মেহেন্দি বিয়ের সময় কেন হাতে পায়ে লাগানো হয়



প্রাচীন কাল থেকেই বিবাহ অনুষ্ঠানে মেহেন্দির ভূমিকা অত্যন্ত্য গুরুত্ত্বপূর্ণ।
আমরা সাধারণত মেহেন্দি বা হেনা নামক বস্তুটি ব্যবহার করি প্রসাধন সামগ্রী হিসেবে। বাঙালী অবাঙালী নির্বিশেষে প্রায় সকলেই যে কোনো শুভ অনুষ্ঠানে হাতে আবার কখনোপায়েরপাতায় মেহেন্দি লাগিয়ে থাকে। তবে বিবাহ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে মেহেন্দির ব্যবহার অতন্ত্য গুরুত্তপূর্ণ। আমাদের হিন্দু সমাজে বিয়ে মানেই হাজার ররকমের রীতি নীতি ,হাজার অনুষ্ঠান। মেহেন্দি রীতিটিও এই বিবাহ অনুষ্ঠানের অন্তর্গত। তবে শুধু হিন্দু সমাজেই নয় মুসলিমরা তাদের যেকোনো শুভ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে মেহেন্দি পরে থাকেন। শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধিই নয় মেহেন্দির আরো কিছু গুন্ আছে যে কারণে প্রাচীন কাল থেকেই বিবাহ অনুষ্ঠানে মেহেন্দির ভূমিকা অত্যন্ত্য গুরুত্ত্বপূর্ণ। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই প্রথাটির পেছনের আসল রহস্য।
হেনা গাছের পাতাকে শুকিয়ে তার সাথে জল মিশিয়ে সাধারণত মেহেন্দি বানানো হয়। এটির উৎপত্তি স্থল আসলে ইজিপ্ট। সেখান থেকেই এই গাছটি আমাদের দেশে আসে। এবার মূল বিষয়ে আসা যাক।

বিয়ের এক দিন আগে এই মেহেন্দি রীতিটি পালিত হয় নাচ গান এর মাধ্যমে। হবু বধূটির সাথে সাথে পরিবারের ছোট বড় সকল মহিলারাই তাদের হাতে ও পায়ে মেহেন্দি পড়েন। শুধু নব বধূই নয় হবু বরকে ও মেহেন্দি পড়তে দেখা যায়। বলা হয়ে থাকে যে মেহেন্দির রং যত ঘন হয় বিবাহিত জীবন তত বেশি সুখের হয়। অর্থাৎ মেহেন্দি নব বর ও বধূর ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে কাজ করে।
শুধু ভালোবাসার প্রতীকই হয় এর ঔষধি গুন্ আসলে এই প্রথাটির প্রচলনের অন্যতম কারণ। বিয়ে মানেই হাজার রকমের প্রথা হাজার রকমের নিয়ম যা অনেক সময়ই মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যা থেকে মাথা ব্যাথা ,মাথা ধরা বা শরীরকে অকারণ পরিশ্রান্ত করে তোলে। এটি একটি অন্যতম কারণ এই মেহেন্দি প্রথার। হাতে এবংপায়ের পাতায় লাগানো মেহেন্দি শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং অকারণ মানসিক চাপ,অবসাদ বা উদ্বিগ্নতার হাত থেকে মুক্তি দেয়।

মেহেন্দি অ্যান্টিসেপ্টিক ও অ্যান্টিফাঙ্গাল হিসেবেও কাজ করে। তাই বিয়ের আগে বড় ও বধূর হাতে এই প্রলেপ লাগানো হয় যাতে কোনো রকম ছোয়াচে রোগ যেমন জ্বর, সর্দি ,কাশি এইসমস্ত অযাচিত রোগের আক্রমণ থেকে নব বধূ ও বরকে দূরে রাখা যায়।

বিবাহের বিভিন্ন রীতি নীতি পালন করার সময় যদি কোনো ছোট দুর্ঘটনা যেমন কেটে যাওয়া ছড়ে যাওয়া ইত্যাদির হয়েই থাকে। মেহেন্দির প্রলেপ এই সমস্থ কাটাছেঁড়াকে তাড়াতড়ি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
মেহেন্দির ঔষধিগুন্কে বাড়িয়ে তোলার জন্য জলের সাথে উক্যালিপ্টাস এর তেল,লেবুর রস,লবঙ্গের তেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর ফলে শুধু এর ঔষধি গুন বাড়েনা সাথে সাথে মেহেন্দির রং ও গাঢ় হয়। এছাড়া মিশ্রনের সুবাস শরীর ও মনকে ভালো রাখে। এছাড়া মেহিন্দি শরীরে রক্তচলাচলকে সঠিকরাখে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

