গণেশ চতুর্থী


গণেশ চতুর্থীর প্রীতিময় শুভেচ্ছা।

গণেশ দেবকে নিয়ে নানা রকম কথা প্রচলিত। গণেশ মুর্তির রূপ কল্পনায় গণেশ দেব এর ধ্যান মন্ত্রে পাই-

ওঁ খর্বং স্থূলতনুং গজেন্দ্রবদনং লম্বোদরং সুন্দরং প্রস্যন্দম্মদগন্ধলুব্ধ মধুপব্যালোলগণ্ডস্থলম্। দন্তাঘাত বিদারিতারিরুধিরৈঃ সিন্দুরশোভাকরং , বন্দেশৈল সুতাসুতং গণপতিং সিদ্ধিপ্রদং কামদম্।।

অর্থাৎ, যিনি খর্বাকৃতি অর্থাৎ খাটো শরীর, স্থূল শরীর, লম্বোদর, গজেন্দ্রবদন অথচ সুন্দর; বদন হইতে নিঃসৃত মদগন্ধে প্রলুব্ধ ভ্রমর সমূহের দ্বারা যাঁর গণ্ডস্থল ব্যাকুলিত; যিনি দন্তাঘাতে শত্রুর দেহ বিদারিত করিয়া তাঁর দন্ত দ্বারা নিজ দেহে সিন্দূরের শোভা ধারণ করিয়াছেন; সেই পার্বতীপুত্র সিদ্ধিদাতা গণপতিকে বন্দনা করি।

আধ্যাত্মিক ভাব, যথা- অজ্ঞানই স্থুল ও সূক্ষ্ম জগতের উৎপত্তির হেতু, এবং তত্ত্বজ্ঞান প্রভাবেই জগতের বিস্তার ক্রমশঃ খর্ব হয়ে এক অদ্বিতীয় ব্রহ্মে লীন হয়, আবার স্কুল ও সুক্ষ্ম জগতই সেই সর্বব্যাপী আত্মার শরীর, এইজন্য গণেশের খর্ব এবং স্থুল দেহ দ্বারা এটাই প্রকাশিত হচ্ছে যে তত্ত্বজ্ঞানের প্রভাবে মায়া রচিত বিশাল বিশ্বের বিস্তার খৰ্ব্বীভূত হয়; এ জগৎ তাঁরই মধ্যে অবস্থান করছে, তারই সত্তা অবলম্বন করে এর সত্তা প্রকাশ পাচ্ছে, একারণে তিনি লম্বোদর; যে সাধক অন্তর্মুখীন হয়ে তাঁর প্রতি লক্ষ্য করে তার চিত্ত মুগ্ধ হয়ে যায়, তাই তিনি সুন্দর; তিনি অতি বৃহৎ, এ বিশ্ব তাঁর একাংশে অবস্থিত, পশুদের মধ্যে হস্তী অতি বৃহৎ, তাই তাঁর বৃহত্ত্ব বুঝানোর জন্য হস্তীর মস্তক তাঁর মস্তকরূপে কল্পনা করা হয়েছে; অথবা তিনি গণপতি অর্থাৎ দেব, দানব, যক্ষ, রক্ষ, গন্ধর্ব, কিন্নর, মনুষ্য প্রভৃতি সমস্ত গণের অধীশ্বর, সুতরাং সমস্ত গণের সমষ্টি-বাণীই তাঁর বাণী, আবার বাণী মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয়, সেই সমষ্টিগত বাণীর বিপুলত্ব প্রকাশ করার জন্য তিনি গজেন্দ্রবদন রূপে কল্পিত হয়েছেন, অর্থাৎ তাঁর মুখ হাতির মুখ রূপে কল্পনা করা হয়েছে; তত্ত্বজ্ঞানরূপ সুধার গন্ধে মত্ত হয়ে মুক্তিকামীরূপ মধুকর গণ সর্বদা তাঁর কাছ থেকে তাঁর আরাধনা করছেন। তিনি বিচার রূপ দন্ত দিয়ে সাধকের কাম-ক্রোধাদি শত্ৰুসকল নাশ করেন এবং ঐ সকল শত্রু নষ্ট হলে তিনি সাধকের হৃদয়ে শোভমান হয়ে প্রকাশ পান; তাঁর ইচ্ছা-শক্তিতেই জগতের সকল কার্য সিদ্ধ হচ্ছে, জীব উপলক্ষ মাত্র। অজ্ঞানবশতঃ ‘আমি করি’ বলে মনে করি, তাই তিনি সর্বকর্মের সিদ্ধিদাতা; অথবা সমবেত চেষ্টাই দুরুহ কর্মসিদ্ধির জননী, তিনি গণ-সমূহের অধিপতি, অতএব তিনি সমুদয় সমবেত চেষ্টার পরিচালক, এইজন্যই তাঁকে সিদ্ধিদাতা বলে।

