হরগৌরী স্তোত্র


Image result for hargouri

শঙ্করাচার্য্যকৃত গৌরী ও মহেশ্বরের বন্দনা-একাধারে কবিত্বের, ভাবুকতার, ও ভক্তিপ্রাণতার নিদর্শন। যথা,-
কস্তুরিকাচন্দনলেপনায়ৈ, শ্মশানভস্মাঙ্গবিলেপনায়।
সৎকুণ্ডলায়ৈ ফণিকুণ্ডলায় নমঃ শিবায়ৈ চ নমঃ শিবায় ॥১॥
অর্থ- যাঁর অর্ধেক গৌরীদেহ, কস্তুরিচন্দন বিলেপিত, অপর অর্ধেক হরদেহে শ্মশানভস্মের বিলেপন; অর্ধেক অঙ্গের কর্ণে মনোহর কুণ্ডল শোভিত, অপর অর্ধেকে সর্পকুণ্ডল শোভা সম্পাদন করছে সেই শিবা(দুর্গা) এবং শিবকে প্রণাম করি।
মন্দারমালাপরিশোভিতায়ৈ কপালমালাপরিশোভিতায়।
দিব্যাস্বরায়ৈ চ দিগম্বরায় নমঃ শিবায়ৈ চ নমঃ শিবায় ॥২॥
অর্থ- যাঁর অর্ধেক অঙ্গের গলায় পারিজাত মালা পরিশোভিত অপর অর্ধেক শব-মাথার অস্থি পরিশোভিত, অর্ধেক অঙ্গে দিব্য অন্বর এবং অপর অর্ধেকে দিগম্বর সেই শিবা এবং শিবকে প্রণাম করি।
চলৎকণৎ কঙ্কণ-নুপুরায়ৈ বি ফণাভাসুরনুপুরায়।
হেমাঙ্গদায়ৈ চ ফণাঙ্গদার নমঃ শিবায়ৈ চ নমঃ শিবায় ॥৩॥
অর্থ- যাঁর অর্ধেক অঙ্গে চরণে চঞ্চল শব্দায়মান নূপুর শোভিত, অপর অর্ধেক ভাগে সাপের ফণা চরণের নূপুর হয়েছে, অর্ধেক অঙ্গের হাতে সুবর্ণ বাজু, অপর অর্দ্ধেকে সাপের বাজু সেই শিবা ও শিবককে প্রণাম করি।
বিলোলনীলোৎপল লোচনায়ৈ বিকাশপঙ্কেরুকলোচনায়।
ত্রিলোচনায়ৈ বিষমেক্ষণায় নমঃ শিবায়ৈ চ নমঃ শিবায় ॥৪॥
অর্থ- মুখমণ্ডলে অর্ধেক অংশে যাঁর চঞ্চল নীলপদ্মের ন্যায় ত্রিনেত্র অপর অর্ধেকে বিকশিত পদ্মের ন্যায় নয়ন, সেই ত্রিনয়না এবং অযুগ্মনেত্র(ত্রিনয়ন) শিবা এবং শিবকে প্রণাম করি।
প্রপন্নপ্রষ্ঠৈ সুখদাশ্রয়ায়ৈ ত্ৰৈলোক্যসংহারক তাগুবায়।
কৃতস্মরায়ৈ বিকৃতস্মরায় নমঃ শিবায়ৈ চ নমঃ শিবায় ॥৫॥
অর্থ- যিনি অর্ধেক অঙ্গে আশ্রিত সিংহ পীঠে সুখাসীণা অপর অর্ধেকে ত্রৈলোক্য সংহারের জন্য তাণ্ডবনৃত্য করছেন, অর্ধেক অঙ্গে কামের রচয়িত্রী,- অপর অর্ধেকে কামের সংহার কর্তা সেই শিবা ও শিবকে প্রণাম করি।
চাম্পেয়গৌরার্দ্ধশরীরকায়ৈ কর্পূরগৌরার্দ্ধশরীরকায়।
ধন্মিল্লবত্যৈ চ জটাধরায় নমঃ শিবায়ৈ চ নমঃ শিবায় ॥৬॥
অর্থ- যাঁর দেহের অর্ধেক চম্পক-কুসুমের ন্যায় গৌরবর্ণ অপর অর্ধেক কর্পূরবৎ শুভ্র, অর্ধেকভাগে কেশপাশে করবী ধারণ করেছেন, অপর অর্ধেকে জটা(অথবা গঙ্গা) প্রবম্বিত সেই শিবা ও শিবকে প্রণাম করি।
অন্তোধর শ্যামলকুন্তলায়ৈ বিভূতিভূষাঙ্গ জটাধরায়।
জগজ্জনন্যৈ জগদেকপিত্রে নমঃ শিবায়ৈ চ নমঃ শিবায়॥৭॥
অর্থ- যাঁর মস্তকে অর্ধেক অংশ নবীন মেঘের ন্যায় কৃষ্ণবর্ণ কেশদাম অপর অর্ধেকে জটাবিভূতি শোভিত সেই জগজ্জননী এবং জগতের একমাত্র পিতা শিবা ও শিবকে প্রণাম করি।
সদাশিবানাং পরিভূষণায়ৈ সদাশিবানাং পরিভূষণায়।
শিবান্বিভায়ৈ চ শিবান্বিতায় নমঃ শিবায়ৈ চ নমঃ শিবায় ॥৮॥
অর্থ- শিবাগণ যাঁর ভূষণরূপে বিরাজমান এবং যিনি শিবা পরিব্যাপ্ত অথবা কেবল মঙ্গলই যার ভূষণ এবং যিনি মঙ্গলব্যাপ্ত সেই শিবশিবান্বিত মূর্ত্তি অর্থাৎ হরগৌরীকে বারবার প্রণাম করি।
ইতি- জগতগুরু শংকরাচার্য্যকৃত হরগৌরী স্তোত্র।
প্রথম শ্লোকের প্রথম চরণের প্রথমার্দ্ধে ‘কস্তূরিকাচন্দনলেপনায়ৈ’ এবং দ্বিতীয় চরণের ‘সৎকুণ্ডলায়ৈ’  ও ‘শিবায়ৈ’ শব্দদ্বয়, কস্তূরিচন্দনবিলেপিত কনককুন্দলবিভূষিত অর্থে, দেবী গৌরীর বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হয়েছে। ‘শ্মশানভস্মাঙ্গবিলেপনায়’, ‘ফণিককুণ্ডলায়’ ও ‘শিবায়’ শব্দত্রয়ে মহাদেবের চিতাভষ্মের বিষয় ও ফণিকুগুলীর বিষয় বুঝা যাচ্ছে। এরকম প্রতি শ্লোকের অৰ্দ্ধেকে মহাদেবের বিষয় বলা হয়েছে। হরগৌরী স্তোত্রে হরগৌরীর ভেদ-ভাবের মধ্যে যে অভেদ-ভাবের বীজ নিহিত রয়েছে। 
নিবেদনে- #কৃষ্ণকমল