আলোচনা শুরু করছি হিন্দু দর্শন নিয়ে। আমরা জানি হিন্দু ধর্মে অনেক দর্শনের সমন্বয় ঘটেছে, কেউ বৈষ্ণব, কেউ শৈব, কেউ শাক্ত। তবে আমরা মূল নিয়ে আলোচনা করবো । এই সিরিজে আসবে দ্বৈতবাদ, দ্বৈতাদ্বৈতবাদ, অদ্বৈতবাদ ও মায়াবাদ। এগুলো সনাতন ধর্মের একদম মূল কিছু দর্শন। তবে আমি বিশ্বাস করি দর্শন শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ধর্মের না। সকল ধর্মই এখানে আসতে পারে। অন্য ধর্মের সান্নিধ্যতা বা মিল এখানে আসবে।
আজকে সবচেয়ে সহজ ও সহজবোধ্য দর্শন নিয়ে আলোচনা করবো তা হচ্ছে দ্বৈতবাদ। এটাকে সহজ এজন্যই বললাম যে আমাদের স্বাভাবিক জীবনব্যাবস্থা ও ঈশ্বরদর্শনের সাথে এর অনেক মিল। দ্বৈতবাদ সহজ কথায় অর্থ করলে এটা দাড়াচ্ছে দুইটি সত্তা। হ্যা এখানে দুইটি পক্ষ থাকবে। একপক্ষ দানকারী আর অপরপক্ষ হচ্ছে ভক্ত। যেমন ঈশ্বর হচ্ছে আলাদা একটা সত্তা। আর আমরা ভক্তরা আলাদা সত্তা। আমরা সব সময় ঈশ্বরের কাছে তার করুনা , দয়া চাই। সে হচ্ছে বিন্দু আমরা বৃত্তের চারপাশে তাকে কেন্দ্র করে ছুটে চলছি। মূল কথাই হচ্ছে এখানে ঈশ্বর ও ভক্ত সম্পূর্ণ আলাদা একটা সত্তা। পৃথিবী তথা ব্রক্ষ্মান্ড মানুষ থেকে আলাদা। প্রকৃতি ও পুরুষ একে আপর থেকে আলাদা। একটা পক্ষ অপর পক্ষের সান্নিধ্য পাবার জন্য আকুল থাকে। এবং ভক্ত যখন ঈশ্বরের সান্নিধ্য পাবে তখনই এর পূর্নতা পাবে। দর্শনটা অনেক চেনা ও সহজ লাগছে তাইনা। হ্যা এটা স্বাভাবিকভাবে প্রায় সব ধর্মেই চলে যেমন ইসলাম,খ্রিষ্টান প্রভৃতি। ইসলাম ধর্মে যেমন আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে নামায রোজা করা হয়, তেমনি হিন্দু ধর্মেও আমরা পূজা, অর্চনা, প্রার্থনা যা করি তার প্রায় সবই এই দর্শন অনুসারে। মূলত এটা সাধারণ একটা দর্শন। যার সাথে আমরা পরিচিত। তবে হিন্দু ধর্মে এর পরবর্তী কিছু দর্শন আছে কিন্তু এটা ধারণ না করতে পারলে অন্যগুলো হবেনা তাই এ সম্পর্কে আরো কিছু শ্লোক উদ্ধৃতি করছি। ঋতং পিবন্তৌ সুকৃতস্য লোকে গুহাম্প্রবিষ্টৌ পরমে পরার্ধে। — কঠোপনিষৎ ৩।১ — শরীরের পরম উৎকৃষ্ট স্থানে গুহামধ্যে দুইজন প্রবিষ্ট হইয়া আছেন, তন্মধ্যে একজন অবশ্যম্ভাবী কর্মফল ভোগ করেন, অপর একজন তাহা প্রদান করেন। জীবসংজ্ঞোহন্তরাত্মান্যঃ সহজ সর্বদেহিনাম্। যেন বেদয়তে সর্বং সুখং দুঃখঞ্চ জন্মসু।। –মনুসংহিতা, ১২।১৩ –অন্তরাত্মা নামে একটি স্বতন্ত্র আত্মা প্রত্যেক ব্যাক্তির দেহের সঙ্গে জন্মে, তাহাই সুখ-দুঃখ অনুভব করিয়া থাকে। দ্বাবিমৌ পুরুষৌ লোকে ক্ষরাশ্চাক্ষর এব চ। ক্ষরঃ সর্বাণি ভূতানি কুটস্থোহক্ষর উচ্যতে।। উত্তমঃ পুরুষস্ত্বন্য পরমাত্মেতু্যদাহৃতঃ। যো লোকত্রয়মাবিশ্য বিভর্ত্যব্যয় ঈশ্বরঃ।। — গীতা, ১৫।১৬,১৭ –লোকে দুই প্রকার পুরুষ প্রসিদ্ধ আছে, এক ক্ষর অন্য অক্ষর। সকল পদার্থ ক্ষর আর কুটস্থ (জীবাত্মা) পুরুষ অক্ষর বলিয়া উক্ত হন। কিন্তু অন্য (ক্ষর ও অক্ষর হইতে অতিরিক্ত) এক পুরুষ আছেন, তিনিই উত্তম পুরুষ, তিনিই পরমাত্মা শব্দের বাচ্য। তিনিই ঈশ্বর এবং তিনিই ত্রিলোকের মধ্যে প্রবিষ্ট থাকিয়া এই ত্রিলোককে পালন করেন। আশা করি উপরের আলোচনাতে দ্বৈতবাদ সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পেরেছি আমরা। হিন্দু ধর্মে অনেক মত আছে এটা সত্য তবে সেই মতের পালনকারীকে ও বিভেদ করে দেওয়া হয়েছে। জগতে উত্তম, মধ্যম ও অধম ভেদে তিন প্রকার অধিকারী আছে। যাহারা অধম ও মধ্যম অধিকারী তাদের জন্য এই পথই সর্বোত্তম পথ। তাদের জন্যই ই উপাসনার বিধান করা হয়েছে। উপাস্য ও উপাসক না হলে উপাসনা হইতে পারেনা। সুতরাং ধর্মের প্রথম স্তরের সাধকগণের ভক্তি আকর্ষণ ও কর্মযোগে প্রবৃত্ত করানোর জন্যই শাস্ত্রে দ্বৈতবাদমূলক উপদেশ করা হয়েছে।
আগামী পর্বে বাকী গুলো ধীরে ধীরে আলোচনা করবো আশা করি।
অধ্যাত্মবিজ্ঞানের এই শ্রেষ্ঠ মতটি হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈনধৰ্ম কর্তৃক জগতে প্রচারিত। সেদিনকার খ্ৰীষ্ট ও মুসলমানধৰ্ম এ মতটা হৃদয়ঙ্গম করতে অক্ষম। গ্ৰীসদেশে মহাত্মা প্লেটো ও নিজপুস্তকে এই শ্রেষ্ঠ মত প্রচার করেন। আধুনিক জড়বাদী, স্থুলদর্শী বিজ্ঞান এই মত আদৌ গ্রহন করে না; কারণ ইহার মতে তোমার অস্তিত্বের ন্যায় এই প্রত্যক্ষ পরিদৃশ্যমান জগতের অস্তিত্ব সকলের নিকট সত্য, মহাসত্য এবং কদাচ মিথ্যাজ্ঞানসম্ভুত হইতে পারে না।
