শ্রীহনুমান চালীসা


আগামীকাল ২৮ চৈত্র, ১১ এপ্রিল, মঙ্গলবার ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের পরম ভক্ত বজরঙ্গবলী হনুমানজীর জন্মদিন। ত্রেতাযুগের এমনি এক চৈত্রী পূর্ণিমায় মহাবীর হনুমানজীর জন্ম হয়। তাঁর পূত জন্মদিন উপলক্ষে শ্রীতুলসীদাসের লেখা হনুমান চালীসা পাঠ করার জন্যে সবার প্রতি অনুরোধ থাকলো। সকল বিঘ্ননাশ হয় এবং কামনাপূরণ হয় এই হনুমান চালীসা পাঠে। উত্তর, মধ্য এবং পশ্চিম ভারতের হিন্দিভাষীদের মধ্যে এটা নিত্যপাঠ্য ; অন্ততপক্ষে হনুমানজীর জন্মবার মঙ্গলবারে এই পবিত্র স্তোত্রটি সবাই পাঠ করে। আমরা বাঙালীরাও কেন বা শ্রীহনুমানজীর কৃপা থেকে বঞ্চিত হবো?
তাই আসুন আমরা সবাই পবিত্র হৃদয়ে শ্রীহনুমান চালীসা পাঠ করি।
Image result for hanuman
 
শ্রীহনুমতে নমঃ
 
শ্রীহনুমান চালীসা
 
দোঁহা
 
শ্রী গুরু চরন সরোজ রজ, নিজ মনু মুকুর সুধারী ।
বরনউ রঘুবর বিমল জসু, জো দায়ক ফল চারি ।।
বুদ্ধিহীন তনু জানিকে, সুমিরৌ পবন -কুমার ।
বল বুদ্ধি বিদ্যা দেহু মোহি , হরহু কলেস বিকার ।।
 
চৌপাই
 
জয় হনুমান জ্ঞান গুন সাগর।
জয় কপীস তিহুঁ লোক উজাগর ।।১
রাম দূত অতুলিত বল ধামা।
অঞ্জনী-পুত্র পবনসুত নামা ।।২
মহাবীর বিক্রম বজরঙ্গী।
কুমতি নিবার সুমতি কে সঙ্গী ।।৩
কঞ্চন বরন বিরাজ সুবেসা।
কানন কুন্ডল কুঞ্চিত কেশা ।।৪
হাত বজ্র ঔ ধ্বজা বিরাজৈ।
কাঁধে মূঁজ জনেঊ সাজৈ ।।৫
শঙ্কর সুবন কেশরীনন্দন।
তেজ প্রতাপ মহা জগ বন্দন ।।৬
বিদ্যাবান গুনী অতি চাতুর।
রাম কাজ করিবে কো আতুর ।।৭
প্রভু চরিত্র সুনিবে কো রসিয়া।
রাম লক্ষ্মণ সীতা মন বসিয়া ।।৮
সূক্ষ্ম রূপ ধরি সিয়হিঁ দিখাবা।
বিকট রূপ ধরি লঙ্কা জরাবা ।।৯
ভীম রূপ ধরি অসুর সঁহারে।
রামচন্দ্র কে কাজ সঁবারে ।।১০
 
লায় সজীবন লখন জিয়ায়ে।
শ্রীরঘুবীর হরষি উঁর লায়ে ।। ১১
রঘুপতি কীনহী বহুত বড়াঈ।
তুম মম প্রিয় ভরত সম ভাই ।। ১২
সহস বদন তুমহরো জস গাবৈঁ
অস কহি শ্রীপতি কন্ঠ লগাবৈঁ ।।১৩
সনকাদিক ব্রহ্মাদি মুনীসা
নারদ সারদ সহিত অহীসা ।।১৪
জম কুবের দিগপাল জহাঁ তে।
কবি কোবিদ কহি সকে কহাঁ তে ।।১৫
তুম উপকার সুগ্রীবহিঁ কীনহা।
রাম মিলায় রাজপদ দীনহা ।।১৬
তুমহরো মন্ত্র বিভীষন মানা।
লঙ্কেশ্বর ভএ সব জগ জানা ।।১৭
য়ুগ সহস্র যোজন পর ভানু।
লীল্যো তাহি মধুর ফল জানূ ।।১৮
প্রভু মুদ্রিকা মেলি মুখ মাহীঁ।
জলধি লাঘিঁ গয়ে অচরজ নাহীঁ ।।১৯
দুর্গম কাজ জগত কে জেতে।
সুগম অনুগ্রহ তুমহরে তেতে ।।২০
 
