নবগ্রহ স্তব ও গায়ত্রী মন্ত্র দ্বারা শান্তি লাভঃ-


নবগ্রহ স্তব ও গায়ত্রী মন্ত্র দ্বারা শান্তি লাভঃ-

Related image
Image result for nabagraha
যারা অশুভ শক্তিকে পরাহিত করে শান্তি আনায়ন করতে চান সেই সাধকের জন্য নবগ্রহ স্তব ও গায়ত্রী মন্ত্র জপ করা অপরিহার্য। নিম্নে সাধকের জন্য বিষ্ণুধর্মোত্তরে উল্লেখিত-

গোচরে বা বিলগ্নে বা সে গ্রহারিষ্টসূচকাঃ।
পূজয়ে তান্‌ প্রযন্তেন পূজিতাঃ স্যুঃ শুভপ্রদাঃ।।

(গোচরে বা জন্মকুণ্ডলীতে যে গ্রহ অনিষ্টকারক, তার শান্তি করিয়ে প্রসন্নতা লাভ করানো প্রয়োজন। প্রসন্ন হয়ে সেই গ্রহ শুভ ফল প্রদান করেন। নবগ্রহ স্তব ও গায়ত্রী মন্ত্র জপের দ্বারা গ্রহগণের শান্তি অতি শীঘ্রই হয়ে থাকে অর্থাৎ নবগ্রহের শান্তি মানে আমাদের শান্তি)।

নবগ্রহ স্তব বিধি

নব গ্রহস্তোত্রম্‌
জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্‌।
ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্‌।।

দিব্যশঙ্খতুষারাভং ক্ষীরোদার্ণব সম্ভবম্‌।
নমামি শশিনং ভক্ত্যা শম্ভোর্মুকুট ভূষণম।।

ধরণীগর্ভসম্ভুতং বিদ্যুৎপুঞ্জসমপ্রভম।
কুমারং শক্তিহস্তষ্ণ লোহিতাঙ্গং নমাম্যহম।।

প্রিয়ঙ্গুকলিকাশ্যামং রূপেণাপ্রতিমং বুধম্‌।
সৌম্যং সর্বগুণোপেতং নমামি শশিনঃ সুতম্‌।।

দেবতানামৃষীণাঞ্চ গুরুং কনকসন্নিভম্‌।
বন্দ্যভূতং ত্রিলোকেশং তং নমামি বৃহস্পতিম্‌।।

হিমকুন্দমৃণালাভং দৈত্যানাং পরমং গুরুম্‌।
সর্বশাস্ত্র প্রবক্তারং ভার্গবং প্রণমাম্যহম্‌।।

নীলাঞ্জনচয়প্রখ্যং রবিসুনুং মহাগ্রহম্‌।
ছায়ায়া গর্ভসম্ভুতং বন্দে ভক্ত্যা শনৈশ্চরম্‌।।

অর্দ্ধকায়ং মহাঘোরং চন্দ্রাদিত্যবিমর্দ্দকম্‌।
সিংহিকায়াঃ সূতং রৌদ্রং ত্বং রাহুং প্রণমাম্যহম্‌।।

পলালধুমসঙ্কাশং তারাগ্রহবিমর্দ্দকম্‌।
রৌদ্রং রুদ্রাত্মকং ক্রুরং তং কেতুং প্রণমাম্যহম্‌।।