বেদান্তের মায়াবাদের প্রকৃত তাৎপৰ্য্য অতীব দুরূহ। অনেক পণ্ডিত মায়াবাদ ব্যাখ্যা করার সময় দৃষ্টান্ত দেন, যেমন অন্ধকারে রজুদর্শনে সর্পভ্রম হয়, তারপরে রজ্জুজ্ঞান হইলে অলীক সর্পজ্ঞান মন হতে দূরীভূত হয়, সেইরূপ সংসারে পরমার্থ জ্ঞান হইলে সংসারের যাবতীয় মায়াজ্ঞান মন হতে দূরীভূত হয়; তখন সংসারের কোন ভেদাভেদজ্ঞান থাকে না এবং সকলই ব্ৰহ্মময় বলে বোধ হয়। তাঁহাদের মতে, ইহাই মায়াবাদের প্রকৃত তাৎপর্য্য। কিন্তু জৈন ও বৌদ্ধপণ্ডিতগণ এর ব্যাখ্যা করেন নিজের ধর্ম মত অনুসারে। যাহা হউক, এস্থলে মায়াবাদের প্রকৃত তত্ত্ব উদঘাটন করা কর্তব্য।
শাস্ত্রে মায়াশব্দ দুই প্রকার অর্থে ব্যবহৃত। ইহার প্রথম অর্থে অতিরিক্ত মোহ বুঝায়; যেমন দেহ, পুত্র, কলাত্রাদি সংসারের ক্ষণভঙ্গুর বিষয়ে মানব-মন স্বভাবতঃ মায়ায় মুগ্ধ। এ মায়াবন্ধন ছেদন করা ইহার পক্ষে অনেক সময় দুঃসাধ্য বটে, কিন্তু সংসারে বৈরাগ্য উপস্থিত হলে, ইহা অপেক্ষাকৃত সহজ সেইরূপ সংসারের যাবতীয় অনিত্য মিথ্যাজ্ঞান লাভ করতঃ পরব্রহ্মকে ভুলে গিয়ে সকল বিষয়ে আমার আমার যে মিথ্যাজ্ঞান মনে উদয় হয়, তাহাও এর মায়াজ্ঞান। শাস্ত্রোক্ত পরমহংসমার্গ অবলম্বন করিলে এ মায়াজ্ঞান দূরীভূত হইতে পারে।
মায়াশব্দের দ্বিতীয় অর্থে মহামোহ বুঝায়, যা ছেদন করা মনের পক্ষে একেবারে সম্পূর্ণরূপ অসাধ্য। পরমহংস হউন, যোগী হউন, গৃহস্থ হউন, এ মহামায়ার মহা বন্ধন মানব কোনকালে এ জগতে ছেদন করতে পারে না। যতদিন তিনি স্থুলদেহ ধারণ করিয়া ইহলোকে বা জীবনের এই সমতল ক্ষেত্রে (this plane of existence ) বাহ্যজগতের সহিত বিবিধ সম্বন্ধে সম্বদ্ধ হয়ে বিচরণ করেন, ততদিন যে মহামায়ার মহাবরণে তিনি মুগ্ধ, সে মহাবরণ তিনি কদাচ ভেদ করিতে পারেন না। এ মহামায় তাহার অস্তিত্বের মূলে সংলগ্ন। এ স্থুলদেহ সৰ্ব্বজ্ঞ মায়াতীত আত্মার মায়াদেহ মাত্র। এ মায়াদেহে নিবদ্ধ(বদ্ধ, আটকানো) হইলেই আত্মা মায়ামুগ্ধ হয় এবং বাস্তব পদার্থ বুঝতে পারে না। এ মায়াদেহ ত্যাগ করলে, ইহসংসারের যাবতীয় মায়াজ্ঞান হতে আত্মা ও নর্মুক্ত হয়। এজন্য বিশ্বব্যাপারের ঘাহা কিছু আমাদের নয়নগোচর হয়, তার সমস্তই মিথ্যাজ্ঞানসম্ভুত, তাহ সংবৃতি(লুকায়িত বা আচ্ছাদিত)মূলক (relative); কিন্তু বস্তুত: উহারা কি, উহাদের বাস্তবরূপ কি, তা আমরা অবগত নই: এবং কোনকালে অবগত হইব না।
এই যে অন্ধকারে পথে যেতে যেতে তুমি একখণ্ড রজ্জ্ব অবলোকন করতে করতে সর্পভ্রমে ভয়বিহবল হয়ে পিছনে ফিরে আস, পরে উহাকে ভালরূপ নিরীক্ষণ করাতে তোমার সর্পভ্রম দূর হয় এবং সেইসঙ্গে তোমার মনও সুস্থির হয়; এই যে রেলগাড়িতে যাইতে যাইতে তুমি চতুর্দিকস্থ বৃক্ষসমূহকে চলায়মান দেখ,পরে সামান্য পর্যালোচনা করে বুঝতে পার, যে গাড়ির গতিবশতঃ বৃক্ষ গুলি বিপরীতদিকে চলায়মান; আবার যখন তুমি ভাবতে থাক, ধরিত্রী স্বয়ং উহার পৃষ্ঠস্থ যাবতীয় পদার্থ ও চতুদিকস্থ বায়ুরাশি লয়ে আকাশপথে অসীমবেগে ভ্ৰাম্যমান, তারজন্য প্রতিদিন সূৰ্য্যকে প্রাতঃকালে, পূৰ্ব্বদিকে উদয় হতে ও পশ্চিম দিকে অস্ত যাইতে দেখ এবং রাত্রিকালে আকাশস্থ যাবতীয় নক্ষত্রমণ্ডল ধ্রুবতারার চতুর্দিকে পরিভ্রমণ করতে দেখ; এই যে একজন পথিক মরুভূমিতে যাইতে যাইতে পিপাসায় আতুর হয়ে পুরোভাগে জলাশয় দেখে এবং জলপানার্থ যেমন উহার দিকে ধাবমান হয়, অমনি জলাশয়টি আরও দূরে পলায়ন করে; এখন জিজ্ঞাসা এ সকল দৃশ্যপটল তোমার মনে কিরূপ বোধ হয় ? এরা কি তোমার মায়ামুগ্ধ মনের মায়াজ্ঞান, না এরা তোমার চোখের ভ্রান্তিদর্শন ? এরা তোমার ভ্রান্তিদর্শন মাত্র এবং কখনোই মায়াজ্ঞাম নয়। এরূপ ভ্রান্তিদর্শন উৎপাদনে যে মহামায়ার কথা উপরে লিখিত, উহার কিছুমাত্র অনুশাসন নাই। এ সকল কেবল আমাদের দর্শনশক্তির ভ্রান্তিমাত্র। অল্পমাত্র জ্ঞান লাভেই এরূপ ভ্রাস্তির দূরকরণ হয়।
