প্রশ্নঃ- গীতাতে কোথাও বলা হয়েছে যে সাত্ত্বিক, রাজসিক, তামসিক ইত্যাদি গুণ ভগবান থেকে উৎপন্ন (৭/২২), কোথাও বলা হয়েছে প্রকৃতি থেকে উৎপন্ন(১৩/১৯, ১৪/৫), আবার কোথাও স্বভাবজাত বলে বর্ণনা করা হয়েছে (১৮/৪১)। তাহলে গুণগুলি ঠিক ঠিক কোথা হতে উৎপন্ন, ভগবান থেকে, না প্রকৃতি থেকে, নাকি স্বভাব থেকে ?
উত্তরঃ- যেখানে ভক্তির প্রকরণ আছে, সেখানে গুণগুলি ভগবান থেকে উৎপন্ন বলা হয়েছে, যেখানে জ্ঞানের প্রকরণ সেখানে বলা হয়েছে গুণগুলি প্রকৃতিজাত এবং যেখানে কর্ম্বিভাগের বর্ণনা আছে সেখানে গুণগুলি স্বভাবজাত বলে বর্ণিত হয়েছে। ভগবান সকলের প্রভু, সুতরাং প্রভুর দৃষ্টিতে যদি দেখা জ্যায় তাহলে গুণগুলি ভগবান থেকেই উদ্ভুত। সব কিছু উৎপত্তির কারণ প্রকৃতি, কারণের দৃষ্টিতে দেখলে গুণসমূহ প্রকৃতি হতে জাত। আবার ব্যবহারিক দৃষ্টিতে গুণগুলি প্রাণীদের স্বভাব থেকে উৎপন্ন হয়। এর তাৎপর্য এই যে, গুণগুলি প্রভুর বিবেচনায় ভগবানের থেকে জাত,কারণের দৃষ্টিতে প্রকৃতির এবং সাংসারিক আভিব্যক্তির দৃষ্টিতে ব্যক্তির নিজস্ব।সুতরাং তিনটি কথাই ঠিক।
উদ্ধৃত শ্লোক-
স তয়া শ্রদ্ধয়া যুক্তস্তস্যারাধনমীহতে।
লভতে চ ততঃ কামান্ময়ৈব বিহিতান্ হি তান্॥৭/২২॥
অর্থ:- সেই ব্যক্তি শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে সেই দেবতার আরাধনা করেন এবং সেই দেবতার কাছ থেকে আমারই দ্বারা বিহিত কাম্য বস্তু অবশ্যই লাভ করেন।
ইতি ক্ষেত্রং তথা জ্ঞানং জ্ঞেয়ং চোক্তং সমাসতঃ।
মদ্ভক্ত এতদ্বিজ্ঞায় মদ্ভাবায়োপপদ্যতে॥১৩/১৯॥
অর্থ:- এভাবেই ক্ষেত্র, জ্ঞান ও জ্ঞেয়- এই তিনটি তত্ত্ব সংক্ষেপে বলা হল। আমার ভক্তই কেবল এই সমস্ত বিদিত হয়ে আমার ভাব লাভ করেন।
সত্ত্বং রজস্তম ইতি গুণাঃ প্রকৃতিসম্ভবাঃ।
নিবধ্নন্তি মহাবাহো দেহে দেহিনমব্যয়্ম্॥১৪/৫॥
অর্থ:- হে মহাবাহো ! জড়া প্রকৃতি থেকে জাত সত্ত্ব, রজ ও তম- এই তিনটি গুণ এই দেহের মধ্যে অবস্থিত অব্যয় জীবকে আবদ্ধ করে।
ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং শূদ্রাণাং চ পরন্তপ।
কর্মাণি প্রবিভক্তানি স্বভাবপ্রভবৈর্গুণৈঃ॥১৮/৪১॥
অর্থ:- হে পরন্তপ ! স্বভাবজাত গুণ অনুসারে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদের কর্মসমূহ বিভক্ত হয়েছে।
তথ্যসূত্র- গীতা দর্পণ
শেয়ার করে অন্যদের জানতে সহায়তা করুন-
You must be logged in to post a comment.