রাম দুয়ারে তুম রখবারে।
হোত ন আজ্ঞা বিনু পৈসারে ।। ২১
সব সুখ লহৈ তুমহারি সরনা।
তুম রক্ষক কাহূ কো ডড় না ।। ২২
আপনা তেজ সমহারো আপৈ।
তীনৌঁ লোক হাঁক তেঁ কাঁপৈ ।। ২৩
ভূত পিশাচ নিকট নহিঁ আবৈ।
মহাবীর জব নাম সুনাবৈ ।। ২৪
নাসৈ রোগ হরৈ সব পীড়া।
জগত নিরন্তর হনুমত বীরা ।।২৫
সঙ্কট তেঁ হনুমান ছুড়াবৈ।
মন ক্রম বচন ধ্যান জো লাবৈ ।।২৬
সব পর রাম তপস্বী রাজা।
তিন কে কাজ সকল তুম সাজা ।।২৭
ঔর মনোরথ জো কোই লাবৈ।
সোই অমিত জীবন ফল পাবৈ ।।২৮
চারোঁ য়ুগ প্রতাপ তুমহারা।
হৈ প্রসিদ্ধ জগত উজিয়ারা ।। ২৯
সাধু সন্ত কে তুম রখবারে।
অসুর নিকন্দন রাম দুলারে ।।৩০
 
অষ্ট সিদ্ধি নৌ নিধি কে দাতা।
অস বর দীন জানকী মাতা ।।৩১
রাম রসায়ন তুমহারে পাসা।
সদা রহো রঘুপতি কে দাসা ।।৩২
তুমহরে ভজন রাম কো পাবৈ।
জনম জনম কে দুখ বিসরাবৈ ।।৩৩
অন্তকাল রঘুবর পুর জাঈ।
জঁহা জন্ম হরি-ভক্ত কহাঈ ।।৩৪
ঔর দেবতা চিত্ত ন ধরঈ।
হনুমত সেই সর্ব সুখ করঈ ।।৩৫
সঙ্কট কটে মীটে সব পীড়া।
জো সুমিরৈ হনুমত বলবীরা ।।৩৬
জয় জয় জয় হনুমান গোসাঈঁ।
কৃপা করহু গুরু দেব কী নাঈ ।। ৩৭
জো শতবার পাঠ কর কোঈ।
ছুটহি বন্দি মহা সুখ হোঈ ।। ৩৮
জো ইয়ে পড়ে হনুমান চালীসা।
হোয় সিদ্ধি সাখী গৌরীসা ।। ৩৯
তুলসীদাস সদা হরি চেরা
কীজৈ নাথ হৃদয় মেঁ ডেড়া ।। ৪০
 
দোঁহা
 
পবনতনয় সংকট হরণ, মঙ্গলমুরতি রূপ ।
রাম লখন সীতা সহিত, হৃদয় বসহু সুর ভূপ ।।
 
ইতি হনুমান চালীসা
 
লিখেছেনঃ কুশল চক্রবর্তী, শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

~: আদি হনুমান চালিশা :~



দোহা
স্মরণ করি শ্রী গুরু চরণ নিজ মন মুকুর সুধার
করি বর্ণন রঘুনাথ যশঃ যাহা ফল দায়ক চার
বুদ্ধি তনু জানিয়া স্মরণ করি পবন কুমার
বল বুদ্ধি বিদ্যা দাও হে প্রভু হর মোর ক্লেশ আর মনের বিকার