কিন্তু এই যে অশ্বখ বৃক্ষটি যা বিশাল ও বহুবিস্তৃত শাখা প্রশাখা লইয়া তোমার সামনে দাড়িয়ে আছে, যার প্রতিকৃতি তোমার নয়ন অভ্যন্তরে বিপরীতভাবে প্রতিবিম্বিত এবং যার রূপ তুমি যাবজ্জীবন একরূপ দেখে থাক, ইহা তোমার মায়ামুগ্ধ মনের মায়াজ্ঞান। প্রকৃতি ঐ বৃক্ষের সাথে তোমার চক্ষু ও মনের যেরূপ সম্বন্ধ স্থিরীকৃত করিয়া দেয়, তাহাতে তুমি উহাকে চিরদিন একরূপ দেখ। আলোক যোগে বৃক্ষটির যেরূপ প্রতিবিম্ব তোমার নয়নদ্বয়ে পতিত হয়, অধ্যাসবশতঃ তুমি উহার চিরপরিচিত রূপটা নয়নগোচর কর এবং বাহ্যজগতে উহার অবস্থিতি অনুভব কর। তুমি কখনো বলতে পার না, যে উহার বাস্তবরূপ ঠিক ঐ প্রকার। আবার তুমি ঐ বৃক্ষটি যেমন দেখ, একটা পিপীলিকাও যে উহাকে ঐরূপ দেখে, তা ও তুমি বলতে পার না। এতেই কি বোধ হয় না, যে অশ্বথবৃক্ষটির জ্ঞান তোমার মায়াজ্ঞান মাত্র ? সেইরূপ এ জগতের যাবতীয় পদার্থের জ্ঞান আমাদের মায়াজ্ঞান মাত্র। এখন যে মায়ার আবরণে আবৃত হয়ে আমাদের জীবাত্মা এ সংসারে মায়াজ্ঞানলাভ করে, তাহাই মহামায়া।
মায়া দ্বারা চালিত হয়ে আমরা বিশ্ব প্রপঞ্চের যে জ্ঞানলাভ করি, তা আমাদের মায়াজনিত মিথ্যাজ্ঞান, অথচ ইহাই আবার আমাদের মায়াজনিত সত্যজ্ঞান। যতদিন আমরা মায়ায় মুগ্ধ হয়ে এই মায়াময় জগতে অবস্থান করি, ততদিন ঐ মায়াজনিত মিথ্যাজ্ঞানই আমাদের নিকট মহাসত্য জ্ঞানে পূজিত হয়। এতদ্ব্যতীত আমাদের অন্য গতি নেই। এ স্থানে জগৎ মায়াময় এবং আমরাও সকলে সমভাবে মায়ামুগ্ধ; তারজন্য আমরা কখনো ময়াজনিত জ্ঞানকে মিথ্যাজ্ঞান বলে জানতে পারি না। কিন্তু যাহারা মহামায়া হতে মুক্ত, তাঁদের নিকট আমাদের মায়াজনিতজ্ঞান মিথ্যাজ্ঞান বলিয়া বিবেচিত হয়। এখন এ সংসারে এমন লোক অতীব বিরল। পরমহংস হউন, যোগী হউন, মহামায়ার মহামোহ ভেদ করা সকলের পক্ষে সমান অসাধ্য। একমাত্র পরব্রহ্মই মায়াতীত। সেজন্য তাঁহারই নিকট আমাদের যাবতীয় জ্ঞান মিথ্যাজ্ঞান; অথবা যে সকল দেবতা অল্পাধিক মায়ামুক্ত, তাহাদের নিকটও আমাদের এ মায়াজ্ঞান মিথ্যাজ্ঞান মাত্র। দেখ, এই বিশ্বকে তুমি ও আমি যেরূপ দেখি, সকলেই ঠিক সেইরূপ দেখেন; কিন্তু ইহার বাস্তবরূপ কি, তাহা তুমিও জান না, আমিও জানি না এবং বোধ হয় দেবতারাও জানেন না।
এখন দেখা যাউক, আমরা কি প্রকারে সংসারের মায়াজ্ঞানলাভ করি। এ মন্বন্তরে (পুরাণমতে এক এক মনুর অধিকার কাল) পঞ্চেন্দ্রিয়ই মনের দ্বারস্বরূপ এবং পঞ্চেন্দ্রিয়যোগেই মন জগতের যাবতীয় জ্ঞানলাভ করে। পঞ্চেন্দ্রিয়ের মধ্যে চক্ষু আবার সর্বশ্রেষ্ঠ। পদার্থের জ্ঞানলাভে চক্ষুই সৰ্ব্বাপেক্ষ আমাদের অধিক সাহায্য করে। পঞ্চেন্দ্রিয়ের মধ্যে যদি কোন ইন্দ্রিয়ের অভাব হয়, অপরগুলি উহার অভাব পুরণ করতে চেষ্ট পায় ; যেমন অন্ধ ব্যক্তির লাঠি স্পর্শযোগে অনেকস্থানে চোখের কাজ করতে দেথা যায়।
এ সংসারে মানবমন ও চক্ষুর যেরূপ সম্বন্ধ এবং উহাদের যেরূপ প্রকৃতি, তাহাতে তুমি দর্শনশক্তি দ্বারা যাবতীয় পদার্থের একপ্রকার জ্ঞানলাভ কর। যদি কোন কারণে তোমার চক্ষুদ্বয় বিকৃত হয়, পদার্থবিশেষের জ্ঞানও তখন অন্যরূপ হয়। দেখ, গোলাপ ফুলটা তোমার চক্ষে কেমন সুন্দর ও রমণীয়! যদি তোমার চক্ষু বিকৃত হয়ে যায়, তুমি তাকে অন্যরূপ দেখ, অথবা যদি তোমার মন বিকৃত হয়ে যায়, উত্তম চক্ষু সত্ত্বেও তুমি উহাকে অন্যরূপ দেখে থাক। যখন তোমার চক্ষুদ্বয় এই সুবিস্তৃত, পরিদৃশ্যমান জগৎসমক্ষে উল্মীলিত হয় এবং তোমার মনও ঐদিকে ধাবিত হয়, তখন তুমি এর বিচিত্ররূপদৰ্শনে বিমুগ্ধ হও। চক্ষুদ্বয় নিমীলিত করে দেখ, সেই অপরূপ দৃশ্যটা তৎক্ষণাৎ তোমার মানসপট হইতে অন্তহৃত হয়ে যায় এবং জগৎও ঘোরান্ধকারে আবৃত হয়। তখনই তুমি স্পষ্টই বুঝতে পার, এ বিশ্বপ্রপঞ্চ কেবল মায়াময়।
একজন জন্মান্ধকে জিজ্ঞাসা কর, তোমার সন্মুখস্থ বৃক্ষবিশেষের বা জন্তু-বিশেষের স্বরূপ কি প্রকার ? দর্শন ব্যতীত অন্য ইন্দ্রিয়যোগে তাহার মনে ঐ পদার্থ বা জন্তুর যেরূপ জ্ঞান ও স্বরূপ হৃদয়ঙ্গম হয়, তাহাই সেই হতভাগ্য ব্যক্তি উল্লেখ করে। তুমি দণ্ডায়মান হয়ে তাহাকে জিজ্ঞাসা কর, তুমি দণ্ডায়মান আছ, কি উপবিষ্ট আছ ? তোমার বাক্য উচ্চদেশ হতে নিঃসৃত হইতেছে শ্রবণ করিয়া সে ব্যক্তি বলিয়া থাকে, তুমি দণ্ডায়মান আছ। তোমার মায়াজ্ঞান তোমার নিকট যেরূপ সত্য, তাহার মায়াজ্ঞান তাহার নিকটও সেইরূপ সত্য।