প্রণাম মন্ত্র:

একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদর গজাননম।

বিঘ্নবিনাশকং দেবং হেরম্বং পনমাম্যহম।।

অর্থাৎ,যিনি একদন্ত, মহাকায়, লম্বোদর, গজানন এবং বিঘ্ননাশকারী সেই হেরম্বদেবকে আমি প্রণাম করি।

ব্রত


ব্রত (4)
পুণ্য জনক উপবাস, পুণ্য সাধনে উপবাস নিয়ম এর নাম ব্রত। যে সকল উপবাস কর্মানুষ্ঠান দ্বারা পুণ্য সঞ্চয় হয়, তাকে ব্রত বলে। সম্যক সঙ্কল্প জনিত অনুষ্ঠেয় ক্রিয়া বিশেষের নাম ব্রত। ব্রত প্রথমে দুই প্রকার, প্রবৃত্তিরূপ ও নিবৃত্তিরূপ, দ্রব্য বিশেষ ভোজন ও পূজাদি সাধ্য ব্রত কে প্রবৃত্তিরূপ এবং কেবল উপবাসাদি সাধ্য ব্রত কে নিবৃত্তি রূপ বলে। ব্রত আবার তিন প্রকার, নিত্য, নৈমিত্তিক ও কাম্য। না করলে প্রত্যব্যয়(অপরাধ বা পাপ)- সাধনের নাম নিত্য, যা না করলে প্রত্যব্যয় হয়, তাকে নিত্য বলে। একাদশী প্রভৃতি ব্রত নিত্য। কোন নিমিত্ত বশতঃ যে ব্রতের অনুষ্ঠান করা হয় তাকে নৈমিত্তিক বলে। পাপক্ষয় এর জন্য চান্দ্রায়ণাদি ব্রত নৈমিত্তিক। তিথি বিশেষে কামনা করে যে সকল ব্রত অনুষ্ঠান করা হয়, তাকে কাম্য বলে। যথা সাবিত্রী প্রভৃতি ব্রত। জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণ চতুর্দশী তিথিতে অবৈধব্য কামনায় সাবিত্রী ব্রত করতে হয়, সুতরাং এটা কাম্য। এভাবে কামনা করে যে ব্রত করা হয়, তাই কাম্য।
ব্রত আরম্ভ বিধি-
হেমাদ্রির ব্রত খণ্ডে লেখা আছে যে, অখণ্ডা তিথিতে ব্রত আরম্ভ করতে হয়, উদয় গামিনী তিথি যদি দিন মধ্য ভজনা না করে, অর্থাৎ যে তিথিতে সূর্য উদিত হন, সেই তিথি যদি দিনের মধ্য ভাগ পর্যন্ত প্রাপ্ত না হয়, তাহলে তাকে খণ্ড তিথি বলে, এই খণ্ড তিথি ব্রত আরম্ভে নিষিদ্ধ; অর্থাৎ এই তিথিতে ব্রত করতে নেই। এর বিপরীত অখণ্ড যে তিথি তাতেই ব্রত আরম্ভ প্রশস্ত। গুরু শুক্রের বাল্য বৃদ্ধান্ত জনিত অকাল এবং মলমাসে ও ব্রতারম্ভ করতে নেই।
যে তিথি ব্যাপী সূর্য দেব অবস্থান করেন, তাই অখণ্ডা তিথি, এই অখণ্ডা তিথিই ব্রত আরম্ভে প্রশস্ত। অস্ত গামিনী তিথি অপেক্ষা উদয় গামিনী তিথিই শ্রেষ্ঠ। অতএব উদয় গামিনী তিথিতেই ব্রতাদি কাজ করা বিধেয়।
