‘অদর্দ্দর্মন্যুনা শস্বরাণি’ (ঋক্ ২/২৪/২)
‘শস্বরাণি মেঘনামৈতৎ মেঘান্ ব্যদর্দ্দঃ বর্ষণার্থং বিধারিতবান্’।
ঋগ্বেদের ১ম ও ২য় মগুলে উল্লেখ রয়েছে, যেকালে ইন্দ্র শুষ্ণ,, পিপ্রু, কুয়ব ও বৃত্র এই চার অসুরকে সংগ্রামে নিহত করেন, সে সময়ে ইন্দ্র কর্তৃক শস্বরাসুরের পুরীও ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। এই দুর্ঘটনার পর শম্বর ইন্দ্র ভয়ে অত্যন্ত ভীত হয়ে বহুদিন পৰ্বত-গুহায় লুকিয়ে থাকে এবং বহু অন্বেষণের ৪০ বৎসরে ইন্দ্র কর্তৃক ধৃত হয়ে নিহত হয়।
ভাগবতে উল্লেখিত হয়েছে যে রুক্মিণী গর্ভজাত সদ্যঃপ্রসূত শ্ৰীকৃষ্ণতনয় প্রদ্যুম্নকে শস্বরাসুর অপহরণ করে সমুদ্রগর্ভে নিক্ষেপ করেন এবং সেখানে কোন এক মাছের উদরস্থ হন। কালক্রমে সেই মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ে এবং জেলে শম্বরাসুরকে মাছটি উপহার দেন। সূদগণ(রান্নার সহায়তাকারী) মাছের পেটের ভিতর দিব্যবালক মূৰ্ত্তি দেখে অন্যতম সূপকারিণী(প্রধান রাঁধুনি) মায়াবতীকে তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করে। এই মায়াবতী কামপত্নী রতি, রুদ্রকোপে দগ্ধ পতির পুনঃপ্রাপ্তি প্রতীক্ষায় সেই রুদ্রের কথানুসারেই বৰ্ত্তমান শম্বরসদনে সূপ-কাজে নিযুক্ত আছেন। মায়াবতী যখন সূদদের থেকে মাছের পেটে পাওয়া বালকের বৃত্তান্ত অবগত হলেন, তখন আবার নারদ মুনীর নিকট উহার আমূল বৃত্তান্ত অর্থাৎ নিজের পতি কামদেবই প্রদ্যুম্ন রূপে জন্মগ্রহণ করে চিরশত্রু শম্বরের চক্রে মাছের উদরস্থ হয়েছেন শুনে তার(প্রদ্যুম্নের) প্রতিপালনে অত্যন্ত মনোনিবেশ করলেন। বালক যথাকলে যৌবনে প্রদার্পন করলে একদিন মায়াবতী তাকে নিজেদের এবং নিজ পূৰ্ব্ববৃত্তান্ত ও শম্বরের অতিশয় নিষ্ঠুর ব্যবহারের বিষয় সম্যকভাবে জানিয়ে বললেন যে, এরকম পরম দুরাচার দুর্জ্জয় দুর্দ্ধর্ষ শত্রুকে কখনই ক্ষণকালের জন্য ও জগতে স্থান দেওয়া কৰ্ত্তব্য নয়; অতএব আমার নিকট সর্বমায়া বিনাশিনী মায়াবিদ্যা গ্রহন করে অচিরে শম্বরের বধের উপায় চিন্তা কর।
মায়াবতীর প্ররোচনায় যুবক উপয় অনুসন্ধানে নিরত হয়ে সহসা শম্বরের নিকট গিয়ে তাকে অত্যন্ত তিরস্কার করে, শম্বর অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে প্রদ্যুম্নের দিকে গদা নিক্ষেপ করল, এভাবে উভয়ের মধ্যে ঘোরতর সংগ্রাম চলল; পরে ঐ যুবক এক শাণিত অসি উত্তোলনের মাধ্যমে কিরীট ও কুণ্ডলের সাথে শম্বরের মাথা ছেদন করে ভূপাতিত করেন। (ভাগবত ১০/৫৫)
অভিধানে শম্বর শব্দ অর্থ ১) সলিল, জল। ২) ব্ৰত। ৩) বিত্ত। ( নানার্থরত্নমালা) ৪) চিত্র। ৫) বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ব্ৰতবিশেষ। (হেম ও বিশ্ব) ৬) মেঘ। ৭) মৃগবিশেষ, শম্বর মৃগ। 8) দৈত্যদিশেষ। (মেদিনী) ৮) মৎসবিশেষ। ৯) শৈববিশেষ। ১০) জিনভেদ। (বিশ্ব) ১১) যুদ্ধ। ১২) শ্রেষ্ঠ। (ধরনি) ১৩) চিত্রক বৃক্ষ। ১৪) লোম। ১৫) অর্জুনবৃক্ষ। ১৬) তালবৃক্ষ। (রাজনি) ১৭) পৰ্ব্বতভেদ।
সুত্র- বিশ্বকোষ।
#কৃষ্ণকমল।
You must be logged in to post a comment.