জীবজগৎ পৰ্য্যালোচনা করলে দেখতে পাওয়া যায়, অনেক নিকৃষ্টজীবে ইন্দ্রিয়গণ অতি অস্ফুটভাবে বর্তমান; এমন কি, অনেক জীবে এক বা ততোধিক ইন্দ্রিয়ের অভাব দেখা যায়; অথচ সকলেই দেহযাত্রা নিৰ্ব্বাহ উপযোগী যাবতীয় কৰ্ম সুচারুরূপে সম্পাদন করে। প্রকৃতি যাবতীয় জীবজন্তুকে স্ব স্ব অবস্থার উপযোগী করিয়া দেয়। এতে বোধ হয়, সকল জীবের মায়াজ্ঞান বিভিন্ন। যে জীব যে অবস্থায় পতিত, উহার মায়াজ্ঞান সেই অবস্থার উপযোগী। পিপীলিকা একখণ্ড মিষ্টান্ন দেখে অপর পিপীলিকাগণকে কিরূপে আহবান করে, তা আমরা অবগত নই; কেবল পিপীলিকারাই তা বুঝিতে পারে।
তত্ত্ববিদ্যা উপদেশ দেয়, এক এক মন্বস্তরে মানবের এক একটা ইন্দ্রিয় স্ফুরিত; সেজন্য প্রত্যেক মন্বন্তরে তাহার মায়াজ্ঞানও বিভিন্ন। এখন আমরা এই কাৰ্য্যকারণাত্মক বিশ্বের যেরূপ জ্ঞানলাভ করি, পূৰ্ব্ব পূৰ্ব্ব মম্বন্তরে মনুপুত্ৰগণ বোধ হয় অন্তপ্রকার জ্ঞানলাভ করিয়া যান। স্বায়ম্ভব মন্বন্তরে যে মায়াজ্ঞান প্রচলিত, চাক্ষুস মন্বন্তরে তা বিভিন্ন এবং বৈবস্বত মন্বন্তরে তা আরও বিভিন্ন। এস্থলে জড়বিজ্ঞান সাহঙ্কারে যে উপদেশ দেয়, চিরদিন ভৌতিক শক্তি একরূপ, তা আমরা কখনো গ্রহন করিতে পারি না।
অদ্বৈতবাদী বৈদাস্তিক পণ্ডিতদিগের মতে যা সৎ, তা মায়াতীত এবং যা অসৎ, তা মায়াবিশিষ্ট। একমাত্র পরব্রহ্মই সৎ বা সত্যস্বরূপ, এজন্য তিনি বেদে ওঁ তৎসৎ ও সচ্চিদানন্দ বলিয়া কথিত। এই বিশ্ব প্রপঞ্চ মায়াময়, এজন্য ইহা অসৎ, ক্ষণে ক্ষণে ইহা পরিবৰ্ত্তিত এবং ইহাতে ত্রিগুণের অনন্তলীলা প্রকাশিত।
বিশিষ্টাদ্বৈতবাদীদিগের মতে এই কাৰ্য্যকারণত্মক বিশ্বপ্রপঞ্চ, যা আমাদের চৰ্ম্মচক্ষের সমক্ষে প্রত্যক্ষীভূত, তাহাই সৎ বা সত্যস্বরূপ; আর যে সকল বিষয় প্রত্যক্ষ হয় না, তাহাই অসৎ বা মিথ্যা। সৎ ও অসৎ এই দুইটা শব্দের তাৎপর্য্যে এত পার্থক্য থাকায়, সমগ্র হিন্দু শাস্ত্রে যে কত গোলযোগ উপস্থিত, তা এস্থলে বর্ণন করবার “আবশ্যকতা নাই। পরব্রহ্মের মহামায়া দুরত্যয়া। ইহার অনুশাসন পরিহার করা জীবের অসাধ্য।
ত্রিভির্গুণময়ৈর্ভাবৈরেভিঃ সর্ব্বমিদং জগৎ ।
মোহিতং নাভিজানাতি মামেভ্যঃ পরমব্যয়ম্ ॥১৩॥
দৈবী হ্যেষা গুণময়ী মম মায়া দুরত্যয়া ।
মামেব যে প্রপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তি তে ॥১৪॥ (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা সপ্তম অধ্যায়)
“মায়ার ত্রিগুণে সমস্ত জগৎ বিমুগ্ধ, তজ্জন্ত গুণাতীত, মায়াতীত অবিনশ্বর পরমাত্মা যে আমি, অমাকে কেহ জানিতে পারে না। আমার এই গুণময়ী দৈবী মায়া লোকে অতিকষ্টে পরিহার করে। কেবল যাঁহারা আমাকে প্রাপ্ত হন, তাহারাই আমার এই মায়া হইতে উত্তীর্ণ হন।”
যে মহাত্মা অসাধারণ যোগবলে সমাধিস্থ হইয়া মায়ামুগ্ধ দেহের চব্বিশ তত্ত্বের ক্রমশঃ লয় সাধন করতঃ পরব্রহ্মের সহিত নিজ আত্মার মিলন করতে পারেন, তিনিই সমাধির অবস্থার মায়া হতে বিচ্যুত হন। সমাধি ভঙ্গ হলেই তিনি ও পূৰ্ব্বের ন্যায় মায়াবিশিষ্ট অবস্থা প্রাপ্ত হন। কলিযুগের কয়জন লোক সেরূপ যোগাভ্যাস করতে পারেন, বল ? অৰ্দ্ধঘণ্টার জন্য নিমীলিতাক্ষ হইয়া এক প্রাণে, একধ্যানে ঈশ্বরে চিত্ত সমাহিত করতে পারলে, যে তুমি সমাধিস্থ হয়ে মায়ামুক্ত হও, তা কখনো মনে করিও না। চব্বিশতত্ত্বের লয়সাধন করে প্রকৃত সমাধিস্থ হওয়া কত সাধনাসাপেক্ষ, তা মহাত্মাগণই জানেন।
জীবাত্মা মহামায়া দ্বারা অনস্ত কাল চালিত। কেবল যে ইহসংসারে জীবাত্মা ইহাদ্বারা চালিত, এমন নহে; অন্যান্য লোকে ও জীবাত্মা ইহাদ্বারা সম্যক পরিচালিত। যখন নিজ কৰ্ম্মফল কর্তৃক চালিত হয়ে জীব জীবনের বিবিধাবস্থাপন্ন ভিন্ন ভিন্ন সমতলক্ষেত্রে বা ভিন্ন ভিন্ন লোকে পরিভ্রমণ করে, তখনও ইহা এই মহামায়া দ্বারা চালিত হইয়া ভিন্ন ভিন্ন জ্ঞানলাভ করতে থাকে ও ভিন্ন ভিন্ন সুখ ও দুঃখ ভোগ করতে থাকে। যুগযুগান্তরে, কল্পকল্লান্তরে কোটি কোটি বৎসরের পর শিক্ষা ও সংযম দ্বারা ক্রমোন্নত হয়ে যখন জীবাত্মা পরব্রহ্মে মিলিত হয়ে নিৰ্ব্বাণপদ প্রাপ্ত হয়, তখনই ইহা মহামায়া হইতে একেবারে বিমুক্ত হয়। তদ্ভিন্ন সকল লোকে ও সকল অবস্থায় জীবাত্মা মায়া হইতে অব্যাহতি প্রাপ্ত হয় না এবং সুখদুঃখরূপ মহাবৰ্ত্তে পতিত হইয়া ঘুর্ণায়মান হয়।