নবগ্রহের গায়ত্রী মন্ত্র

(১) রবি (সূর্য) গ্রহ- ওঁ ভাস্করায় বিদ্মহে মহাতেজায় ধীমহিঃ তন্নঃ সূর্যঃ প্রচোদয়াৎ।
(২) সোম (চন্দ্র) গ্রহ- ওঁ ক্ষীরপুত্রায় বিদ্মহে অমৃতত্বায় ধীমহিঃ তন্নঃ চন্দ্রঃ প্রচোদয়াৎ।
(৩) মঙ্গল গ্রহ- ওঁ অঙ্গরকায় বিদ্মহে শক্তিহস্তায় ধীমহিঃ তন্নঃ ভৌমঃ প্রচোদয়াৎ।
(৪) বুধ গ্রহ- ওঁ সৌম্যরূপায় বিদ্মহে বাণেশায় ধীমহিঃ তন্নঃ বুধঃ প্রচোদয়াৎ।
(৫) বৃহস্পতি গ্রহ- ওঁ আঙ্গিরসায় বিদ্মহে দণ্ডায়ুধায় ধীমহিঃ তন্নঃ জীবঃ প্রচোদয়াৎ।
(৬) শুক্র গ্রহ- ওঁ ভৃগুসুতায় বিদ্মহে দিব্যদেহায় ধীমহিঃ তন্নঃ শুত্রঃ প্রচোদয়াৎ।
(৭) শনি গ্রহ- ওঁ সূর্যপুত্রায় বিদ্মহে মৃত্যুরূপায় ধীমহিঃ তন্নঃ সৌরিঃ প্রচোদয়াৎ।
(৮) রাহু গ্রহ- ওঁ শিরোরূপায় বিদ্মহে অমৃতেশায় ধীমহিঃ তন্নঃ রাহুঃ প্রচোদয়াৎ।
(৯) কেতু গ্রহ- ওঁ গদাহস্তায় বিদ্মহে অমৃতেশায় ধীমহিঃ তন্নঃ কেতুঃ প্রচোদয়াৎ।

প্রশ্ন: গায়ত্রী মন্ত্রের তাৎপর্য কি ?


উত্তরঃগায়ত্রী হিন্দু ধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠ পবিত্র মন্ত্র । মন্ত্রের সঠিক তাৎপর্য একমাত্র সাধক ঋষি পুরুষের পক্ষেই বলা সম্ভব ।তারপরও সাধারণ সরল দৃষ্টি নিয়ে মহাত্মা আচার্যদের উপদেশ স্মরণে রেখে, যতটুকু পারা যায় আমরা গায়ত্রী মন্ত্র সম্পর্কে জানব। প্রথমে এর অনুবাদ ও অবস্থানের দিকে নজর দেয়া যাক।


ওঁ ভূভবঃ স্বঃ তৎসবিতুর্বরেণ্যং
ভর্গো দেবস্য ধীমহি ।
ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াতৎ ।।ওঁ।।
ঋগ্বেদ, ৩/৬২/১০, যজুর্বেদ, ৩/৩৫, ৩০/২, সামবেদ উত্তরার্চিক, ৬/৩/১০
অনুবাদ :
যিনি ত্রিলোকের স্রষ্টা অর্থাৎ সমগ্র বিশ্ব জগতের প্রসবিতা, সেই সচ্চিদানন্দঘন পরমব্রহ্মের বরণীয় জ্যোতিকে আমরা ধ্যান করি । তিনি আমাদের মন ও বুদ্ধিকে শুভ কার্যে প্রেরণা দান করুন।

তাত্পর্যে বলা যায় ভূ ভুবঃ স্বঃ অর্থাৎ পৃথিবী, অন্তরীক্ষ, বিশ্বব্রহ্মণ্ডে, এবং সর্বত্র সেই পরমপুরুষ পরমেশ্বরের প্রভাব বা জ্যোতি বিদ্যমান । তাঁকে ঘিরেই আমাদের জন্ম, মৃত্যু, জীবন সব। তাই তাঁর কাছে আমাদের প্রার্থনা তিনি যেন আমাদের জীবনকে সাত্ত্বিক ভাবে অতিবাহিত করার জন্যে কৃপা করেন । ঋক, সাম, যজু এই তিন বেদেই আমারা মন্ত্রটি পাই যথাক্রমে ঋকবেদ ৩/৬২/১০ যজুবের্দ ৩/৩৫,৩০/২ সামবেদ উত্তর আর্চিক ৬/৩/১০। এই মন্ত্রের দেবতা সবিতা । দ্রষ্টা ঋষি বিশ্বামিত্র, ছন্দ গায়ত্রী এবং এটাই বেদের সর্বশ্রেষ্ঠ মন্ত্র এবং ছন্দ।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতার বিভূতিযোগে ৩৫নং শ্লোকে বলেছেন ছন্দ সমূহের মধ্যে আমি গায়ত্রী। এই হল অতি সংক্ষেপে গায়ত্রী মন্ত্রের বর্ণনা ।