ব্রতের কায়িক ও মানসিক দুই প্রকার ভেদ অবহিত হয়েছে, যথা- অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচৰ্য্য, অকল্মষ, এই গুলি মানস ব্রত এই সকলের অনুষ্ঠানে মানস ব্রতের ফল হয়। কায়িক ব্রত- উপবাস ও অযাচিত ভাবে অবস্থান প্রভৃতি অর্থাৎ সমস্ত দিন রাত উপবাস বা অশক্ত ব্যক্তির পক্ষে রাতে ভোজন এবং কারও নিকট কোন রকম যাচ্‌ঞা না করা, এটাই কায়িক ব্রত।
ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চার বর্ণের মধ্যে স্ত্রী, পুরুষ সকলেরই ব্রতে অধিকার আছে, এরা সকলেই ব্রত অনুষ্ঠান দ্বারা পাপ মুক্ত হয়ে শ্রেষ্ঠ গতি লাভ করে থাকেন। যারা ব্রত অনুষ্ঠান করবেন, তাদের কর্মে অধিকার থাকা আবশ্যক, এই অধিকারের বিষয় এরকম লেখা আছে যে, যারা বর্ণ অনুসারে নিজ নিজ আশ্রম ধর্ম প্রতিপালন করেন, এবং বিশুদ্ধ চিত্ত, অলুব্ধ, সিত্যবাদী, সর্বভূতের হিতকারী, শ্রদ্ধা যুক্ত, মদ ও দম্ভ রহিত এবং পূর্বে শাস্ত্রার্থ নির্ণয় করে সে অনুসারে কার্যকারী এই সকল সদ্‌ গুণ বিশিষ্ট ব্যক্তিই ব্রতে অধিকারী; অর্থাৎ যিনি ধার্মিক তিনিই ব্রত অনুষ্ঠান করবেন, এমন ব্যক্তিই ব্রত করলে তার ফল পেয়ে থাকেন, অন্যথা নিষ্ফল হয়। অর্থাৎ তাদের ব্রতের ফল হয় না। ধার্মিক শব্দের অর্থ এইরকম লেখা আছে যে, পিতৃ গণের উদ্দেশে শ্রাদ্ধ, তপস্যা, সত্য, অক্রোধ, স্বদারে সন্তোষ, শৌচ, অনসূয়া, আত্মজ্ঞান, তিতিক্ষা, এই গুলি সাধারণ ধর্ম নামে অভিহিত, এই সকল সাধারণ ধর্ম অনুসারে যারা বিচরণ করেন, তারাই ধার্মিক। এইরকম ধার্মিক ব্যক্তিই ব্রতে অধিকারী।
চার বর্ণের স্ত্রী মাত্রেরই ব্রত অনুষ্ঠানে অধিকার আছে। কিন্তু তাদের সম্বন্ধে একটু বিশেষ বিধি এই যে, সধবা স্ত্রী স্বামীর অনুজ্ঞা নিয়ে ব্রত করবেন, অনুজ্ঞা ব্যতীত ব্রত করতে পারবেন না, কারণ শাস্ত্রে লেখা আছে যে তাঁদের পক্ষে পৃথক যজ্ঞ, ব্রত, উপবাস প্রভৃতি কিছুই নেই, একমাত্র পণ্ডিত শুশ্রুষাই তাদের ধর্ম, এর দ্বারাই তারা উৎকৃষ্ট লোক লাভ করে থাকে।
অবিবাহিত কন্যা পিতার আদেশে এবং সধবা পতির আজ্ঞায় ও বিধবা পুত্রের অনুজ্ঞা নিয়ে ব্রত আচরণ করবে।
কুমারী, সধবা ও বিধবা স্ত্রী মাত্রেরই পিতা, পতি ও পুত্রের আদেশে ব্রত ধারণ বিধেয়। অন্যথা তারা ব্রতের ফলভাগিনী হবে না।