চৌপাহী
জয় হনূমান জ্ঞান গুণ সাগর।
জয় কপিশ ত্রিলোক উজাগর।
রাম দূত তুমি অতি বলশালী।
অঞ্জনী পুত্র পবন সূত মহাবলী।
মহাবীর যে নাম তব তুমি বজরঙ্গী।
কুমতি নিবার প্রভু, সুমতির সঙ্গী।
কাঞ্চন বরণ তব, বেশ সুবেশা।
কানেতে কুন্তল, কুঞ্চিত কেশা।
হাতে তে বজ্র আর ধ্বজা বিরাজে।
কাঁধেতে মুঞ্জ, উপবীত সাজে।
শঙ্করাংশে জন্ম তব, হে কেশরী নন্দন।
তেজ প্রতাপ তব মহা জগ বন্দন।
বিদ্যাবান তুমি, তুমি অতি চতুর।
রাম কাজ করিবারে, আতুর।
প্রভু চরিত্র শুনিবার রাখ অভিলাষা।
রাম-লখন আর সীতায় দাও ভালবাসা।
সুক্ষ্মরূপ ধরি, অসুর সংহার।
শ্রী রঘুনাথ সকল কাজ সার।
আনি সঞ্জীবনী, সৌমিত্রে বাচাইলে।
রাঘবের মনে তুমি, হরষ আনিলে।
তব কাজে রঘুনাথ মুগ্ধ হইলো।
ভরত ভ্রাতা সম, আলিঙ্গন দিল।
স্বনকাদি  ব্রহ্মাদি, ঋষি মুনি যত।
তব গুন গাহে, নারদ সহিত।
যম কুবের, দিকপাল যেখানে।
কবি কৌবিদ তারে, কহিনা কেমনে।
সুগ্রীব উপকার, ততুমি যে করিলে।
রামে মিলায়ে তারে, রাজপদ দিলে।
তোমারি মন্ত্র যবে, বিভীষন মানিল।
লঙ্কেশ হইল  সে, সারা বিশ্ব জানিল।
সহস্র যোজন দূরে, থাকে যে ভানু।
ধাইলে লইতে তাহা, তুমি বীর হনু।
প্রভুমুদ্রিকা, রাখি মুখ মাঝে।
জলধি লঙ্ঘিলে, রঘুনাথ কাজে।
দুর্গম কাজ যত, জগতে আছে।
সুগম যে হয় তাহা তোমারি কাছে।
তুমি  যে দ্বারী, রাম দুয়ারে।
আজ্ঞা বিনা কেহ, প্রবেশিতে নারে।
তোমারি স্মরণে যে, সব সুখ পা-ই।
রক্ষক হ’লে তুমি, কোন ভয় না-হি।
মহাতেজ তেজবনিকর জবে আপনারে।
ত্রিলোক যে কাঁপে, তব বিকট হুঙ্কারে।
ভূত পিশাচ, নিকট নাহি আসে।
তব নাম লয় যে, থাক তার পাশে।
নাশ করহ সব রোগ, হরহ সব পীড়া।
যে জন নিরত জপে, হনুমান বলবীরা।
সব সঙ্কট কর মোচন, তুমি বীর হনুমান।
মন ক্রম বচনে, ধরে যে ধ্যান।
সর্বোপরি রাম রাজার যে তপস্বী রূপ।
তাহার সকল কাজ কর তুমি  অনুপ।
যে কোন মনোরথ, যে জন করিবে।
তোমারি কৃপায় সে, অমিত ফল পাবে।
চারি যুগ তব, প্রতাপ-বাখানি।
জগতে খ্যাত তুমি, তাহা যে জানি।
সাধু সন্তের, তুমি রক্ষা কারি।
অসুর নিকন্দন, তুমি দুঃখ হারি।
অষ্ট-সিদ্ধি আর, নয়-নিধির দাতা।
আশীষ-করিলা তোমা, জানকী মাতা।
রাম রসায়ন, তোমারি পাশে।
রুঘুপতি সম মনে, রেখো এ দাসে।
তোমারি ভজন  গাহি, রাম পদ লভি।
জনম জনম ভুলি, দুঃখ যে সবই।
অন্তিম কালে স্থান, দিও রঘুবর পুরে।
রাম নাম সেথা যেন, পাই জপিবারে।
রাম নাম জপে যে, সে বড় চতুর
সঙ্কট মোচন হয়, হয় শোক সব দূর।
শোক তাপ মোচন করে, হরে সব পীড়া।
যে জন স্মরণ করে, হনুমান বল বীরা।
জয়-জয়-জয়, হনুমান জ্ঞান গোঁসাঈ ।
কৃপা করহ দেব, ভাঁতি  গুরু ভাই।
যে জন নিত্য পাঠ করে, হনুমান চালিশা।
মহাসুখ পায় হে, নাম রটে চহু দিশা।
জয় হনুমান, জয়-জয় মহাবীর।
“তারায়” তারাও প্রভু, এ ভব সাগর।

দোহা
পবন তনয় সম্কট হরণ, মঙ্গল মুরতি রূপ।
রাম লখন সীতা সহ, হৃদয়ে বসহ কপিসূত।
একবার প্রেমা-বেগে-বল।
সীতাপতি শ্রী রামচন্দ্রের জয়।
মহাবীর বজরংবলীর জয়।
পবনসুত হনুমানের জয়।