আরও একটি ব্যাপার আমরা দেখব, সেটি হল সূর্য আর সবিতা। যেহেতু সূর্য সবিতা সমার্থক, তাই অনেকে এই মন্ত্রের ক্ষেত্রও সূর্য সবিতা এক করে ফেলেন । নিম্নে আমরা সেটির বিশ্লেষণ দেখব।

বেদে সূর্যের বিভিন্ন নাম আমরা পাই যেমন: সূর্য, পুষা, মিত্র, সবিতা, অর্য্যমা, বিষ্ণু ইত্যাদি এরা সবাই আদিত্য। আমরা দেখছি যে সূর্যের সমার্থক শব্দ সবিতা। সূর্যকে বৈদিক ঋষিরা এই বিশ্বচরাচরের সকল শক্তির উত্স হিসাবে চিন্তা করতেন। বাস্তবেও অবশ্য তাই, আমরা সূর্য শক্তিতেই বলিয়ান। কিন্তু এই মন্ত্রে সবিতা সরাসরি সূর্যের সমার্থক শব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হয়নি। বেদভাষ্যকার সায়নাচার্য এখানে সূর্য ও সবিতার দুই রকম অর্থ করেছেন। এই মন্ত্রে সবিতা হল, সকল কারণের কারণ সেই সচ্চিদানন্দ নিরাকার পরম ব্রহ্ম। তাই সবিতা অর্থ জগত স্রষ্টা। “সু” ধাতু থেকে সবিতৃ নিষ্পন্ন হয়েছে। যার জন্যে সবিতা মানে প্রসবিতা ।

নিরূক্তিকার যাস্ক অর্থ করেছেন “সর্ব্বস্য প্রসবিতা”। বেদ ভাষ্যে সায়ন ব্যাখ্যা করেছেন তত্সবিতুঃ = জগত্প্রসবিতুঃ = বাংলা হচ্ছে নিখিল বিশ্বের সৃষ্টিকারী। তাই এই মন্ত্রে আমরা সেই পরমেশ্বরের বরণীয় জ্যোতিকে ধ্যান করছি। যাকে এখানে সবিতা বলা হয়েছে বা নাম দেওয়া হয়েছে ।

ঋকবেদের ২য় মণ্ডলের ৩৮ সূক্তের ৭ থেকে ১১ নং মন্ত্রে সবিতাকে সকল শক্তির উত্স বলে তার স্তুতি করা হয়েছে।

বলা হয়েছে :
হে সবিতা, তুমি সকল কিছু সৃষ্টি করেছ অন্তরীক্ষ, জল, স্থল। তুমি সকল ভূত, পশুপাখি, স্থাবর জঙ্গম ইত্যাদিকে স্ব স্ব স্থানে রেখেছ। ইন্দ্র,বরুণ, মিত্র, অর্য্যমা, বা রুদ্র সবাই তোমার শক্তিতে বলিয়ান । কেউ তোমাকে হিংসা করে না। হে সবিতা (পরমেশ্বর) তোমার দ্যূতিমান জ্যোতিকে (অর্থ্যাৎ, সকল প্রকাশ যুক্ত শক্তি এবং অপ্রকাশিত অতিন্দ্রিয় শক্তিকে) আমরা নমষ্কার করি। তুমি সকলের কল্যাণ কর। আমাদের জন্যে যেন সকল কিছু শুভ হয় ।[শুধু অনুবাদ দেয়া হল ]

এটাই এই গায়ত্রী মন্ত্রের দেবতা সবিতার তাত্পর্য।
উল্লেখ্য, এই মন্ত্রে সবিতার জ্যোতি মানে সরাসরি সূর্যের জ্যোতি এই অর্থে ব্যবহৃত হয় নাই। হঠাৎ করে মন্ত্রটি দেখলে এটা মনে হতে পারে । তাই এটা বুঝতে আমাদের এর পিছনের বিষয়গুলোকেও দেখতে হবে। বেদে এক জায়গায় সবিতাকে প্রজাপতি অর্থ্যাৎ সমগ্র ভুতগণের সৃষ্টিকারি বলা হয়েছে। তাই এখানে সূর্যের আলো না বুঝে পরমশ্বরের প্রভাবকে বুঝতে হবে।