পাঠক! তুমি আজ কলিযুগে মানবাকারে এই সংসারে বিচরণ করে সংসারের যাবতীয় পদার্থের একপ্রকার জ্ঞানলাভ করতেছ এবং তুমি আজ একপ্রকার প্রাকৃতিক নিয়মাবলি দ্বারা চালিত। হয়ত লক্ষ লক্ষ বৎসর পরে তোমারই জীবাত্মা এই জন্ম বিস্মৃত হয়ে পুনরায় এ জগতে বিচরণ করবে। তখন তোমার জীবাত্মা বিভিন্নপ্রকার ভৌতিক নিয়মাবলি দ্বারা চালিত হবে এবং বিভিন্ন প্রকার জ্ঞানলাভ করবে। কখন বা দেবলোকে, কথন ব৷ তপলোকে, কখন বা জনলোকে, কথন বা সত্যলোকে তোমার জীবাত্মা বিচরণ করবে এবং সকল অবস্থায় একমাত্র মায়া দ্বারা ইহা চালিত হবে। সেজন্য সনাতন হিন্দুধৰ্ম আমাদিগকে এই মহাশক্তি মায়াদেবীর নিকট মস্তক অবনত করিতে উপদেশ দেয়। জগদম্বা মহেশ্বরীই মায়াদেবী। এস, আমরা তাহার শ্ৰীচরণকমলে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান পূৰ্ব্বক সাষ্টাঙ্গে প্রণত হই।
এখন মায়াবাদের উপর আধুনিক উন্নত জড়বিজ্ঞান কিরূপ মতামত প্রকাশ করে, তা ও সকলের জানা উচিত। বিজ্ঞান মায়াবাদের উপর উপহাস ও বিদ্রুপ করে। ইহার মতে মায়াবাদরূপ কতকগুলি কাল্পনিক জ্ঞানে মানবমনকে বিভোর করলে, সংসারের অণুমাত্র উপকার নাই বরং উহাদ্বারা ইহার প্রভূত অনিষ্ট সাধন হয়; কারণ লোকে মায়াবাদ পাঠ করিয়া সংসার উপেক্ষা করিতে শিক্ষা করে মাত্র। অতএব এ সকল মতামত সমাজে যত অপ্রচলিত হয়, সমাজের ততই মঙ্গল। বিজ্ঞানের মতে যে জ্ঞান তুমি মায়াজ্ঞান বা মিথ্যাজ্ঞান বলিয়া উপেক্ষা করিতে শিক্ষা কর, তাহাই তোমার যথার্থ ও সত্যজ্ঞান এবং উহার উন্নতিতে তোমার উন্নতি এবং তোমার সমাজের উন্নতি। অতএব সেই যথার্থ জ্ঞান শিক্ষা করাই জীবনের মুখ্যব্রত হওয়া উচিত। সে জ্ঞানকে কি কখনো মিথ্যাজ্ঞান বলে উপেক্ষা করা যায় ? অধ্যাত্মবিজ্ঞান বলুক, বেদান্ত বলুক, আর যে শাস্ত্র বলুক না কেন, উহাদের বিকৃত উপদেশে কে কৰ্ণপাত করে ? যতদিন তুমি এ জগতে থাক, ততদিন কেবল ঐ মিথ্যা, তথাকথিত মায়াজ্ঞান লইয়াই তোমায় থাকিতে হয়। ঐ মিথ্যাজ্ঞান ত্যাগ করিলে, কোথায় তুমি অন্য সত্যজ্ঞান পাবে ? তবে কেন তুমি মায়াবাদের কুহকজালে পতিত হও? আরও দেখ, বেদান্তের মায়াবাদ দ্বারা লোকে সংসারাশ্রম ত্যাগ করতঃ বন জঙ্গলে গিয়া বাস করিতে শিক্ষা করে এবং সেইসঙ্গে পৃথিবীকে জঙ্গলাকীর্ণ করে। কিন্তু লোকে বিজ্ঞানানুশীলন করিয়া বন জঙ্গল পরিষ্কার করতঃ পৃথিবীকে নন্দনকানন ও প্রমোদোদ্যান করে। তবে কেন এই অত্যুজ্জল বিংশ শতাব্দীতে মায়াবাদের কথা উত্থাপন করিয়া জিহবা অপবিত্র কর ? ঐ সকল অশ্লীল, অশ্রোতব্য কথা যতই পুস্তক হইতে দূরীভূত হয়, সমাজের ততই মঙ্গল।
এখন সমাজে জড়বিজ্ঞানের অধিক প্রতিপত্তি ও সমাদর। অতএব উহারই উপদেশ শিরোধাৰ্য্য করা সকলের কৰ্ত্তব্য।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা : সপ্তম অধ্যায় – জ্ঞানবিজ্ঞানযোগ ভগবান সকল জীবের কল্যাণ চিন্তা করে ঘোষনা করছেন-
[ভগবৎতত্ত্ব কি, কিরূপে তদ্গত-চিত্ত হওয়া যায় – শ্রীভগবান্ স্বয়ং এই অধ্যায়ে তাহা বলিতেছেন ।]
শ্রীভগবান্ বলিলেন – হে পার্থ, ভক্ত সর্বতোভাবে আমার শরণাগত হইয়া (অগ্নিহোত্রাদি যজ্ঞ, দান বা তপস্যাদি কর্মের ফলাশ্রয় না করিয়া) আমাতে মনোনিবেশ-পূর্বক যোগাভ্যাস করিলে বিভূতি, বল, শক্তি ও ঐশ্বর্যাদিসম্পন্ন পুর্ণস্বরূপে (সগুণ ও নির্গুণরূপে) আমাকে নিঃসংশয়ে যেরূপে জানিতে পারিবে, তাহা শ্রবণ কর । ১
অপরোক্ষ অনুভূতির সহিত মদ্বিশয়ক এই জ্ঞান নিঃশেষে তোমাকে উপদেশ দিব । স্বানুভূতির সহিত তাহা লাভ করিলে সংসারে আর অন্য কিছু জ্ঞাতব্য অবশিষ্ট থাকে না । ২
বিদ্রঃ- মায়াবাদ সম্পর্কে শ্ৰীশ্ৰীনাথ ঘোষ বৈজ্ঞানিক হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ থেকে আলোকপাত। মনে রাখবেন, চৈতন্য মহাপ্রভু যে ‘মায়াবাদী’ কথার উল্লেখ করেছেন তা বৌদ্ধ মায়াবাদ কে উদ্দেশ্য করে।
তথ্যসুত্র- শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, বৈজ্ঞানিক হিন্দু ধর্ম, দর্শন সমগ্র।
