিষ্ণুকে শাপ দিলেন যে, ঐ স্ত্রী-বধজনিত পাপে তাঁহাকে সাতবার মনুষ্যলোকে জন্ম গ্রহণ করিতে হইবে। অনন্তর ভৃগু মুনি মন্ত্র আবৃত্তিপূৰ্ব্বক সত্য-বলে শুক্রজননীকে পুনর্জীবিত করিলেন। ইন্দ্র তাহা জানিতে পারিয়া শুক্রচার্য্যের ভয়ে দিবারাত্র শঙ্কিত ভাবে কালযাপন করিতে লাগিলেন। অতঃপর ইন্দ্র স্বীয় কন্যা জয়ন্তীকে বলিলেন,”শুক্রাচার্য্য ইন্দ্রপদ লোপ করিবার জন্য ঘোরতর তপস্যার নিযুক্ত আছেন। তুমি তাহার সন্নিধানে গমন করিয়া সেবা-শুশ্রষা দ্বারা তাঁহার সন্তুষ্টি সাধন কর।” ইন্দ্র-দুহিতা পিতার বাক্যে তপস্যারত শুক্রাচার্য্যের সন্নিধানে গমন পূৰ্ব্বক পরম ভক্তিভাবে তাহার সেবাশুশ্রুষায় নিযুক্ত হইল। এদিকে দীর্ঘকাল তপস্যা করিবার পর মহাদেব প্রীত হইয়া শুক্রাচার্য্যকে তাহার প্রার্থনা মত বর প্রদান করিলেন। শুক্রাচার্য্য বরলাভ করিয়া হৃষ্টমনে প্রত্যাবর্তনের উদ্যোগ করিতে লাগিলেন। তখন তিনি জয়ন্তীকে সৰ্ব্বদা তাহার সেবায় নিরতা দেখিয়া তাঁহার পরিচয়াদি জিজ্ঞাসা করিলেন এবং সমুদয় অবগত হইয়া জয়ন্তীর ইচ্ছানুসারে, তাঁহাকে বর দিলেন যে, ইন্দ্র-তনয়া দশবৎসর কাল সকলের আদৃত হইয় তাহার পত্নী রূপে তাঁহার নিকট অবস্থান করিতে পরিবেন। অতঃপর শুক্রাচার্য্য জয়ন্তীকে লইয়া স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করিলেন, কিন্তু জয়ন্তীর মায়ায় অসুরগণও তাঁহাকে দেখিতে পাইলেন না। এই সুযোগ পাইয়া দেবগুরু বৃহস্পতি শুক্রাচার্য্যের রূপ ধারণপূর্বক অসুরদিগের নিকট উপস্থিত হইলেন। অসুরগণও তাহাকে প্রকৃত শুক্রাচার্য্য মনে করিয়া, তাঁহার যথোচিত সম্বৰ্দ্ধনা করিলেন। এদিকে জয়ন্তীর মায়ায় আবদ্ধ হইয়া শুক্রাচার্য্য দশ বৎসর তাহার সহিত বাস করিলেন। ঐ সময়েই জয়ন্তীর গর্ভে তাহার দেবযানী নাম্নী এক কন্যা জন্মে। দশ বৎসর অতিক্রান্ত হইলে শুক্রাচার্য্যের মোহোপশম হইল এবং তিনি অসুরদিগের নিকট উপস্থিত হইলেন। তখায় তিনি অপর এক শুক্রাচাৰ্য্যকে (ছদ্মবেশী বৃহস্পতি) দেখিয়া পরম বিস্মিত হইলেন। অসুরগণও তখন দুই শুক্রাচার্য্যকে দেখিয়া পরম আশ্চর্য্যাম্বিত হইলেন এবং কে প্রকৃত অথবা কে কপট শুক্রাচাৰ্য্য তাহা অবগত হইতে না পারিয়া ছদ্মবেশী বৃহস্পতির প্ররোচনায় প্রকৃত শুক্রাচার্য্যকেই দূরীভূত করিয়া দিল। প্রকৃত শুক্রাচাৰ্য্য তখন অসুরদিগকে অভিশাপ দিলেন যে, যেহেতু তাহারা ছদ্মবেশী বৃহস্পতির প্ররোচনায় তাঁহাকে অপমান করিল, তজ্জন্য অচিরে তাহারা জ্ঞান ভ্ৰষ্ট ও বিনষ্ট হইবে। বৃহস্পতি