ব্রত আচরণ করতে হলে তার পূর্ব দিন সংযত হয়ে থাকতে হয়। পরে ব্রত আরম্ভ দিনে সঙ্কল্প করে করতে হয়। ব্রতের পূর্ব দিন ব্রীহি(আউশধান), ষষ্টিক(ষেটে ধান), মুদ্গ(মুগডাল), কলায়, জল, দুগ্ধ, শ্যামাক(ধান বিশেষ), নীবার(উড়িধান, তৃণধান) ও গোধূম(আটা, ময়দা) এই সকল দ্রব্য ভোজন করতে পারে, কিন্তু কুষ্মাণ্ড(কুমড়া), অলাবু(লাউ), বার্ত্তাকু(বেগুণ), পালঙ্কী, জ্যোৎস্নিকা(ঝিঙে) এই সকল দ্রব্য ভোজন নিষিদ্ধ।
চরু(পায়েস), শক্তু(যব বা ছোলা পিষে তৈরী ছাতু), শাক, দধি, ঘৃত, মধু, তামাক, শালি(সুগন্ধি হৈমন্তিক ধান্য), নীবার(উড়িধান, তৃণধান্য), মূল এবং পত্রাদিও ভোজন করা যেতে পারে। মধু ও মাংস নিষিদ্ধ।
এই দিন ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করে থাকতে হয়। ব্রহ্মচর্য শব্দে অষ্টাঙ্গ মৈথুন নিবৃত্তি বুঝতে হবে। ব্রতকারী, এই দিনে সকল ভূতের প্রতি দয়া, ক্ষান্তি, অনসূয়া, শৌচ প্রভৃতি পালন করে চলবেন।
ব্রত আরম্ভ কালে অশৌচাদি হলে ব্রত করতে নেই। কিন্তু ব্রত আরম্ভের পর যদি ব্রত দিনে অশৌচ হয়, তাহলে ব্রত করতে পারবে তাতে দোষ নেই। অর্থাৎ একটা ব্রত ৭ বৎসর ধরে করতে হয়, তার মধ্যে যে বারে প্রথম ব্রত আরম্ভ হবে, সেই বারে অশৌচাদি ঘটলে করতে পারবে না। কিন্তু পরের বৎসর যদি ব্রতের সম সময়ে অশৌচ বা স্ত্রী রজস্বলা হয়, তাহলে ব্রত বাঁধ হবে না, অন্যকে দিয়ে করানো যাবে, অর্থাৎ ব্রাহ্মণ ব্রত করবেন, উপবাসাদি নিজেই করবে, উপবাসে অসমর্থ হলে রাত্রে ভোজন করবে, অত্যন্ত অসমর্থ হলে পুত্রাদি প্রতিনিধি দ্বারা উপবাস করাবে। স্বামীর ব্রতে স্ত্রী এবং স্ত্রীর ব্রতে স্বামী প্রতিনিধি হতে পারে। তা না হলে পুত্র, ভ্রাতা বা বোন প্রতিনিধি হবে। এরা না হলে ব্ৰাহ্মণকে ও প্রতিনিধি করা যেতে পারে।
যথা বিধানে ব্রত গ্রহণ করলে সমাপন শেষে সেই ব্রতের প্রতিষ্ঠা করতে হয়। ব্রত বিশেষে ৫, ৭, ১৪ প্রভৃতি বৎসরে তার প্রতিষ্ঠা বিহিত হয়েছে। যদি কেউ ব্রত আরম্ভ করে ব্রতের সমাপ্তি কাল পর্যন্ত না বেঁচে থাকে, তাহলে ব্রতের অসমাপ্তি জন্য দোষ হবে না। ব্রতের ফলভাগী হবে। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি লোভ, মোহ, প্রমাদ বশতঃ ব্রত ভঙ্গ করে, তাহলে তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়। প্রায়শ্চিত্ত অনুষ্ঠানের পর পুনর্বার ঐ ব্রত করতে হয়। প্রায়শ্চিত্ত বিষয়ে লেখা আছে যে, তিন দিন উপবাস এবং কেশ মুণ্ডন করবে। কেশ মুগুন যদি না করে, তার মূল প্রায়শ্চিত্তের দ্বিগুণ প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়। উপবাস করতে না পারলে ২৪ পণ বরাটক দানরূপ প্রায়শ্চিত্ত করবে। কিন্তু সধবা স্ত্রীদের সম্বন্ধে বিশেষ এই যে, তাদের কেশমুণ্ডন করতে নেই। তাদের কেশের অগ্রভাগ হতে দুই অঙ্গুল পরিমাণ কেশ ছেদন করলেই হবে। এইভাবে প্রায়শ্চিত্ত কুরে পরে আবার ব্রত করবে। যদি কেউ সঙ্কল্প করে ব্রত গ্রহণপুর্বক সেই ব্রত না করে, তাহলে জীবিত অবস্থায় চণ্ডালত্ব এবং মরণের পর কুকুর যোনী প্রাপ্ত হয়।
ব্রত গ্রহণ বিষয়ে পূর্ব্বাহ্ণ কালে সঙ্কল্প করতে হয়। পুর্ব দিনে সংযত চিত্ত হয়ে ব্রত দিন প্রাতঃকালে দান সন্ধ্যাদি করে আচমন, সুর্য অর্ঘ্য, গণেশ, শিবাদি পঞ্চ দেবতা, আদিত্যাদি নবগ্রহ ও ইন্দ্রাদি দশদিকপাল প্রভৃতির পূজা, সূর্য, সোম ইত্যাদি স্বস্তিবাচন করে পরে সঙ্কল্প করবে। ইত্যাদি রূপে পূজাদি করে ব্রতাচরণ করবে।
ব্রত যে কয় বৎসর সাধ্য হবে, সেই কয় বৎসর একই নিয়মে ব্রতানুষ্ঠান করে নিয়মিত বৎসর পূর্ণ হলে বিধি অনুসারে সেই ব্রত প্রতিষ্ঠা করবে। প্রতিষ্ঠা কালে যদি জন্ম বা মরণাশৌচ হয়, তাহলেও পুর্ব সঙ্কল্প অনুসারে প্রতিষ্ঠা কাজ সিদ্ধ হবে, তাতে কোনরকম দোষ হবে না। কিন্তু যার ব্রত, তিনি উপবাসাদি ভিন্ন আর কিছুই করতে পারবেন না।
যদি কোন দৈবগতিকে প্রতিষ্ঠা বৎসরে প্রতিষ্ঠা না হয়, তাহলে অশৌচে হবে না। যদি ঐ বৎসর গুরু শুক্রের বাল্য, অস্ত ও বৃদ্ধ জনিত অকাল ও মলমাসাদি হয়, তাহলেও প্রতিষ্ঠা হবে না। যে বৎসর অকাল, মলমাস প্রভৃতি না হয়, এবং অশৌচাদি না থাকে, সেই বৎসরেই প্রতিষ্ঠা হবে, কিন্তু প্রতিষ্ঠা-বৎসরে প্রতিষ্ঠা না করায় অবশ্য পাপভোগী হতে হবে।
ব্রতকারী ব্রতানুষ্ঠানের পর ব্রতকথা শ্রবণ করবেন। ব্রত প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলে আর কথা শুনতে হয় না। কিন্তু কোন কোন ব্রতে বিশেষ আছে যে, প্রতিষ্ঠার পরও কথা শ্রবণ ও ভোজ্য উৎসর্গ করতে হয়, যেমন কুক্কুটি সপ্তমী ব্রতে প্রতিষ্ঠার পরও যাবজ্জীবন ব্রত কথা শ্রবণ ও ডোর ধারণ করতে হয়।
প্রত্যেক ব্রতের বিশেষ বিবরণ সেই সেই শব্দে লেখা হয়েছে, এই জন্য এখানে আর লেখা হল না। অকারাদি ক্রমে কতকগুলি ব্রতের নাম নির্দিষ্ট হল। ভবিষ্য পুরাণ, মৎস্য পুরাণ, পদ্ম পুরাণ প্রভৃতি পুরাণ সমূহে এই সকল ব্রতের বিধান নির্দিষ্ট হয়েছে।