দাম্পত্য সুখের ভিত্তি হ’ল স্বামী স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক প্রেম-প্রীতি ভালবাসা-বোঝাপড়া। বাসগৃহ গৃহ নহে, গৃহিনীই গৃহ -‘ ন গৃহং গৃহমিত্যাহু গৃহিনী গৃহমুচ্যতে’। নারীর ক্ষেত্রেও তার সংসারের মূল হোল তাহার পতি। উভয়ের মনোবৃত্তি অনুরূপ হইলে দাম্পত্য জীবনে সুখের অভাব ঘটার কথা নয়। সেই কারণেই বিখ্যাত অগলাস্তোত্রের প্রার্থনা – ‘ভার্য্যাং মনোরমাং দেহি মনোবৃত্ত্যনুসারিণীম্।‘ নারীদের মনেও নিশ্চয়ই অনুরূপ প্রার্থনা জাগে।
কিন্তু বাস্তবে সকলের জীবনে এই প্রার্থনা পূর্ণ হয় না। বিবাহের, এমন কি প্রেমজ বিবাহের, অনতিকাল পরেই ব্যক্তিত্বের সংঘাত বাধে। পতি ও পত্নীর মধ্যে মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি হয় ও তা অনেক সময় উভয়ের মধ্যে দুস্তর ব্যবধানে পরিণত হয়, সুখের পরিবর্তে আসে অশান্তি, কোন কোন সময় বিচ্ছেদ।
এখন প্রশ্ন এই যে, জ্যোতিষ কি এই বিষয়ে আমাদের পূর্বেই সাবধান করতে পারে? কোন জাতক বা জাতিকার কোষ্ঠী বিচারে আগেই যদি জানতে পারা যায় যে তাহার দাম্পত্য সুখের যোগ নেই, তা হলে তার বিবাহের আগে সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে এবং ঐ জাতক বা জাতিকার জন্য সম্ভাব্য পাত্রী বা পাত্রের কোষ্ঠী বিচার করে দেখা যেতে পারে যে সেই কোষ্ঠীতে দাম্পত্য সুখের সম্ভাবনা, কি রকম এবং পাত্র বা পাত্রী ও তার পরিবারের লোকজন সম্পর্কে বিশদ খোঁজ খবর নেয়া যেতে পারে।
সাধারণভাবে জন্ম-কুন্ডলীতে লগ্ন হতে সপ্তমভাবে জায়া বা পতি বিচার করা হয়। সপ্তমভাবে যে যে গ্রহের যোগ বা দৃষ্টি, সপ্তমভাবপতি, সপ্তমভাবপতি যে যে রাশি ও নবাংশে অবস্থিত সেই সেই রাশি ও নবাংশের অধিপতি, সপ্তমভাব ও পত্নীর কারকগ্রহ শুক্র, শুক্র অবস্থিত রাশি হতে সপ্তম রাশাধিপতি – পতি-পত্নী ও বিবাহিত জীবনের উপর এই সকল গ্রহেরই প্রভাব আছে। বিবাহিত জীবন বিষয়ে সপ্তমভাবের মত দ্বিতীয়ভাবও বিচার করতে হবে ।
তা ছাড়া, দ্বিতীয়ভাব কুটুম্বস্থান। বিবাহিত জীবনে সাফল্য বা অসাফল্যের পিছনে কুটুম্বদের ভূমিকা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ, পতি পত্নীর উভয় পক্ষেরই। সেই কারণেই বিবাহিত জীবনের জ্যোতিষিক অনুসন্ধানে ধনভাব ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, চতুর্থভাব (সুখ) এবং দ্বাদশ (শয্যা সুখ) ভাবেরও গুরুত্ব আছে।
রাহু ও কেতু ভিন্ন যে গ্রহের স্ফুটাংশ (রাশি ব্যতীত অংশ-কলাদি) সর্বাপেক্ষা কম, সেই গ্রহকেও জায়া কারক আখ্যা দেওয়া হয়। চরকারকত্বে যে গ্রহ জায়া কারক হিসাবে নির্ণীত হবে, বিবাহিত জীবনে তারও প্রভাব আছে।
স্থির কাকরত্বে শুক্র পত্নীকারক গ্রহ। প্রাচীন গ্রন্থকারেরা সপ্তমভাব, সপ্তমভাবপতি ও সপ্তমপতির নবাংশপতি হতে পতির বিচার করতে বলেছেন।
বিবাহোত্তর জীবনে সুখলাভের সম্ভাবনা বিষয়ে প্রাচীন জ্যোতিষ গ্রন্থাদিতে যা পত্নীসুখ বিষয়ে লিখিত, তা পতিসুখ সম্বন্ধেও প্রযোজ্য।
লগ্নের সপ্তমস্থান শুভ গ্রহের ক্ষেত্র এবং শুভগ্রহ দ্বারা যুক্ত বা দৃষ্ট হলে পত্নীসুখ ও শ্বশুর কুলোদ্ভব সুখ হয় এবং স্ত্রী রূপবতী গুণবতী হয়। বিপরীতে- বিপরীত ফল হয় অর্থাৎ সপ্তমস্থান পাপক্ষেত্র হয়ে পাপগ্রহযুক্ত বা দৃষ্ট হলে ঐ প্রকার সুখ হয় না। শুভাশুভ মিশগ্রহে মিশ্র ফল চিন্তনীয়।
লগ্নাপেক্ষা সপ্তমে বহু পাপগ্রহের অবস্থানে বহু স্ত্রী সত্ত্বেও স্বল্প সুখ এবং বহু শুভগ্রহের অবস্থানে একটি স্ত্রী হলেও বিশেষ সুখ হয়। পতির কুন্ডলীতে লগ্নপতি ও সপ্তমপতি যে গ্রহের ক্ষেত্রে ও নবাংশে অবস্থিত, সেই গ্রহের ক্ষেত্রে বা নবাংশে স্ত্রীর জন্ম হলে সেই পত্নী স্বামীর সুখদায়িনী হয়ে থাকে। পতির জন্মকুন্ডলীতে চন্দ্র যে রাশিতে অবস্থিত, সেই রাশির সপ্তমরাশিদর্শী গ্রহের বা তদরাশি স্থিত গ্রহের ক্ষেত্রে যদি স্ত্রীর জন্ম হয়, তাহা হলে সেই স্ত্রী পতিপ্রিয়া হয়।
নারীর জন্মকুন্ডলীতে দ্বিতীয়, সপ্তম ও দ্বাদশপতি বৃহস্পতি দৃষ্ট এবং কেন্দ্র কোনস্থ হলে, অথবা সপ্তমপতির দ্বিতীয়ে, সপ্তমে বা একাদশ স্থানে শুভ গ্রহের অবস্থানে জাতক/ জাতিকা স্ত্রী/ পতি পুত্র সুখে সুখী হয়।