তখন অসুরদিগকে এই ভাবে অভিশপ্ত হইতে দেখিয়া পরম পরিতুষ্ট হইলেন এবং স্বীয় অভিপ্রায় সিদ্ধ হইয়াছে বুঝিয়া স্বরূপ ধারণপূর্ব্বক প্রস্থান করিলেন। তখন অসুরগণ বৃহস্পতির মায়া বুঝিতে পারিয়া অতিশয় অনুতপ্ত হইলেন এবং দলবদ্ধ হইয়া শুক্রাচার্য্যের নিকট গমন করিয়া তাহার কোপ শান্তি করিলেন। দেবীভা-৪স্ক-১০-১৪। বায়ু ৯৭, ৯৮।
(১১) অন্ধক নামক অসুরের সহিত মহাদেবের যুদ্ধকালে মহাদেব যখন দেখিলেন যে, অন্ধক শুক্রাচার্য্যের পরামর্শে ও মন্ত্রবলে অতিশয় বলবান হইয়া যুদ্ধ করিতেছেন, তখন তিনি কর্তৃক গৃহীত শুক্রকে ফলবৎ মুখমধ্যে নিক্ষেপ কবিয়া গলাধঃকরণ করিয়া ফেলিলেন । শুক্রাচার্য্য মহেশ্বরের উদর হইতে বহির্গমনের কোন ও পন্থা না পাইয়া, সুদীর্ঘকাল তথায় অবস্থান করিয়া শৈবযোগ অবলম্বনপূৰ্ব্বক শুক্ররূপে শিব-দেহ হইতে স্থলিত হইয়া নির্গত হইলেন। তৎপরে তিনি মহাদেবের আরাধনা করিয়া মৃতসঞ্জীবনী বিদ্যা লাভ করেন। স্কন্দ-কাশী-পূ-১৬। স্কন্দ-প্রভা-প্রভা-৪৮। শিব-ধৰ্ম্ম-৫৮।
(১২) জালন্ধব দৈত্যের সহিত দেবগণেব যুদ্ধকালে শুক্রাচার্যোর মন্ত্র বলে মৃত অসুরগণকে পুনর্জীবন লাভ করিতে দেখিয়া দেবগণ ভীত হইয়া শিবেব শবণাপন্ন হন। শিব তখন নিজের বদন হইতে এক ভীষণ আকৃতি কৃত্যার সৃষ্টি করিলেন। সেই কৃত্যা সৃষ্ট হইয়াই শুক্রকে গ্রহণ করিয়া আকাশ-পথে প্রস্থান করিল। স্কন্দ-বিষ্ণু-কার্ত্তি-১৮।
(১৩) ভৃগু-পুত্র শুক্র পবন প্রাজ্ঞ ও কবিশ্রেষ্ঠ ছিলেন। তিনি ত্ৰৈলোক্যের প্রাণযাত্রার্থ বর্ষাবর্স ও ভয়াভয় বিষয়ে ভগবান স্বয়ম্ভূকর্তৃক নিযুক্ত হইয়া ত্রিভুবন ভ্রমণ করেন। তিনি দৈত্যদিগের গুরু ছিলেন। তাঁহার তুষ্টাবর, অত্রি এবং আরও দুই পুত্র ছিল। মহাভা-আদি-৬৫, ৬৬।
(১৪) শুক্রাচার্য্যেব কন্যা অরজা ৷ অরজা দেখ। বামা-উত্ত-৯৩, ৯৪। বাম-৬২, ৬৫ ।
(১৫) শুক্রাচার্য্য অন্যান্য ঋষিগণের সহিত শবশয্যাশায়ী ভীষ্মের পার্শ্বে উপস্থিত থাকিয়া ধৰ্ম্মালোচনা করিতেন। মহাভা-শান্তি-৪৭
(১৬) সৃষ্টির আদিতে পদ্মযোনি ব্রহ্মা ত্রিবর্গস্থাপন ও লোকের উপকার সাধনের নিমিত্ত লক্ষ অধ্যায় যুক্ত নীতিশাস্ত্র প্রণয়ন করিয়া তাহা বিশালাক্ষ ভগবান মহেশ্বরকে প্রদান করেন। ভূতনাথ প্ৰজাগণেব আয়ুর অল্পতা অবগত হইয়া উহা সংক্ষেপে কীর্ত্তন করেন। তদবধি ঐ শাস্ত্র বৈশালাক্ষ নামে প্রসিদ্ধ হইল। তৎপর পুরন্দর ঐ শাস্ত্রকে আরও সংক্ষেপ করিয়া বাহুদন্তক নাম প্রদান করেন। অতঃপর বৃহস্পতি ঐ বাহুদন্তক শাস্ত্রকে আরও সংক্ষেপ করিয়া বাহস্পত্য নাম প্রদান পূর্বক মাত্র তিন সহস্ৰ অধ্যায়ে প্রকাশ করিলেন। তদনন্তর অসুর-গুরু শুক্রাচার্য্য মনুষ্যগণের আয়ুর স্বল্পতা অবধারণ করিয়া তাহা একসহস্র আধারে প্রকাশ করেন। মহাভা-শাস্তি-৫১। শুক্রাচার্য্য মহাবীজ পৃথুর পুরোহিত ছিলেন। মহাভা-শান্তি-৫৯।