প্রাচীনকালে বিশ্বাস করা হতো যে মেহেন্দির প্রলেপ হবু বধূ এবং বরকে যে কোনো রকম অশুভ শক্তির ছায়া থেকে দূরে রাখে। তবে আজকাল বিয়ের জাকজমকের মধ্যে মানুষ মেহেন্দির আসল গুনগুলিকে ভুলতে বসেছে।

তবুও বলা যেতেই পারে যে মেহেন্দি একধারে তার গুণগুলি দিয়ে নববধূটিকে সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে। আর এই রীতিটির মাধ্যমে সকলে নিজেদের ভালোবাসা আশীর্বাদ দিয়ে নব দম্পতির আগাম জীবনের মঙ্গল কামনা করে থাকে।

মেয়েদের হাতে চুড়ি পরার বৈজ্ঞানিক কারণ



মেয়েদের হাতে চুড়ি পরা নিয়ে নানা প্রথা আছে সবাই জানি। চুড়ি এমন একটি অলংকার যা আমরা সকলেই হাতে পড়তে ভালোবেসে থাকি। হাতকে সুন্দর রাখার জন্য আমরা সাধারণত চুড়ি পরে থাকি। বাঙালি বিবাহিত মহিলারা হাতে পলা পড়ে থাকেন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা ধরণের এবং নানা রঙের চুড়ি পড়ার প্রথাও আছে।
আচ্ছা, আমরা কোনোদিন কি ভেবে দেখেছি যে চুড়ি পড়া শুধু মাত্রই একটি প্রথা কিনা? না চুড়ির পরার পিছনে কিছু গভীর বৈজ্ঞানিক কারণ লুকিয়ে আছে। তাহলে আজ জেনে নেওয়া যাক সেই বৈজ্ঞানিক কারণগুলি যা চুড়ি পড়ার পিছনে লুকিয়ে আছে।

রক্তের চলাচলকে স্বাভাবিক রাখে
আগেকার দিনের বেশির ভাগ মহিলারা বাড়িতে থাকতেন এবং বাড়িতে থেকে কঠোর পরিশ্রম করতেন। তাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব জরুরি ছিল রক্তের সঠিক চলাচল। চুড়ি কিন্তু আমাদের রক্তের সঠিক চলাচলকে বজায় রাখে।

চুড়ির সাথে আমাদের হাতের কব্জির ঘর্ষণ ঘটে এবং তার ফলে আমাদের রক্তের চলাচল বেড়ে ওঠে। রক্তের চলাচল বেড়ে ওঠার সাথে সাথে আমাদের স্বাস্থ্যের বিকাশও ঘটে।
চুরির মধুর ধ্বনি গর্ভবতি মা এবং তার সন্তানের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়
ভারতের বহু অঞ্চলে গর্ভবতী মহিলাদের সাধের সময় তাদের চুড়ি দেওয়া হয়। চুড়ির মধুর ধ্বনি গর্ভবতী মায়ের চিন্তা,চাপ,উদ্বেগ ইত্যাদি দূর করে তোলে। চুড়ির আওয়াজ ওষুধের মতো কাজ করে এবং তার ফলে মা এবং তার শিশু দুজনেরই স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। চুড়ির শব্দ ভ্রূণের শ্রবণশক্তি ও সৃষ্টি করে তোলে। তাই বলাই যায় যে চুড়ির শব্দ মা এবং তার বাচ্চার জন্য খুবই উপকারী।
অশুভ শক্তিকে দূরে রাখে
কাঁচের চুড়ি পরিবেশের শুদ্ধতা এবং শুভ শক্তি নিয়ে সেইটা শরীরের মধ্যে প্রবেশ করায়। চুড়ির আওয়াজ একটা শান্তির আবহাওয়া তৈরি করে এবং তার ফল স্বরূপ আমাদের মনের অশুভ ভাবনা দূর হয়। তাই এরজন্য আমরা বলি যে চুড়ি অশুভ শক্তিকেও দূর করে। মনে পজেটিভ ভাইব কাজ করে।

মানসিক ভারসাম্যকে বজায় রাখতে সাহায্য করে
গবেষণার মাধ্যমে জানা গিয়েছে যে যেই সব মহিলারা হাতে চুড়ি পরেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্য বেশি ভালো হয়। মানা হয় যে কাঁচের চুড়ি আমাদের মনের প্রচন্ড রাগ বা মানসিক আবেগকে কমিয়ে তা স্বাভাবিক করে তুলতে সাহায্য করে। দেখা যায় যে যারা হাতে চুড়ি পরেন তাদের ধৈর্য শক্তি বেশি হয় সেইসব মহিলাদের থেকে যারা চুড়ি পড়েন না।

মেয়েদের হাতের হাড় কে শক্ত করে তোলে
আগেকার দিনে মানা হত এবং এখনও মানা হয় যে মেয়েদের হাড় ছেলেদের তুলনায় দুর্বল হয়। সোনা এবং রুপো দিয়ে বানানো চুড়ি আমাদের শরীরের শক্তির সঞ্চলন করে যা আমাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য খুবই দরকারী। বলা হয় যে হাতের সাথে সোনা বা রুপোর চুড়ির ঘর্ষণের ফলে,আমাদের শরীর অতি অল্প পরিমানের সোনা বা রূপোকে শোষণ করে নেয়। সোনা এবং রুপো আমাদের শরীরকে আরোগ্য প্রদান করে এবং তার ফলে আমরা সুস্থ্য থাকি এবং বিভিন্ন সুফল পাই।
তাহলে আজ আমরা চুড়ি পড়ার কয়েকটি বৈজ্ঞানিক কারণের সম্বন্ধে জানতে পারলাম। আগেকার দিনের মহিলারা পর পুরুষদের সামনে বেরোতেন না। যদিও বা ভুল করে অন্য পুরুষদের সামনে চলে আসতেন,পর পুরুষরা মহিলাদের চুড়ির আওয়াজ শুনে সামনে থেকে চলে যেতেন। এইভাবে নিয়ম রক্ষা করা হত আগেকার দিনে।

আর কোনো কোনো জায়গাতে এই কারণের জন্যই মহিলারা চুরি পড়তেন। কিন্তু তারপর চুড়ি পরার বৈজ্ঞানিক কারণ জানা যায় এখন। এরপর থেকে মহিলাদের মধ্যে চুড়ি পড়ার প্রবণতাও বেড়ে ওঠে। বছরের পর বছর পার হওয়ার সাথে সাথে চুড়ি পড়া একটা সাজ সজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তাও চুড়ির বৈজ্ঞানিক কারণকে ভুলে গেলে চলবে না।