চন্দ্র ও লগ্ন হতে সপ্তমভাব যদি নবমপতি বা স্বীয় পতি বা শুভগ্রহ যুক্ত/দৃষ্ট হয়, তাহা হলে সপ্তমভাবের শুভ হয় এবং সেক্ষেত্রে বিবাহিত জীবন সুখের হওয়া উচিত।
সপ্তমভাব যদি সমরাশি হয়, সেই রাশ্যধিপতি ও শুক্র যদি সমরাশিস্থিত হয় এবং পঞ্চম ও সপ্তমভাবের অধিপতিদ্বয় বলবান হয় ও অস্তমিত না হয়, তাহা হলে স্ত্রীপুত্র সুখ হয়।
কোন নারীর জন্মকুন্ডলীতে যদি
ক) লগ্ন বা লগ্নপতি ও চন্দ্র সমরাশিস্থিত এবং শুভগ্রহ যুক্ত, অথবা
খ) চন্দ্র, লগ্ন ও চতুর্থভাব যদি শুভ গ্রহ যুক্ত বা দৃষ্ট, বা
গ) লগ্নাপেক্ষা ত্রিকোণে (লগ্নে, পঞ্চমে, নবমে) শুভগ্রহেরা অবস্থিত, অথবা যদি সপ্তমভাব ও ঐ ভাব নবংশের অধিপতি শুভগ্রহ হয়, তাহা হলে সেই নারী গুণবতী ও সৌভাগ্যবতী হয়। পতিসুখ না পেলে সেই নারীকে সৌভাগ্যবতী বলা যাবে না, সুতরাং এই সকল যোগে পত্নী পতিসৌখ্যলাভ করে।
পত্নীর পতিপ্রিয়া হবার আরও কয়েকটা যোগ —-
ক) লগ্ন সমরাশিতে এবং মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্র অতীব বলবান,
খ) লগ্নের নবাংশপতি শুভ গ্রহ
গ) লগ্নে শুক্র ও চন্দ্র বা বুধ ও চন্দ্র বা বুধ ও শুক্র অথবা শুভগ্রহ থাকলে,
ঘ) সপ্তমে একাধিক শুভগ্রহ বা পূর্ণচন্দ্র থাকলে,
ঙ) গুরু, শুক্র, বুধ ও চন্দ্র সকলেই লগ্নকে পূর্ণদৃষ্টি দিলে,
চ) লগ্ন থেকে কেন্দ্র কোণে বৃহস্পতি, বিশেষতঃ স্বগৃহে বা তুঙ্গ রাশিতে,
ছ) অষ্টমভাব থেকে নবমে এবং লগ্ন হতে নবমে শুধুমাত্র শুভ গ্রহের অবস্থান,
জ) লগ্ন ও রাশি শুধুমাত্র শুভগ্রহ দ্বারা দৃষ্ট।
দাম্পত্য সুখ বিচারে পতি-পত্নীর মিত্রতা-বৈরিতা বিচার ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। বিবাহে পাত্র-পাত্রীর কোষ্ঠীর মিল দেখার জন্য প্রচলিত যে অষ্টকূট যোটক বিচার পদ্ধতি জ্যোতিষীরা প্রয়োগ করে থাকেন, তাহা মূলতঃ বর ও কন্যার মানসিক সম্প্রীতি নির্ণয়ের প্রচেষ্টা। এই পদ্ধতির যৌক্তিকতা এবং প্রয়োগ সিদ্ধতা সম্বন্ধে আমার সন্দেহ আছে। এক্ষেত্র ঐ পদ্ধতির অষ্টকুটের অন্যতম কুট, বর ও কন্যার উভয়ের রাশির অধিপতির মিত্রতা, ভাবী স্বামী-স্ত্রীর মানসিক সৌখ্যের অন্যতম নির্ণায়ক হিসাবে গণ্য হতে পারে। তবে এ’ছাড়া উভয়ের চন্দ্রস্থিত নবাংশ পতিদ্বয়ের এবং উভয়ের চন্দ্রস্থিত রাশির অধিপতির দ্বয়ের যে যে নবাংশে অবস্থিত সেই নবাংশ পতিদ্বয়েরও মিত্র আছে কিনা দেখা প্রয়োজন, থাকলে ভাবী বর বধুর মানসিক সম্প্রীতি বুঝতে হবে, না থাকলে সম্প্রীতির অভাব বুঝতে হবে।
দাম্পত্য সম্প্রীতি বা পতি-পত্নীর পরস্পর মিত্রতা-শত্রুতা বিষয়ে নানা যোগের উল্লেখ করার সময় অনেক সময় দাম্পত্যসুখের অভাবের যোগের কথাও বলা হয়েছে, তবে দাম্পত্য সুখের অভাব সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু যোগ —
১) শুক্র অবস্থিত রাশি হতে সপ্তমে পাপগ্রহের অবস্থান বা শুক্র পাপযুক্ত,
২) চন্দ্র সপ্তমস্থ, সপ্তমপতি ব্যয়স্থ এবং শুক্র দুর্বল,
৩) দ্বাদশপতি লগ্নে বা সপ্তমে,
৪) ব্যয়াধিপ শত্রু নবাংশে নীচ নবাংশে. অষ্টমভাব-নবাংশে বা ষষ্ঠাষ্টমে স্থিত,
৫) শুক্রের ত্রিকোণে অর্থাৎ পঞ্চমে বা নবমে শনির অবস্থান,
৬) সপ্তমে শনির অবস্থান,
৭) সপ্তমপতি পাপ নবাংশে, বা নীচ নবাংশে,
৮) ক্রুর ষষ্ঠাংশে,
৯) শুক্র নীচ নবাংশে,
১০) সপ্তমপতি রবির রাশিতে অর্থাৎ সিংহে এবং রবি পাপগ্রহের রাশিতে বা নবাংশে এবং পাপগ্রহ যুক্ত,/দৃষ্ট,
১১) চন্দ্রের রাশিতে সপ্তম পতি ও চন্দ্র পাপ নবাংশে,
১২) স্ত্রীজাতকের সপ্তমে বা অষ্টমে পাপগ্রহ, বিশেষতঃ সপ্তমে একাধিক দুর্বল পাপগ্রহের অবস্থান, অথবা সপ্তমে পাপগ্রহ দৃষ্ট রবি স্থিত হলে।
দাম্পত্য সুখ বা সুখের অভাব সম্বন্ধে নির্দিষ্ট কিছু যোগের উল্লেখ এই প্রবেন্ধে করা হল, তবে কোন দম্পতির জীবনে সুখ বিষয়ে সিদ্ধান্ত করার জন্য, শুধুমাত্র এই যোগগুলি বা এই ধরণের যোগের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করা যাবে না-উভয়ের কোষ্ঠীর সামুহিক মূল্যায়ন, যোগকারী গ্রহের এবং চন্দ্র ও শুক্রের বলাবল ও শুভাশুভত্ব বিবেচনা করতে হবে।