” সঙ্কট মোচন হনুমাস্টক ”
শিশুকালে যবে গ্রাসিলে রবি।
ত্রিলোক হইল আঁধার।
তাহা দেখি ত্রাসিত বিশ্ব সারা।
কেমনে এক সঙ্কট হইব পার।
দেবগন আসি যবে করিল বিনয়।
ছাড়ি দিলা রবি, করিলে উপকার।
কে নাহি জানে সঙ্কট হারি তুমি।
সঙ্কট মোচন নাম তোমার।
বালির ত্রাসে ত্রাসিত কপি সব।
বসে যবে গিরির উপর।
দেখাইলে তাহাদের পথ তুমি।
তুমিই হরিলে বিপদ।
মহাক্রোধে মহামুনি শাপিলে বালিরে।
দ্বিজ রূপে তুমিই তারিলে সে পাথার।
কে নাহি জানে সঙ্কট হারি তুমি।
সঙ্কট মোচন নাম তোমার।
আঙ্গাদ সাথে তুমি গেলে যবে।
সীতা খোঁজে সাগরের পার।
করিলে পন তুমি ফিরিবে না।
না লয়ে সন্ধান সীতার।
আনিলে সন্ধান রাম হৃদে।
করিলে প্রাণ সঞ্চার।
কে নাহি জানে সঙ্কট হারি তুমি।
সঙ্কট মোচন নাম তোমার।
রাবন ত্রাসে ত্রাসিতা  সীতার শোক নিবারিলে।
করিলে উপকার।
মারি নিশাচর অভয় যে দানিলে।
পুলক হইল  সবাকার।
মুদ্রিকা আনি দিলে শ্রীরামের শোক নিবারিলে।
তুমি গুনাধার।
কে নাহি জানে সঙ্কট হারি তুমি।
সঙ্কট মোচন নাম তোমার।
শক্তিবানে যবে লক্ষণ প্রাণ ত্যাজে।
হইলে তুমিই উপকারী।
পেয়ে এলে বৈদ্য সুষেনে গৃহে।
গন্ধমাদন আনিলে উপাড়ি।
আনিলে সঞ্জীবনী লখনে বাঁচাইলে।
হরষ  হইল সবার।
কে নাহি জানে সঙ্কটহারি তুমি।
সঙ্কট মোচন নাম তোমার।
রাবণ রণ আহ্বানিল যবে।
নাগ পাশে বন্ধন হইল সবার।
শ্রী রঘুনাথ সমেত সবে।
মায়া মোহে দেখিল আঁধার।
আনি খগেসে  তুমি কাটাইলে বন্ধন।
করিলে উপকার।
কে নাহি জানে সঙ্কট হারি তুমি।
সঙ্কট মোচন নাম তোমার।
বন্ধু সমেত জবে অহিরাবণ লয়ে রঘুনাথে।
পাতালে করিলা বিহার।
দেবগণে পুজি তুমি হে মহাপ্রভু।
সবে মিলি করি মন্ত্রণা বিচার।
সহায় হইলে তুমি সান্তনা দানিলে।
অহিরাবণে, করিলা সংহার।
কে নাহি জানে সঙ্কটহারি তুমি।
সঙ্কট মোচন নাম তোমার।
কাজ করিলে তুমি দেবগণের।
ধরিলে নাম মহাবীর।
” তারার ” – ও সঙ্কট তারো তুমি প্রভু।
তোমারে যে ডাকি হইয়া অধীর।
ক্লেশ হরো হনুমান মহাপ্রভু।
তুমি যে সঙ্কট হার।
কে নাহি জানে সঙ্কট হারি তুমি।
সঙ্কট মোচন নাম তোমার।

দোহা
লাল দেহ লালিমা লিপ্ত।
আর শোভে লাল লঙ্গুর।
বজ্রদেহ দানব দলন।
জয়-জয়-জয় কপিসুর।
ইতি শ্রী সঙ্কট মোচন হনুমাস্টক সমাপ্তম।

হনুমান আরতী
আরতী কর, আরতী কর, আরতী কর,
হনুমান লাল কী।
দুষ্টদলন, দুঃখ তারন শ্রী রাম দাস কী।
আরতী কর।
যাহারো বলে গিরিবর কাঁপে।
রোগ শোক যার নিকট না ঝাঁকে।
অঞ্জনী পুত্র মহাবলী কী।  আরতী করো।
সাঁধু  সন্তেরো তুমি রক্ষাকারি।
রাম কাজে তুমি মহাবেগধারী।
তোমারি বাহু বলে রামপদ পায় জানকী।
আরতী কর।
লঙ্কা জ্বালি তুমি অসুর সংহারো।
রাম সীতার সকল কাজ সারো।
আনি সঞ্জীবনী প্রাণ সঞ্চারো লক্ষণ  কী ।
আরতী কর।
বাম বাহু তত দানব দলনকারি।
ডান বাহুতে রাখ  লাজ সবার-ই ।
সুর নর মুনি জন গাহে যসঃ তব নাম কী।
আরতী কর।
জয়-জয়-জয় হনুমান মহাবলশালী।
কাঞ্চন থালে সাজায়ে আরতী।
শুভ্র কর্পূর জ্বালি।
করে আরতী মাতা অঞ্জলী হনুমান লাল কী।
আরতী কর….
হনুমান আরতী যে জন নিত্য গাহে।
বৈকুন্ঠবাসী হয়ে অন্তিমে অমর পদ পায়ে।
রাম পদ লভিতে তব নাম গাহে  — “তারা ” —
হে মারুতী।  আরতী কর……

——-সমাপ্ত——-