রাহু নিয়ে অনুসন্ধান-(পুরাণ ও বিজ্ঞান)


রাহু নিয়ে অনুসন্ধান-(পুরাণ ও বিজ্ঞান)

Related image
সূর্য্য ও চন্দ্র গ্রহণ নিয়ে আলোচনায় আমাদের পৌরাণিক রাহু ও কেতুর কথা মনে পড়ে। আধুনিক চিন্তাশীলতা, প্রমাণ, বিজ্ঞান বিশ্লেষণ এর ক্রমবিকাশের ধারায় আমাদের জানার পরিধিও বিস্তৃত হয়েছে, তাই প্রাচীনকালের চিন্তাগুলিকে আধুনিক বিজ্ঞান দিয়ে বুঝতে চাই।
বিপ্রচিত্তির ঔরসে সিংহিকার গর্ভে রাহুর জন্ম। সিংহিকার ১৪টি পুত্র, রাহু তাদের সকলের জ্যেষ্ঠ, অতি – বলবান রাহু চন্দ্র ও সূৰ্য্য প্রমর্দ্দনকারী।(ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ/সূর্য্যপুরাণ)
শ্ৰীমদ্ভাগবতে লেখা আছে-
রাহু দেবসভা হতে গোপনে অমৃতগ্রহণ করে নিজে পান করছিল, চন্দ্র ও সূর্য্য এটা জানতে পেরে বিষ্ণুকে সংবাদ দেন। ভগবান বিষ্ণু সুদর্শন চক্রদ্বারা তার মস্তকচ্ছেদন করেন, তখন সুধা বদন হতে প্লাবিত হয়ে পড়ায় ঐ মস্তক অমর হয়েছিল। চন্দ্র ও সূর্য্য বলে দিয়েছিল বলেই রাহু তাদেরকে গ্রাস করে থাকে।
(ভাগবত ৮/৯ অধ্যায়)
পুরাণে লেখা আছে, রাহু এসে চন্দ্রকে গ্রাস করায় গ্রহণ ঘটে। এই রাহু স্কন্ধচ্যুত দৈত্যশিরঃ রূপে কল্পিত। এই পৌরাণিক উপাখ্যানের সাথে বর্তমান বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সমাবেশ করলে স্পষ্টই বুঝা যায় যে, পুরাণজ্ঞ ঋষিগণ ও আর্য জ্যোতিবিদরা রাহু সম্বন্ধে যে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন, তা কোন মতেই বিজ্ঞান-ভিক্তি উলঙ্ঘন করে না। আমরা যাকে রাহু ও কেতু বলি, পঞ্জিকায় যা রাক্ষস মুখ ও ফণাধর সর্পরূপে চিত্রিত, পাশ্চাত্য বৈজ্ঞানিকরা তাকেই Nodes বলে উল্লেখ করেছেন। Nodes শব্দের অর্থ গ্রন্থি।
যে বিন্দুতে গ্রহসমূহের বা ধূমকেতুদের কক্ষ (Orbit) সূৰ্য্যকক্ষকে (Ecliptic) অতিক্ৰম করে যায়; কিংবা আরও সূক্ষ্মতম অর্থ ধরলে, যে স্থানে কোন প্রধান গ্রহ কক্ষের উপর তার উপগ্রহ-কক্ষ (Orbit of a Satellite) কর্ত্তন করে, তাকে Node বলে। মোট কথা, কোন একটা প্রথম গ্রহ বা উপগ্রহ কক্ষের যে স্থান দ্বিতীয় কক্ষের সংযোগ হয়, সেই গ্রস্থিস্থানই প্রকৃতপক্ষে Node নামে অভিহিত করা হয়।
যখন কোন গ্রহ উত্তর অভিমুখ গতি (Passing northerly) হয়ে এমন গ্রন্থিপাত করে, তাকে Ascending node বা Dragon’s head বলে এবং ইউরোপীয় জ্যোতির্ব্বিদরা ☋ এরকম সাঙ্কেতিকচিহ্ন দ্বারা উহা প্রকাশ করে থাকেন। সুতরাং উহা সর্পাকৃতি কেতু চিহ্নের সাথে বিশেষ অসামঞ্জস্য বোধক নয়।
প্রত্যেক গ্রহই এক সময়ের মধ্যে সুৰ্য্যকক্ষের দ্বাদশরাশির মধ্য দিয়ে আবৰ্ত্তনকালে রাহু ও কেতুর পাতসম্বন্ধীয় (Positions of the nodes) সংযোগ নির্দেশ করে থাকে এবং সমস্ত খবৃত্তের চতুর্দিকে একবার আবর্তন করে। সৌরজগতের গ্রহউপগ্রহ আদি বিভিন্নস্থানে অবস্থিত থাকাই রাহু ও কেতুর বিশেষ বৈপরীত্যের একমাত্র কারণ।
সুর্য্য কক্ষ বা অপর গ্রহ কক্ষের সাথে অপর কোন গ্রহ ব৷ উপগ্রহ কক্ষের পতন জন্য নির্দিষ্ট গ্রন্থিস্থানে যখন উদ্দিষ্ট গ্রহ সেই সংযোগবিন্দুতে এসে উপস্থিত হয়, তখন তার সমসূত্রে দূরদেশে অবস্থিত অপর গ্রহে ছায়াপাতের জন্য গ্ৰহণ উপলব্ধি হয়ে থাকে।
তথ্যসূত্র- বিশ্বকোষ।
#কৃষ্ণকমল