 

গায়ত্রী মন্ত্রের ব্যাখ্যা ও বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য।


gayathri-devi2
গায়ত্রী দেবী

গায়ত্রী মন্ত্র হল বৈদিক হিন্দুধর্মের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে,বেদের অন্যান্য মন্ত্রের মতো গায়ত্রী মন্ত্রও “অপৌরষেয়” (অর্থাৎ,কোনো মানুষের দ্বারা রচিত নয়) এবং এক ব্রহ্মর্ষির কাছে (গায়ত্রী মন্ত্রের ক্ষেত্রে ব্রহ্মর্ষি বিশ্বামিত্র ) প্রকাশিত। এই মন্ত্রটি
বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় রচিত। এটি ঋগ্বেদের মণ্ডলের (৩।৬২।১০) একটি
সূক্ত ।  গায়ত্রী ছন্দে রচিত। ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ
তৎ সবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি। ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।। [ ঋগবেদ ৩.৬২.১০,যজুর্বেদ ৩.৩৫,৩০.২,সামবেদ উত্তরার্চ্চিক ৬.৩.১০] পদচ্ছেদ: ওঁ-পরমাত্মা, ভূঃ-প্রাণস্বরুপ, ভূবঃ-দুঃখনাশক, স্বঃ-সুখস্বরুপ, তত্-সেই, সবিতু-সমগ্র জগতের সৃষ্টিকর্তা, বরেণ্যম-বরণযোগ্য সর্বোত্তম, ভর্গো-পাপ নাশক, দেবস্য-সমগ্র ঐশ্বর্য দাতা, ধীমহি-ধারণ করি, ধিয়ঃ-প্রজ্ঞাসমূহকে, য়ঃ-যিনি, নঃ-আমাদের , প্রচোদয়াত্-সত্য জ্ঞান প্রদান করুক। অনুবাদ-পরমাত্মা প্রাণস্বরুপ, দুঃখনাশক ও সুখস্বরুপ। সেই জগতসৃষ্টিকারী ও ঐশ্বর্যপ্রদাতা পরমাত্মার বরণযোগ্য পাপ-বিনাশক তেজকে আমরা ধারণ করি। তিনি আমাদের বুদ্ধিকে শুভ গুণ, কর্ম ও স্বভাবের দিকে চালনা করুক। গায়ত্রী মন্ত্রের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণঃ (ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ )
ভূঃ-পৃথিবী, ভুবঃ-সূর্য, স্বঃ- ছায়াপথ বা আকাশগঙ্গা এই টার্মগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। যখন একটি ফ্যান ৯০০ আরপিএম গতিতে ঘুরে, এটি বাতাসের মধ্য দিয়ে একটি শব্দ উৎপন্ন করে। একইভাবে যখন অসীম গ্রহমণ্ডলী,সৌর সিস্টেম,ছায়াপথ প্রতি সেকেন্ডে ২০,০০০ বার গতিতে ঘুরে,তারা একটি শব্দ উৎপন্ন করে। ঋষি বিশ্বামিত্র ধ্যানের মাধ্যমে এই শব্দ শুনতে চেষ্টা করেন এবং ঘোষণা করেন যে,এই শব্দ ঐশ্বরিক ওম। ঐ প্রজন্মের ঋষিরা সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, এই ওম এই সৃষ্টিতে সবসময় উৎপাদিত হয় এবং বিদ্যমান থাকে এবং নাকি ঈশ্বরের একটি উপায় তার সৃষ্টির সাথে যোগাযোগ করার। এমনকি গীতায়,শ্রীকৃষ্ণ ঘোষণা করেন যে,ঈশ্বরকে ওম ইতি একক্ষরম ব্রহ্ম হিসেবে, এটি দ্বারা বুঝায় যে ওম ছাড়া ঈশ্বরকে পূজা করার মত আর কোন আকৃতি নেই। যোগী এই শব্দকে “উদগীত নাদ” হিসেবে বলেন যা ধ্যানের সময় সমাধিতে পৌঁছানোর জন্য জপ করা হয় । এটা অন্য সব বৈদিক মন্ত্রের শুরুতে সংযোজন করা হয়। (তৎ সবিতুর্বরেণ্যং) তৎ-স্রষ্টা, সবিতুর-সূর্য নামক একটি গ্রহ যা সংস্কৃত অর্থ মতে সূর্যের সমার্থক, বরেণ্যম-তার সামনে নত হওয়া। এর মানে হল যে,আমরা স্রষ্টার সামনে নত হচ্ছি যার শব্দ ওম এবং যাকে অসীম গ্রহমণ্ডলী থেকে আগত আলোর মত দেখায়। (ভর্গো দেবস্য ধীমহি) ভর্গো-আলো, দেবস্য-দেবতা, ধীমহি-তাকে উপাসনা করা । যা অর্থ আ্মাদের আলো রুপে ঈশ্বরের উপাসনা করার প্রয়োজন।(ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ) ধিয়ো-জ্ঞান, য়ো-কেবা, নঃ-আমাদেরকে,প্রচোদয়াৎ- যথাযথ মাধ্যম / পথে । যার মানে যিনি আমাদের জ্ঞান দান করে থাকেন বা আমাদের জ্ঞান লাভ করতে সঠিক দেখান,সেই ঈশ্বর। এভাবে ঘুরন্ত অসীম ছায়াপথ থেকে নির্গত শক্তি এই সৃষ্টির সবদিকে ছড়িয়ে আছে বলে তাঁকে প্রনব বলা হয়। এই অনুরূপ K.E. = 1/2 mv2 । বেদের অনেক মন্ত্রের আগে তাই এই শক্তিশালী ওম যুক্ত করা হয়েছে এবং বিশ্বের এমনকি অনেক রিলিজিওনেও এই শব্দ সামান্য পরিবর্তন করে যোগ করেছেন এবং তাদের প্রার্থনায়ও যুক্ত করেছেন।
প্রস্তুত করেছেন শ্রী প্রসেনজিত।