আমি হিন্দু-আমার নিকট হিন্দুত্বের মূল্যবোধ-


62-2

আমার জন্ম এক হিন্দু বাবা ও হিন্দু মায়ের ঘরে। তাই জন্মসূত্রে আমি একজন হিন্দু। আমার কোনো নির্দিষ্ট একটি ধর্মগ্রন্থ নেই। বরং আমাদের শত শত, হাজার হাজার ধর্মীয়, দার্শনিক গ্রন্থ আছে। আমি এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করে হিন্দু হতে পারি, আবার বহু দেবতায় বিশ্বাস করেও হিন্দু হতে পারি, এমনকি আমি কোনো ঈশ্বরে বিশ্বাস না করেও হিন্দু হতে পারি, যেমনভাবে একজন নাস্তিক আসলে হিন্দুই। আমি প্রতিনিয়ত মন্দিরে যাই না, আমি নিয়মিত ধর্মীয় আচার-নিষ্ঠা পালন করি না। ঈশ্বর তো বন্ধুর মতো। না – আমি ঈশ্বরকে ভয় পাই না। কেউ আমার উপর কখনো চাপ প্রয়োগ করেনি এসব নিয়ম-নিষ্ঠা পালন করার জন্য। যদি আমি হিন্দুধর্মের কিছু আচার-নিষ্ঠাকে চ্যালেঞ্জও করি তবুও কেউ আমাকে অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে পারবে না। কারণ একজন হিন্দু হিসেবে আমি ব্যক্তিগতভাবে ও বস্তুনিষ্ঠভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে পারি, কোনো প্রকার শর্তাবলী ছাড়া। আমি একজন হিন্দু হিসেবে আছি জোর করে না, বরং নিজ পছন্দে। হিন্দুধর্ম আসলে কোনো ধর্ম নয়, বরং এক সেট বিশ্বাস ও রীতি-নীতি। এ কোনো এমন ধর্মমত নয় যা কোনো একব্যক্তির দ্বারা প্রচারিত অথবা এর কোনো সংগঠিত সংঘ বা সমিতি নেই। হিন্দুধর্মে কোনো সংস্থাপণ বা কর্তৃত্বধারী গোষ্ঠী নেই অন্য ধর্মমতগুলোর মতো। আমি কোনো ঈশ্বরিক শক্তিকে অস্বীকার করছি না। আমাদের বেদসমূহ, উপনিষদ, গীতা বলেছেন – ঈশ্বর আছেনও আবার নেইও। আমরা কিন্তু সেই সর্বশক্তিমান নির্বস্তুক পরব্রহ্ম যিনি এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকারক তার প্রার্থনা ঠিকই করি। আমাদের ঈশ্বর সম্পর্কে ভাবনা একজন ব্যক্তিগত ঈশ্বরের মতো নয় যিনি কিনা মেঘের মাঝে লুকায়ে থেকে আমাদের যুক্তিহীন গল্প শুনিয়ে যাচ্ছেন তার পছন্দমত বার্তাবাহকদের দ্বারা এমনভাবে যেন আমাদের তাকে উপাসনা করতেই হবে; না করলেই শাস্তি। আমার মনে হয় না ঈশ্বর কোনো স্বৈরশাসক বা সম্রাট যিনি চান আমরা উনার সম্মান করি ও ভয় করি। হিন্দুধর্মের মধ্যেও এমন কুসংস্কার আছে। হিন্দুধর্মের দার্শনিক দিকগুলো এসব কুসংস্কারকে ভুল প্রমাণ করে। হিন্দুধর্ম হলো একজন ব্যক্তির ধর্ম, ব্যক্তির জন্য ধর্ম, ব্যক্তির দ্বারা ধর্ম যার শিকড় রয়েছে বেদ ও গীতার মতো ধর্মগ্রন্থে। পুরো বিষয়টা হলো একজন ব্যক্তির ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানো তার নিজস্ব ব্যক্তিগত মাধ্যমে, তার নিজস্ব মানসিকতা ও অন্তর্নিহিত বিবর্তনের মাধ্যমে। কেউ আপনাকে হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত করতে পারবে না, কারণ এটা কোনো ধর্মমত নয় বরং এক জীবনপ্রণালী, জীবনে চলার রীতি-নীতি সম্বলিত ব্যবস্থা। সকল কিছুই হিন্দুধর্মে গ্রহণযোগ্য কারণ কোনো একক কর্তৃত্বধারী বা সংগঠন নেই যা এর ব্যবস্থাকে বাতিল ঘোষণা করবে বা এর বিরুদ্ধে প্রশ্ন করবে। এখানেই আপনি পাবেন জীবনের অর্থ। সৃষ্টির সকল কিছুকে ভালোবাসাই হলো পরম সত্য। ঈশ্বর বিরাজিত সকল কিছুতেই। কিছুই ঈশ্বর থেকে দূরে নয় কারণ ঈশ্বর সকল কিছুতেই। সকল জীব ও জড়কে ঈশ্বর জ্ঞানে সম্মান করা উচিত আমাদের। ইহাই হিন্দুধর্ম আমাদের শিক্ষা দেয়। এই কারণেই একে বলে সনাতন ধর্ম, চিরন্তন বিশ্বাস। এ এক ধর্ম নামক রীতি দ্বারা চালিত যার অর্থ জীবন চলার প্রথা। হিন্দুধর্মের সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে নিজের প্রতি সৎ থাকা। এর কোনো একক ধ্যান-ধারণা নেই। এটি সকল কিছুর কাছেই উন্মুক্ত। হিন্দুরা এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করে যিনি আবার নানা রূপধারণ করতে পারেন। হিন্দুদের কাছে ঈশ্বর সময়হীন ও আকারহীন। বর্তমান হিন্দুদের আদি পূর্বপুরুষগণ বিশ্বাস করতেন চিরন্তন সত্য ও মহাজাগতিক নিয়ম-কানুনে। ধর্ম এখন এক মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং ইন্ডাস্ট্রীতে রূপান্তরিত হয়েছে যা ধর্মান্তরের মাধ্যমে প্রসারের মার্কেট শেয়ার বাড়াতে চাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যবসা হচ্ছে আধ্যাত্বিকতা। আমি একজন হিন্দু কারণ হিন্দুধর্ম অসহিংসতার ডাক দেয়। আমি একজন হিন্দু কারণ তা আমার মনকে কোনো বিশ্বাস ব্যবস্থার সাথে শর্ত জুড়ে দেয় না। একজন পুরুষ/মহিলা যে তার জন্মগত ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়, সে হলো নকল/ভন্ড/সুবিধাবাদী এবং তার নিজস্ব আদর্শ, সংস্কৃতি ও জীবনের মূল্যবোধকে মূল্য দেয় না।

ধর্ম কি?সনাতন ধর্মের লক্ষণ কি?