(১৭) বিষ্ণু শুক্রাচার্য্যেব মাতাকে বধ করাতে তিনি অতিশয় ক্ষুদ্ধ হন এবং ইন্দ্রের সাহার্য্যের জন্যই যে বিষ্ণু তাহার মাতাকে বধ করেন তাহা জানিয়া ইন্দ্রের সর্বনাশ করিতে মনস্থ করেন। কুবের ইন্দ্রের ধনাধ্যক্ষ ছিলেন, তজ্জন্য শুক্রাচাৰ্য্য যোগ বলে তাঁহার দেহমধ্যে প্রবেশ পুৰ্ব্বক কুবেরকে বদ্ধ করিয়া তাঁহার সমস্ত সম্পত্তি হরণ করেন। কুবের হৃতসৰ্ব্বস্ব হইয়া প্রতিকার প্রার্থনায় মহাদেবের শরণাপন্ন হইলেন। মহেশ্বর কুবেরের বাক্য শ্রবণ করিয়া আরক্তলোচনে ইতস্ততঃ দৃষ্টিপাত করিতে লাগিলেন। শুক্রাচার্য্য তাহা দেখিয়া অলক্ষিতে আসিয়া শঙ্করের শূলাগ্রে অবস্থান করিতে লাগিলেন। শঙ্কর তাহা জানিতে পারিয়া শূল নমিত করিয়া মুখ ব্যাদানপূর্বক তাহাকে গ্রাস করিয়া ফেলিলেন। অতঃপর ভূতনাথ সলিল মধ্যে প্রবেশপূৰ্ব্বক দীর্ঘকাল কঠোর তপস্যায় মগ্ন হইলেন। তপস্যান্তে তিনি পুনরায় ধ্যানে নিযুক্ত হইলে তাহার উদর মধ্যস্থিত শুক্রাচার্য্য বহিরাগমনের কোনও উপায় না দেখিয়া নানারুপে মহেশ্বরের স্তব করিতে লাগিলেন । তখন শঙ্কর শুক্রাচার্য্যকে তাহার শিশ্নদ্বার দিয়া নির্গত হইতে বলিলেন। শুক্রাচার্য্য বাহিরে আসিলে শিব পুনরায় শূল গ্রহণ করিয়া তাঁহাকে বধ করিতে উদ্যত হইলেন। তখন পাৰ্ব্বতী শিবকে বলিলেন যে, শিবের দেহ মধ্যে অবস্থান করিয়া এবং অঙ্গ- বিশেষ দ্বারা নির্গত হইয়া শুক্রাচার্য্য তাঁহার পুত্র স্থানীয় হইয়াছে, সুতরাং তাঁহাকে বধ করা শিবের অনুচিত হইবে। পাৰ্ব্বতীর বাক্যে শিব শুক্রাচার্য্যকে বধ না করিয়া যথেচ্ছ গমন করিতে অনুমতি দিলেন। মহাভা শান্তি-২৯০।
(১৮) শুক্রাচার্য্য শিবের, আরাধনা করিয়া মৃতসঞ্জীবনী বিদ্যা লাভ করেন এবং কৃতজ্ঞতার চিহ্নস্বরূপ শুক্রেশ্বর নামে এক শিবলিঙ্গ স্থাপন করেন। স্কন্দ-প্রভা-বস্ত্রা-১৮ ; অৰ্ব্বু -১৫, স্কন্দ-আব-আব-২৫, স্কন্দকাশী-পু-১৬, ৩৩, উত্ত-৬১, ৭৩ । সৌর-৬।
(১৯) শুক্রাচার্য্যের অন্যনাম উশনা। ইন্দ্র তাঁহাকে বজ্র দান করিয়াছিলেন।ঋক্‌-১/৫১-১০; ১/১২১/১২। (২০) শুক্রাচার্য্যের নামান্তর কবি বা কাব্য। বিভিন্ন পুরাণ।
শ্রীশশিভূষণ বিদ্যালঙ্কার কৃত ভারতীয়-পৌরাণিক জীবনী কোষ থেকে নেওয়া-
সংকলনে #কৃষ্ণকমল।