যে ভাবে কৃষ্ণ নাম (মালা) জপ করবেন?


হাতের তালুতে দু-এক ফোঁটা জল নিয়ে ‘ওঁ বিষ্ণু’ মন্ত্রে পান করবেন। মোট তিন বার এইভাবে জল পান করতে হবে। তারপর করজোড়ে বলবেন—
ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্।
ওঁ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোঽপি বা।
যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ।।
‘ওঁ বিষ্ণু’‘ওঁ বিষ্ণু’‘ওঁ বিষ্ণু’

মস্তকে তুলসী রেখে বলবেন :

নমঃ তুলসী দর্শনে পুণ্য
স্পর্শনে পাপ নাশন
স্মরণে তির্থানি
ভক্তিমে মুক্তি লক্ষণ নমঃ

গুরু প্রনামঃ

ঔঁ অখণ্ডমণ্ডালাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্।
তৎপদং দশি‘তং যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।।১
অঞ্জানতিমিরান্ধস্য ঞ্জানাঞ্জন শলাকায়া।
চক্ষু রুল্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।।২. গুরু ব্রক্ষা
গুরু বিষ্ণু গুরুদেবো মহেশ্বরঃ। গুরুঃ সাক্ষাৎ পরং ব্রক্ষ
তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।

শ্রী কৃষ্ণ প্রনামঃ

হে কৃষ্ণ করুণা সিন্ধু দীনবন্ধু জগৎপতে।
গোপেশ গোপীকা কান্ত রাধা কান্ত নমহঃস্তুতে ।।

শ্রী রাধারানী প্রণামঃ

তপ্ত কাঞ্চন গৌরাঙ্গীং রাধে বৃন্দাবনেশ্বরী।
বৃষভানু সূতে দেবী প্রণমামি হরি-প্রিয়ে।।
মালা জপ আরম্ভের মন্ত্রঃ-
অবিঘ্ন করু মালে, ত্বং হরি নাম-জপেষু চ।
শ্রীরাধা কৃষ্ণয়োর্দাস্যং দেহি মালে, তু প্রার্থয়ে।।
অর্থঃ- হে মালে তোমাতে হরি নাম জপ করিতেছি আমার সর্ব্ব বিঘ্ন দূরকর এবং শ্রীরাধা কৃষ্ণের দাস্য দান কর, এই প্রার্থনা করিতেছি।
….
মন্ত্র জপ ১০৮ বার
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ।।
…..
মালা জপান্তে নিন্মরুপ জপ সমর্পণ করিতে হয়ঃ-
গুহাতিগুহ গোপ্তা ত্বং গৃহাণাস্মং কৃতং জপং ।
সিদ্বি ভবতু-মে দেব ত্বৎ প্রসাদাৎ জনার্দ্দন।।
অর্থঃ হে পরম দেব, পরম অভিষ পরমপ্রিয় শ্রীকৃষ্ণ তুমি গুহ্য ও অতি গুহ্য বস্তুকে রক্ষা কর। অতএব আমার এই নাম জপ তুমি গ্রহন কর। হে দেব তোমার প্রসাদে আমার সর্বসিন্ধ লাভ।
….
গীতায় স্মরণীয় নামগুলি জপ করিবেনঃ
ঔঁ গঙ্গা, গীতা, সাবিত্রী,সীতা, সত্ত্বা, পতিব্রতা,
ব্রহ্মবলি, ব্রহ্মবিদ্যা,ত্রিসন্ধ্যা, মুক্তি-গেহেনী,
অর্ধমাত্রা, চিদানন্দা,ভবঘ্নী, ভ্রান্তী নাশিনী,
বেদত্রয়ী, পরানন্দা,তত্ত্বার্থ, জ্ঞানমঞ্জরী।।
….
সব শেষে ভুল ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রাথনা :
পাপহং পাপকর্মাহং পাপাত্মাহ পাপসম্ভবো
ত্রাহিমাং পুন্ডরিকাক্ষং সর্ব পাপ হর হরি।।
ভালো লাগলে শেয়ার করবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন , নিতাই গৌর হরিবল

নারায়ণ পূজোর নিয়ম



সুস্মিতা দাস ঘোষ নভেম্বর

সত্যনারায়ণ পূজার সঙ্গে বাঙালী অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। একবারও সত্যনারায়ণ হয়নি এরকম বাঙালী বাড়ি খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। বাড়িতে কোন শুভকাজের আগে বা পরে সত্যনারায়ণ পূজা বা নতুন বাড়িতে প্রবেশের আগে সত্যনারায়ণ পূজা, যেকোনো শুভ কাজেই নারায়ণ দেবতার আশীর্বাদ আমাদের চাইই চাই। কিন্তু যারা সত্যনারায়ণ পূজার নিয়মবিধি সেভাবে জানেন না, তাঁদের জন্যই থাকল সত্যনারায়ণ পূজার কিছু নিয়মবিধি।