ধর্মঃ
ধারণাদ্ ধর্ম ইত্যাহুধর্মেণ বিধৃতাঃ প্রজাঃ।
যঃ স্যাদ্ ধারণসংযুক্তঃ স ধর্ম ইতি নেতরঃ ॥

অর্থাত্‍ ধারণ ক্রিয়া (ধৃ+মন্) থেকে ধর্ম শব্দের উত্‍পত্তি ।ধর্ম সৃষ্টিকে বিশেষভাবে ধারণ করে রয়েছে ।সংক্ষেপে যা কিছু ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন, তাই ধর্ম,এছাড়া অন্য কিছু ধর্ম নয়।

সনাতন ধর্মের লক্ষণ :মনুসংহিতা অনুসারে নিম্লোক্ত চারটিকে বলা হয় মূলত সনাতন ধর্মের লক্ষণ।
ক)বেদ-বেদ সনাতন ধর্মের মূল গ্রন্থ । বেদের ব্যাখ্যা হচ্ছে আরণ্যক ও উপনিষদ । শ্রীশ্রী গীতা হচ্ছে সমস্ত উপনিষদের সারবস্তু।সুতরাং বেদ বা গীতা বা উপনিষদে বিশ্বাস একজন সনাতন ধর্মাবলম্বীর প্রধান লক্ষণ।
খ)স্মৃতি :বিভিন্ল স্মৃতি শাস্ত্রের অনুশাসন মানা যেমনঃ মনুসংহিতা,পুরাণসমুহ প্রভৃতি
গ) সদাচার :মহাপুরুষদের সদাচার থেকে শিক্ষা নেয়া যেমন, রামায়নের রামচন্দ্র ,মহাভারতের শ্রীকৃষ্ণ প্রমুখ
ঘ)বিবেকের বাণী :যেমন শরণাগত ব্যক্তির জীবন বাঁচাতে প্রয়োজনে মিথ্যা বলা
*সনাতন ধর্মের বাহ্য লক্ষণঃ
ধৃতিঃ ক্ষমা দমোহস্তেয়ং
শৌচমিন্দ্রিয়-নিগ্রহঃ।
ধীর্বিদ্যা সত্যমক্রোধো
দশকং ধর্মলক্ষণম্॥
(মনুসংহিতা)
অর্থাত্‍ সহিষ্ণুতা,ক্ষমা ,চুরি না করা ,শুচিতা ,ইন্দ্রিয়সংযম,শুদ্ধ বুদ্ধি,জ্ঞান,সত্য এবং ক্রোধহীনতা-এইটি দশটি লক্ষণের মধ্যে সনাতন ধর্মের স্বরূপ প্রকাশ পায়।
*সনাতন ধর্মের বিশেষ লক্ষণ:
বৈষয়িক দর্শনে বলা হয়েছে-যতোহভ্যুদয়-নিঃশ্রেয়সিদ্ধি সঃ ধর্মঃ ॥
অনুবাদঃ যা থেকে জাগতিক কল্যাণ ও মোক্ষলাভ হয়-সেটিই ধর্ম।*যারা সনাতন ধর্ম না জেনে ধর্ম ত্যাগী হচ্ছে তাদের প্রতি সুস্পষ্ট নির্দেশ:ধর্ম এব হতো হন্তি,ধর্ম রক্ষতি রক্ষিতঃ।(ধর্ম নষ্ট হলে সে ধর্মনষ্টকারীকে নাশ করে;আর রক্ষিত হলে তাকে রক্ষা করে)

সুতরাং সনাতন ধর্ম মানেই তো মানবতা ধর্ম; এরপরও যারা সনাতন ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করে তাদের নিজেদের মহিমান্বিত ধর্ম বিষয়ে কোন জ্ঞান নেই এ কথা অকপটে বলা যায়..