আজ বেদমাতা গায়ত্রীর আবির্ভাব তিথি। ২৮-০৫-২০১৫


আজ বেদমাতা গায়ত্রীর আবির্ভাব তিথি

RAM SHARMA : a great soul of Sanatan Hindu Dharma

অউম ভূর্ভুবঃ স্বঃ তৎসবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।।
ভাবার্থঃ সেই প্রাণাস্বরুপ,দুঃখনাশক, সুখস্বরুপ,শ্রেষ্ঠ, তেজস্বী পাপনাশক, দেবস্বরুপ পরমাত্মাকে আমাদের অন্তরাত্মায় ধারণ করি। পরমাত্মা আমাদের বুদ্ধিকে সৎপথে প্রেরিত করুন।

আজ বেদমাতা গায়ত্রীর আবির্ভাব তিথি। ২৪ অক্ষর বিশিষ্ট যে মন্ত্রের মধ্যে সমগ্র বেদের শক্তি নিহিত আছে, সেই গায়ত্রী মন্ত্র আজ-ই ঋষি দৃষ্টিতে উদ্ভাসিত হয়েছিল। এই পুণ্য তিথিতেই ১৯৯০ সালে প্রয়াত হয়েছিলেন গায়ত্রী মাতার পরম ভক্ত বেদ মূর্তি পণ্ডিত শ্রী রাম শর্মা। আজ এই দিব্য জীবনের কিছু প্রসঙ্গ পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করব ।

রাম শর্মা ১৯১১ সালে উত্তর ভারতের এক কট্টর ব্রাহ্মণ পরিবারে আবির্ভূত হন। শৈশব থেকেই তিনি দলিত ও কুষ্ঠ রোগীদের সেবায় ব্যাপৃত হন। এজন্য সমাজে তিনি বহু বাধার মুখোমুখি হন। বেনারস হিন্দু বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বাধীনতা সংগ্রামী মদন মোহন মালব্যের কাছে তার গায়ত্রী দীক্ষা হয়। ১৫ বছর বয়সে হিমালয়ের যোগী সর্বেশ্বরানন্দজী স্বপ্নে তাঁকে শাস্ত্রোক্ত গায়ত্রী সাধনার নির্দেশ দেন । তিনি সে আদেশ মেনে ২৪ বছর ধরে ২৪ বার গায়ত্রী মন্ত্রের মহাপুরশ্চরণ করেন এবং দেবী গায়ত্রীর দর্শন লাভ করেন। এই কঠোর সাধনার পাশাপাশি তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগদান করেন এবং বহুবার ব্রিটিশ দমন পীড়ন ভোগ করেন। গান্ধী , মালব্য ,রাধা কৃষ্ণন প্রমুখ ব্যক্তি তার জ্ঞান ,সাধনা , সমাজ ও দেশ সেবার কাজকে সম্মান করতেন।