নারায়ণ পুজো
পূজা শুরুর আগের কিছু নিয়ম
নারায়ণ পূজায় তেমন বাহুল্য নেই বললেই চলে।তাই এই পূজার আয়োজন খুব সহজ। যে যার সাধ্য মত আয়োজন করে। যেকোনো পূর্ণিমার তিথিতেই এই পূজা করা যায়। অনেকে বাড়ির পরিবেশ শুদ্ধ রাখতে, প্রতিটা বড় পূর্ণিমাতেই পূজা করে থাকেন।

পূজার আগের নিয়ম বলতে, সবচেয়ে আগে পূজার স্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করে রাখুন। পরিষ্কার করে যেখানে ঘট পাতবেন, সেখানে আলপনা দিয়ে দিন। সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিন। ঘটে আমপাতা, শিষ ডাব দিন। অবশ্যই ঘটে ও ডাবে স্বস্তিক চিহ্ন এঁকে দেবেন। বিজোড় সংখ্যক আমপাতা রাখবেন। এতে সিঁদুরের ফোঁটা দেবেন।

এরপর নৈবেদ্য সাজিয়ে দেবেন। একটি থালায় তিনটি জায়গায় একটু করে চাল, ও তার সঙ্গে কলা, বাতাসা, অন্যান্য ফল, তার ওপর সিকি মানে কয়েন, পঞ্চ শস্য এসব দিয়ে সাজান। পঞ্চ শস্য মানে পাঁচ রকম শস্য। এই ভাবেএকটি থালায় তিনটি ও আরেকটি থালায় পাঁচটি নৈবিদ্য সাজিয়ে রাখুন।

সিন্নির জন্য একটি গামলায় ময়দা, গুড়, দুধ, খোয়া ক্ষীর, একটু নারকেল কোরা, কাজু, কিশমিশ ঠাকুরের সামনে রাখবেন। পূজার পর ঠাকুরমশাই সিন্নি তৈরি করবেন। এছাড়াও নারায়ণের ছবির দু’পাশে দুটো পান পাতা রাখুন। এর ওপর একটা সুপারি, একটা কয়েন, একটা কলা রাখুন।

পূজা শুরু
নারায়ণ পূজার জন্য প্রথমে নারায়ণ শিলা স্থাপন করতে হয়। চিন্তা নেই, সেটি আপনার ঠাকুরমশাই সঙ্গে করে আনবেন। এবং ইনিই প্রতিস্থাপন করবেন। সেদিন সারাদিন ওই নারায়ণ শিলা থাকবে। পরদিন ঠাকুর মশাই সুতো কেটে সেটি নিয়ে চলে যাবেন। নারায়ণ শিলা স্থাপন করে ও নারায়ণ দেবতাকে প্রণাম জানিয়ে পূজা শুরু করা হয়। সঙ্গে মা লক্ষ্মীকেও ফুল দেবেন, প্রণাম জানাবেন।

এরপর আপনার সমস্ত আয়োজন তাঁকে নিবেদন করার পালা। এই সাধারণ পূজার পর অঞ্জলি। অঞ্জলি শেষ হয়ে গেলে হোম। হোম-যজ্ঞের জন্য ছোট ছোট করে বেশ কয়েকটি হোমের কাঠ,একটি পাত্রে ঘি, ৫১টি বেলপাতা, একটি লাল চেলি কাপড়, একটু দুধ একটি কলা ও একটি সন্দেশ এবং হোমকুণ্ড রেডি রাখবেন। যজ্ঞ শেষে দুধ ঢেলে যজ্ঞ শেষ হবে। এবং সবাই যজ্ঞের টিপ পড়বেন। এইসব কিছু দশকর্মার দোকানে পেয়ে যাবেন। এটিই হল নারায়ণ পূজার নিয়ম।

তাহলে দেখলেন নারায়ণ পূজার আয়োজন করা কত সহজ। শুধু শুদ্ধ, শান্ত মনে পূজার আয়োজন করুন। আয়োজন সামান্য হলেও দেবতা নারায়ণের আশীর্বাদ প্রবেশ করবে আপনার ঘরে।