“ধর্ম্ম’ শব্দটি অভিধানিক মতে ধৃ ধাতু নিস্পন্ন। ধৃ ধাতুর অর্থ ধারণ করা। (ধৃ+ম) এবং ‘ম’ শব্দের অর্থ মণিবন্ধ বা আজ্ঞাচক্র। অর্থাৎ আজ্ঞাচক্র স্থানে (মস্তকে ভ্রূ যুগলের মধ্যবর্ত্তী ও নাসামূল সংলগ্ন স্থান) অবস্থান করেন যিনি। এই ব্রহ্মাণ্ড ধারণ করে আছেন যিনি তিনিই ধর্ম্ম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ধারণ করেন কে ? এই ধারণ শব্দ নিয়ে অনেক তর্ক হতে পারে, যেমন আমি সৎ ভাবে যা ধারণ করি তাই ধর্ম্ম। আমিই যদি ধারক হই তাহলে আরও কতগুলি নতুন প্রশ্ন দেখা যায় যথা-
‘আমি’ কে ? সৎ কি ? কিভাবেই ধারণ করা যায় ? ভোগায়তন রূপ এই জড় ও নশ্বর দেহই যদি পদবাচ্য হয়, তাহলে সেই ক্ষেত্রে নতুন আর একটি প্রশ্নের উদয় হয়। যেমন এই দেহরূপী আমিই যদি ধারক হয় তাহলে এই দেহরূপ আমাকেই বা কে ধারণ করে ? আর আমার (দেহের আমির) ধারণ ক্ষমতাই বা কি ? বা কতটুক ? এই দেহও মরণশীল বা পচনশীল। অথচ শাস্ত্র বলছে ঈশ্বর অমর অক্ষর অনন্ত অব্যয় অবিনশ্বর সর্ব্বগত নিত্য এবং সনাতন। আমি তো এর কোনটাই নই, তবে দেহরূপী আমি কোন কিছু ধারণ করি এমন সাধ্যই বা কি ? সাধ্য ও ক্ষমতা এক্ষেত্রে কোনটাই আমার নেই। কেননা এই আমি প্রকৃতির সেই আমির অভাবে মূল্যহীন মৃতবৎ। তাছাড়া এই আমি যা ধারণ করি সকলই এই জড় জাগতিক ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয় সমূহ। যার নাশ আছে। এই দেহও তেমনি অনিত্য যা আজ আছে কিন্তু কাল প্রভাত পর্যন্ত থাকবে কি না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এই জন্য এই দেহরূপী আমি হচ্ছে নশ্বর। মরণশীল। কাজেই এই আমির ধারণ ক্ষমতাই বা কি ? তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে ধারণ করেন কে ? উত্তর আবার সেই একই শব্দ ‘আমি’। কে এই আমি ? কোন বাড়ী যেমন আমি পদবাচ্য হতে পারে না, কেন না বাড়ীর ভিতর যিনি বাস করেন তিনি যেমন আমি পদবাচ্য তেমনি এই দেহও আমি পদবাচ্য হতে পারে না। এই দেহরূপ যিনি পুরুষ রূপে শয়ন করে আছেন তিনিই প্রকৃত আমি পদবাচ্য। এই পুরুষ তার শয়নরূপ স্থিতাবস্থা দ্বারা দেহরূপ পুর বা ব্রহ্মাণ্ড (যা তার লীলাক্ষেত্র) কে ধারণ করে রেখেছেন। তাই বলা হয় ঈশ্বর সর্ব্বঘটে বিরাজমান। ঘট ঘটমে বিরাজে। এই দেহরূপ ঘটই হচ্ছে ক্ষুদ্র ব্রহ্মাণ্ডস্বরূপ।
ব্রহ্মাণ্ড = (ব্রহ্ম + অণ্ড)। ব্রহ্ম = যে নিজে করে ও অন্যকে করায়, বৃংহতি বৃহয়তি যৎ তৎব্রহ্ম। অথবা বৃহত্ত্বাৎ ব্রহ্ম উচ্যতে। বৃহত্তর অবস্থাই ব্রহ্ম। অণ্ড = (জড়দেহ) বা বীজ। অর্থাৎ প্রকাশ অবস্থায় বা ব্যক্তাবস্থায় ব্রহ্মের বীজ আধার রূপে এই দেহই ব্রহ্মাণ্ড বা ব্রহ্মের দেহ। যা আছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে তা আছে এই দেহভান্ডে। অতএব, যিনি এই ক্ষুদ্র ব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গে সমস্ত চরাচর ধারণ করে আছেন তিনিই আমি রূপী ধর্ম্ম পদবাচ্য। দেখা যাক ধর্ম্ম শব্দের অক্ষর বিন্যাস ও তার তাৎপর্য্য। ধর্ম্ম = ধ + র + ম + ম। চারিটি বর্ণ বা অক্ষর। ধ = ধারণ করা, র = বহ্নিবীজ যা চক্ষে বর্তমান, ম = মণিবন্ধ বা মস্তক, ম = মূলাধার বা কুলকুণ্ডলিনীর অধিষ্ঠান। অর্থাৎ যিনি এই ঘটরূপী দেহের উর্ধে আদিতে আজ্ঞাচক্র স্থানে (মস্তকে) এবং অধিঃ বা অন্তে মূলাধারচক্র স্থানে (গুহ্যদ্বার এর বিপরীতে) সদা স্থিরাবস্থায় কুলকুণ্ডলিনীর ও সাক্ষীরূপে থেকে এবং জ্ঞানরূপ হিরণ্যগর্ভ কূটস্থাক্ষর পুরুষ রূপে মধ্যাংশে এই জগৎ সংসার (ব্রহ্মাণ্ড) সৃষ্টি, স্থিতি এবং নাশরূপে ধারণ করে আছেন তিনিই ধর্ম্ম।
“হে ভারত, জীবগণ আদিতে অব্যক্ত, মধ্যে ব্যক্ত এবং বিনাশান্তে অব্যক্ত থাকে। তাহাতে শোক বিলাপ কি ?” শ্রীগীতা ২/২৮।।
অর্থাৎ আদি অন্তে অব্যক্ত ভাব মধ্যে শুধু ব্যক্ত। এই মধ্যাবস্থার নামই জীব। কারণ এই মধ্যাবস্থায় চঞ্চলতা বিরাজমান এবং ভূত সকলও এই অবস্থায় সৃষ্ট হয়। সঙ্গে দশ ইন্দ্রিয় ও তার কর্ম্ম সকল এই মধ্যাবস্থায়ই উৎপন্ন ও সংঘটিত হয়ে থাকে। কিন্তু আদি ও অন্তে কোন চঞ্চলতা প্রাহিভূত ও ইন্দ্রিয়াদি না থাকায় সেখানে কোন চঞ্চলতাও নেই। হরে কৃষ্ণ।।
“কমল ভৌমিকের ‘ধর্ম্ম সহজ কর্ম ও শান্তিলাভের উপায়’ থেকে- কৃষ্ণ কৃপাপ্রার্থী।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
(৩০শে মে ২০১৫ ইংরজী, দোহা-কাতার)
You must be logged in to post a comment.