তার অন্যতম প্রধান কীর্তি হল ৪ বেদ, ১০৮ উপনিষদ , ১৮ পুরান ,৬ দর্শন সহ বহু শাস্ত্রের ভাষ্য ও অনুবাদ প্রকাশ করা।গায়ত্রী পরিবার , শান্তি কুঞ্জ আশ্রম, যুগ নির্মাণ যোজনা , অখণ্ড জ্যোতি পত্রিকা , দেব সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি সংস্থার মাধ্যমে তিনি হিন্দু- অহিন্দু , ব্রাহ্মণ -চণ্ডাল, নারী -পুরুষ , দেশী -বিদেশী নির্বিশেষে সকলকে সনাতন হিন্দু ধর্মের মৌলিক বিষয়গুলি অর্থাৎ ওঁ উচ্চারণ করা, ,গায়ত্রী উপাসনা করা ,যজ্ঞ করা , বেদ চর্চা সহ যাবতীয় আধ্যাত্মিক অধিকার প্রদান করেছেন।

তিনি তুলে দিয়েছেন জন্মের ভিত্তিতে বর্ণ নির্ণয় প্রথা। অবান্তর জাত প্রথা ,দলিত ও নারীর মানবাধিকার হরনের কু চেষ্টা রদ করেছেন। নারী শিক্ষার বিষয়ে তিনি ছিলেন যথেষ্ট উৎসাহী । পুরীর শঙ্কর আচার্য বা বাংলার সীতারামদাস ওঙ্কারনাথ ঠাকুরের মত পণ্ডিত ও সাধক যখন নারী ও শূদ্রের বেদ পাঠ ইত্যাদির অধিকার হরণের ঘোষণা দিচ্ছেন, তখন তাঁর এই উদার আন্দোলন আমাদের অভিভূত করে।তিনি সাকার উপাসনা ও নিরাকার উপাসনা এবং বেদ ও তন্ত্রের বহু বছর ধরে চলা অপ্রয়োজনীয় ও অনৈক্য সৃষ্টিকারি বিবাদ বন্ধ করে দিয়েছেন । পরম বেদজ্ঞ এই সাধক গায়ত্রী দেবীর প্রতিমা পূজাও যেমন করতেন ,তেমনি গায়ত্রীর নির্গুণ -নিরাকার ভাবের ও উপাসনা করতেন।

গোঁড়া ব্রাহ্মণ্যবাদীদের ও হিন্দু বিরোধী সেকুলারদের দ্বিবিধ আক্রমন উপেক্ষা করে এই মহান তাপস আজীবন তাঁর বিপুল কর্ম যজ্ঞ চালিয়ে গেছেন। তাঁর স্থাপিত ‘গায়ত্রী পরিবারে’ ভারত ও পৃথিবীর নানা প্রান্তের লক্ষ লক্ষ মানুষ যুক্ত হয়ে আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উন্নতি করে চলেছেন।আজ-ও বিনামুল্যে তার সংস্থায় গিয়ে যে কোনও ব্যক্তি গায়ত্রী দীক্ষা ও উপবীত ধারন করতে পারেন ও হরিদ্বার সহ নানা তীর্থে সাত্বিক পরিবেশে থেকে কিছুদিন সাধন ভজন করতে পারেন। আমি যে কজন মহাত্মার দ্বারা বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছি ,তাঁর একজন হলেন শ্রী রাম শর্মা।

তাঁর চরণে কোটি কোটি প্রনাম।